মসজিদে আছরের জামাত হচ্ছে। মসজিদের জন্য অয়াকফ করা জমিতেই ৫ তলা মাদ্রাসা।
ওসমান মাদ্রাসার চার তলার বারান্দায় পায়চারি করে সময় ক্ষেপণ করছে। মনে মনে ভাবছে মসজিদের জন্য অয়াকফ করা জমিতে কি মাদ্রাসা বানানো জায়েজ। উহু যেখানে রেলওয়ে সরকারি ও হিন্দু জমি দেখলেই কারো অনুমতি না নিয়ে মসজিদ বানানো হয় মসজিদ পরিচালনা কমেটির সম্মানিত সভাপতি সহ সভাপতি আর সদস্য হওয়ার জন্য সেখানে মসজিদের জন্য অয়াকফ করা জমিতে মাদ্রাসা নির্মাণ জায়েজ না নাজায়েজ তা ভাবাটাই বাহুল্য। হাজী সাহেবদের তো প্রমান করতেই হবে তারা দানবীর শিক্ষানুরাগী।
ওসমানের ভাবনায় ছেদ পড়ে ‘এই অসমান এই’ ডাকে। অসমান তাকিয়ে দেখে কারী মুজাম্মেল সাহেব ওকে দেখে ফেলেছে। অসমান কারী সাহেবের সামনে যেয়ে রুমগুলীতে নজর দেয় বুঝার জন্য যে কারী সাহেব মসজিদে গেলেননা কেন।ওসমান বুজতে পারলো কারী সাহেব রুম পাহারা দিচ্ছেন। সবগুলো রুমের দরজার জোড়া কপাট ঝুলে আছে।
ওসমান!
জি হুজুর।
এমন সময় কারী সাহেব আরেকটি ছেলেকে দেখতে পায়।
এই এই ছেলে এদিকে আসো।
ছেলেটি ভীত মুখে বারান্দা ধরে এগিয়ে আসে কারী সাহেবের কাছে।
কি নাম তোমার?
জি হুজুর শামিম।
শামিম মসজিদে যাওনাই কেন?
জি হুজুর এইতো যাচ্ছিলাম।
জামাত দুই রাকাত হয়ে গেল আর এখন যাচ্ছ।
ওসমান আর শামিম রুমে আসো।
শামিম আর ওসমান রুমে ঢুকতেই কারী মুজাম্মেল সাহেব বলেনঃ
ওসমান নামাজের ইমামতি কর। তিনজনে জামাত আদায় করে ফেলি।
ওসমান দ্রুত বলে উঠে হুজুর শামিম ইমাম হোক।
উহ না তুমি হও
ওর কণ্ঠ সুন্দর।
আছরের নামাজে জোড়ে তেলাওয়াত করতে হয়না।
ওসমান আমতা আমতা করতে করতে সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। ইকামত দেয় স্বয়ং কারী সাহেব।
নামাজের ভীতর অসমান ভাবতে থাকে কারী সাহেব কি পানিশমেন্টে যাবে। নাহ যাবেনা তার সাথে তো ওসমানের ভালো খাতির। এক এক করে চার রাকাত শেষ করে ওসমান ছালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করে। তারপর সামনে মুখ রেখেই মোনাজাত শেষ করে। মোনাজাতে ওসমান কি বললো ওসমানই ভালো জানে। হয়তো ওসমান মোনাজাতে বলেছে আল্লাহ রক্ষা কর।
মোনাজাত শেষ করে ওসমান পিছনে ফিরে তার দুই মুসুল্লির দিকে তাকাতেই কারী সাহেব বলে উঠলোঃ
ওসমান আছরের জামাতের মোনাজাত কেবলামুখী না করে মুসুল্লিদের দিকে ফিরে করতে হয়।
জি হুজুর।
কারী মুজাম্মেল সাহেব কিতাব খানার ছোট হুজুর আর তিনি একা নন তার বড় ভাইও আবার হেফজখানার ছোট হুজুর। তাদের যোগ্যতা তারা হলেন মসজিদের জমির মোতাওয়াল্লির ছেলে। মোতাওয়াল্লি মানুষ ধনি হওয়ার কথা কিন্তু তারা দরিদ্র। এই জন্যই এই এতিমখানা মাদ্রাসার স্থায়ী এতিম হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল তাদের দুই ভাইয়ের। তার বাবা কোন এক ধনি লোককে বুজাতে পেরেছিলেন আপনার এই টুকরো জমি খানা আমাকে দান করেন আমি এখানে মসজিদ বানাবো। ঐ ধনি ব্যাক্তি হয়তো ভেবেছিলেন আমার তো বিশাল সম্পত্তি আর এই জমি টুকুতো আমি মালাউনের বাচ্চাদের থেকে নিয়েছিলাম। আচ্ছা আপনি এই জমি নেন আর মুতাওয়াল্লিও আপনি হবেন। আমার কোন পদের দাবী নাই। এই মহানুভতা দেখিয়ে ধনি হাজী সাহেব হয়তো পরকালে নিজের বেহেস্ত নিশ্চিত করলেন। কারী সাহেবের বাপজান বিগলিত হয়ে হয়তো বলে ফেলতেই নিয়েছিলেনঃ
আপনি হালায় আসল হাজী দুই নম্বর কলম্বো হাজী না। চলবে…………