আওয়ামীলীগ এবং রামপাল

‘স্মার্ট’ আমি তাদেরকেই বলি যাদের প্রকাশ্যে সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলার মত সৎ সাহস আছে এবং যারা নিজের স্বার্থ আদায়ের জন্য কারও চাটুকারিতা না করে নিজের আত্মসম্মান বজায় রেখে চলতে জানে। আমি এতদিন আওয়ামীলীগ নামক রাজনৈতিক দলটিকে এবং তাদের নেতৃত্বাধীন সরকারকে অনেক স্মার্ট ভাবতাম।
তারা ভালো নাকি মন্দ সে বিতর্কে না যাই, কিন্তু তারা যথেষ্ট ‘স্মার্ট’ বলেই আমি জানতাম। কারণ হচ্ছে, গত সাড়ে ৭ বছরে দেখেছি যে আওয়ামীলীগ কোন ভালো কাজ শুরু করলেও সেটা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারে সব বাধা উপেক্ষা করে, আবার কোন খারাপ কাজ করতে চাইলে সেটাও সফলভাবে চালিয়ে দিতে পারে। যদিও খারাপ কাজগুলো করাটা অবশ্যই দেশ এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকারক বলাই বাহুল্য, কিন্তু একই ধরনের খারাপ কাজ বিএনপি করার চেষ্টা করলে সহজেই ধরা পড়ে যেত, চালিয়ে নিতে পারতো না, কিন্তু আওয়ামীলীগ সেটা ‘স্মার্টলি’ চালিয়ে নিতে পারে এটাই পার্থক্য।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর দেশের অনেক মানুষের অনেক বড় আস্থা আছে যদিও তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের উপর ততটা নেই একেবারেই। আমি নিজেও ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে অনেক শ্রদ্ধা করতাম। আমাদের অনেকেরই একটা বিশ্বাস ছিল, প্রধানমন্ত্রী কখনোই এমন কোন কাজ করবেন না যাতে দেশের বড় ধরনের কোন ক্ষতি হয়, কিন্তু সাম্প্রতিক রামপাল ইস্যুতে সে বিশ্বাসে বড় ধরনের চিড় ধরেছে। আওয়ামীলীগকেও এখন আর যথেষ্ট ‘স্মার্ট’ বলে মনে হচ্ছে না।
রামপাল ইস্যুতে অন্ধ সমর্থক, পাতি নেতা থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী আর রাঘব বোয়াল পর্যন্ত আওয়ামীলীগপন্থী সবার ল্যাঞ্জা বের হয়ে পড়েছে। একবার রামপাল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে বলে নিজ দেশসহ সারা বিশ্বের কল্যাণকামী মানুষের আপত্তি সত্ত্বেও রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বানাতেই হবে? আর সেই কাজে চোখ বন্ধ করে আওয়ামীলীগপন্থী সবার সমর্থন জানাতেই হবে? ল্যাঞ্জাটা শেষ পর্যন্ত আর লুকিয়ে রাখতে পারলেন না তাহলে?
এই কথাগুলো লিখছিও মনে অনেক ভয় নিয়ে। ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার কণ্ঠরোধ তো অনেক আগেই হয়েছে, এখন সোশ্যাল মিডিয়ারও কণ্ঠরোধ করার জন্য রীতিমত কঠোর আইন করার প্রস্তুতি চলছে। এই অবস্থায় বারবার কেবল একটা ছড়ার কথাই মনে পড়ছে। এটা লিখেছিলেন ছড়াকার আবু সালেহ ১৯৭৪ সালের দিকে (তখন কার শাসনামল ছিল, সেটা বললে তো আবার ‘পাপ’ হবে; থাক, আর না বলি)। এটা দিয়েই শেষ করছি –
“ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার এমন স্বাধীনতা!
যার পিছনে জানটা দিলাম যার পিছনে রক্ত
সেই রক্তের বদল দেখো বাঁচাই কেমন শক্ত,
ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার মরার স্বাধীনতা!
বাঁচতে চেয়ে খুন হয়েছি বুলেট শুধু খেলাম
উঠতে এবং বসতে ঠুঁকি দাদার পায়ে সেলাম,
ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার আজব স্বাধীনতা!”

You may also like...

Read previous post:
জঙ্গি তাওসিফ , ফজলে রাব্বি, ও তামিম চৌধুরী নিহত!

নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায়  পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম সহ নিহত হয় তিন জঙ্গি। ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটি)...

Close