শেখ হাসিনার ব্যাংক ডাকাত সরকারের আমলে নিরাপদ অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে এবার ভয়াবহ এক ফর্মুলার খবর জানা গেছে। এতদিন টাকা পাচার করার অন্যতম নিরাপদ পন্থা হিসেবে করা হতো ‘ওভার ইনভয়েসিং’ কিংবা ‘আন্ডার ইনভয়েসিংয়’ । শেখ হাসিনা আর ব্যাংক ডাকাত জয়ের আমলে এখন টাকা পাচারের পদ্ধতির আরো উন্নতি হয়েছে। এখন আর এতো জটিলতার দরকার নেই। শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্য কিংবা আওয়ামী লুটেরাদের ম্যানেজ করা গেলেই অর্থ পাচারের নয়া ফর্মুলা সহজেই কার্যকর করা যায়। বর্তমানে কোন ফর্মুলায় বিদেশে শত শত কোটি টাকা পাচার করা হয় এ নিয়ে ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারী একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে দৈনিক যুগান্তর। রিপোর্টের শিরোনাম ‘অর্থ পাচারের ভয়াবহ তথ্য় ‘.
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, অভিযোগের তদন্ত হওয়া উচিত। এটা সরাসরি জালিয়াতি। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মিলে এ বিষয়ে তদন্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে আইনি সহায়তা দিতে পারে আইন মন্ত্রণালয়। তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারে দুদকে। সব মিলিয়ে আইনানুগ তদন্ত এবং শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে অর্থপাচার বন্ধ করা যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে ভালোভাবে তদন্ত করা দরকার। দেখা যাবে তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে সাপও বেরিয়ে আসতে পারে। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সহায়তা নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে পারে। তার মতে, যেহেতু অভিযোগ উঠেছে সেহেতু সরকারকে এটি তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে জনমনে সন্দেহ আরও বাড়বে।
বিশিষ্ট ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছিল। এটা সরসরি জালিয়াতি। বিভিন্ন পক্ষের যোগসাজশে এমনটি করা হয়। তিনি কিছুটা স্মৃতিচারণ করে বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে নারায়ণগঞ্জে এ ধরনের একটি ঘটনা ধরা পড়ে। আসার কথা ছিল তেলভর্তি জাহাজ, এসেছে পানিভর্তি জাহাজ। আর নতুন এ ফর্মুলায় তো কিছুই আনা হচ্ছে না (!) মূলত সুশাসনের ঘাটতির কারণে এসব জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তদন্ত করতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঋণপত্র বা এলসি খোলার সময় ওভার ইনভয়েসিং কিংবা আন্ডার ইনভয়েসিং করে বিদেশে অর্থ পাচার করার অভিযোগ বা ফর্মুলা সেকেলে এবং আংশিক সত্য। তাছাড়া টাকা পাচার ছাড়াও আমদানি শুল্কের বোঝা কিছুটা কমাতে অনেকে আন্ডার ইনভয়েসিং করে থাকেন।
এছাড়া হুন্ডি করে টাকা পাচার আগেও ছিল, এখনও আছে। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় পরিমাণে খুব বেশি অর্থ পাঠানো যায় না। আর আন্ডার ইনভয়েসিং করলে টাকা বিদেশে পাচার করা হয় না। হুন্ডিতে যে টাকা পাঠানো হয় সে টাকার পণ্যও দেশে আনা হয়। এছাড়া ক্ষমতা কিংবা সুযোগ থাকলে কেউ কেউ বিমানে যাওয়ার সময় সরাসরি লাগেজভর্তি করে ডলার বিদেশে নিয়ে যান। তবে এ সুযোগও খুব কম। গার্মেন্ট বা অন্য কোনো পণ্য রফতানি করে কারসাজির মাধ্যমে তার একটি অংশ বিদেশে রেখে আসেন। তবে এভাবেও বেশি টাকা রেখে আসা সম্ভব নয়। কিন্তু টাকা পাচারের উদ্বেগজনক নতুন যে ফর্মুলার বলা হচ্ছে, সেটি সম্ভব হলে বড় অংকের পাচার অনায়াসে করা সম্ভব।