রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ যদি অপচয় করা হয় সেটাকে বলে রাষ্ট্রীয় অপচয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় অপচয়টি হয় হর্তা-কর্তাদের দুর্নীতির মাধ্যমে। গতবছরই ১ হাজার কোটি ডলার পাচার হয়ে গেছে। প্রতি বছর যে পরিমাণ অর্থ এমন করে দুর্নীতির কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ঐরকম দু’একবার লুট হওয়া সেটির কাছে তেমন কোনো ব্যাপারই না।
দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অপচয়ের নাম সামরিক বাহিনী। বন্দুকের নলের মাধ্যমেই কেবল সুখ সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব এমন ধারণা থেকে বিশ্ব বের হয়ে এসেছে সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে থেকেই। বিশেষ করে ইউরোপ। যুদ্ধ করে করে ক্লান্ত এই অঞ্চলটি গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় এসে বুঝল, কামানের গোলার আওয়াজ আর তাদের কানে সইছে না।
অন্যদিকে আমরা রাশিয়ার কাছ থেকে শত শত কোটি টাকার অস্ত্র কিনছি এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও। এবং আমরা জানি সেগুলো শেষ পর্যন্ত আমাদের কোনো কাজেই আসবে না। বিশ্বের সুখী রাষ্ট্রগুলোর তালিকায় থাকা অনেক দেশই সেনাবাহিনী ছাড়া দিব্যি চালিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু আমরা পারছি না।
আজকের এই সামরিক বাহিনী আমরা পেয়েছি উত্তরাধিকার সূত্রে। পাকিস্তানের এটা দরকার ছিল। এখনো আছে। একাত্তরে যুদ্ধ বাঁধলে দেশটির মিলিটারি দুভাগে ভাগ হয়ে গেল। বাংলাদেশের ভাগটি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিলো। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর জয় আসার পর তারা হয়ে পড়ল বেকার। হবেই বা না কেন। সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কোনো কাজ থাকার কথা না। আর সামরিক বাহিনীর ধর্মই হচ্ছে তাদের হাতে কোনো কাজ না থাকলে তারা বিদ্রোহ করবে। তেমটাই হলো বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে। তাদের হাতে প্রাণ দিলেন বাংলাদেশের রূপকার। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তীতে দেশের সকল রাষ্ট্র নায়ক এই বাহিনীকে সন্তুষ্ট রেখেছে চলেছেন। যিনি পারেননি তাকেই প্রাণ দিতে হয়েছে। সেনাবাহিনীরই একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হয়েও সে কারণে রেহাই পাননি জিয়াউর রহমানও।
এসব কারণে সামরিক বাহিনীর বছর না ফুরাতে নতুন অস্ত্র আসে, বেতন বাড়ে, প্রমোশন হয়। দেশব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলে বড় পরিমাণ ভূমি তাদের আওতায় দেওয়া হয়। ঢাকা শহরের মধ্যখানে তাদের ক্যান্টনম্যান্ট ট্রাফিক জ্যামের অন্যতম কারণ হয়। কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জাতিসংঘের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে কাদের কোন ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে যায় কে জানে!
এত কথা কেন বললাম এবারে সেটা বলি। তনুর দ্বিতীয় পোস্টমর্টেম রিপোর্টে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাকে কেউ ধর্ষণ করেনি। আমরা হাউকাউ করে যদি তৃতীয়বার ব্যাপারটা খতিয়ে দেখতে বলি তাহলে হয়তো জানা যাবে, তনুকে কেউ খুনই করেনি। স্রেফ একটা দুর্ঘটনা ছিল ওটা। কেন এমন হবে এখনো সেটা কেউ না বুঝে থাকলে লেখাটা আবার প্রথম থেকে পড়ুন।
আমাদের দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে মানে ঐ বিষয় নিয়ে আর কথা বলে লাভ নেই। ওটা ঝানু লোকের হাতে পড়েছে। রহস্য উদঘাটনের জন্য নয়। ধামাচাপা দেওয়ার জন্য।
তাই আর নাটকের দরকার নেই। মেনে নিলাম- #No_one_killed_Tonu.
আর হ্যাঁ, ধর্ষকদের এবং ধর্ষণে ইচ্ছা পোষণকারীদের কারণে আজ পুরুষ হয়ে জন্ম নিয়ে আমি লজ্জিত। তনু, ভালো থাকিস। আমাদের ক্ষমা করিস। আমরা বোধয় পারলাম না।