১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাক হানাদার বাহিনীর নৃশংস হামলার মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতা অনিবর্তনীয় হয়ে ওঠে। রাত বারোটার পরে ঢাকায় যখন চলছিল স্বেচ্ছা-আত্মসমর্পন পর্ব, ঠিক প্রায় একই সময়ে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে গর্জে ওঠে- “উই রিভোল্ট!” স্বাধীন বাংলাদেশ জড়িয়ে পড়ে জন্মযুদ্ধে, যার ডাক আসে কালুরঘাট বেতার থেকে। মেজর জিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে মরনপণ লড়াইয়ে সামিল হয় বাঙ্গালি সেনা, পুলিশ, রাইফেলসের ১১ হাজার যোদ্ধা।
২৫ মার্চ সন্ধার পর থেকে আওয়ামীলীগের নেতারা ভিড় করতে থাকেন শেখ মুজিবের ৩২ ধানমন্ডির বাড়িতে। দলীয় সাধারন সম্পাদক তাজউদ্দীন মুজিবের কন্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করার উদ্দেশ্যে টেপরেকর্ডার নিয়ে গেলে “রাষ্ট্রদ্রোহিতার ভয়ে” মুজিব ফিরিয়ে দেন, বরং তাজউদ্দীনকে “নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে” নির্দেশ দেন (আহমদ, শারমিন, ২০১৪,‘তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা’)। দলীয় নেতাদের নিরাপদে সরে পড়ার নির্দেশ দিয়ে সকল পরমার্শ অগ্রাহ্য করে মুজিব স্বেচ্ছায় ধরা দেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রইলেন, যদিও তার আগেই স্বেচ্ছাসেবক নেতা আবদুর রাজ্জাক মারফত তিনি আগাম জেনে যান ইয়াহিয়ার বাহিনীর আক্রমনের খবর। সার্বিক ধংসযজ্ঞের মুখে ২৭ মার্চ সারাদেশে ধর্মঘটের ডাক দিয়ে মুজিব সুটকেস গুছিয়ে গ্রেফতার হওয়ার অপেক্ষায় রইলেন নিজ বাসভবনে।
এরপরে মুজিব গ্রেফতার হলেন। “অপারেশন সার্চ লাইটে” বিরামহীন ৩৩ ঘন্টার হত্যাযজ্ঞের শিকার হয় হাজার হাজার বাঙ্গালি নরনারী। ঢাকার পিলখানা, রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুরানা ঢাকায়, এবং চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও যশোর ক্যান্টনমেন্টে বাঙালী পুলিশ, ইপিআর এবং ইবিআর-এর সৈন্যদের পাইকারীভাবে হত্যা করে পাকিস্তানী বাহিনী। আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক তাজউদ্দীন প্রথমে ঢাকার শহরতলীতে আত্মগোপন করলেও পরে বাস্তব অবস্থা অনুধাবন করে আমিরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ফরিদপুর ও কুষ্টিয়া হয়ে কোলকাতা গিয়ে হাজির হন ৩০ মার্চের সন্ধ্যায়। শেখ মুজিবের নির্দেশমত আওয়ামীলীগ দলীয় নেতারা শহর ছেড়ে গ্রামে এবং গ্রাম ছেড়ে ভারতের সীমানা অতিক্রম করে কোলকাতা, আগরতলা, শিলিগুড়ি বিভিন্ন স্থানে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। সারা দেশ থেকে মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করতে থাকে, ভারতের বিভিন্নস্থানে শরনার্থী শিবিরে আশ্রিতের সংখ্যা অর্ধ কোটিতে ছড়িয়ে যায় কয়েক মাসের মধ্যে।