আমি এই ছবিটা দেখছি আর ঘটনাটা মেলানোর চেষ্টা করছি। যে মানুষটা মাত্র কয়েকদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে এসএমই ফাউন্ডেশন আয়োজিত ২০১৮ সালের বর্ষসেরা উদ্যোক্তা পুরস্কার নিলেন তাকেই গ্রেপ্তার করতে হবে? তাও আবার অভিযোগ তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ব্যঙ্গ করেছেন। ঘটনাটা কী আসলেই তাই? আমাদের ধৈয্যশক্তি, সহিষ্ণুতা কী এতোই কমে গেলো?
বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি একেএম ফাহিম মাশরুরের অপরাধটা কী আমি এখনো বুঝে উঠতে পারলাম না।
ফাহিম মাশরুর কোন মতে বিশ্বাসী আমার কিছু যায় আসে না। তবে আমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আর গেরিলা যুদ্ধ নিয়ে তার প্রোফাইলে পোষ্ট দেখলাম। তাতে আমার ধারণা হয়েছে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী। বাংলাদেশের একজন নাগিরকের মন যাচাইয়ের জন্য এটুকুই যথেষ্ঠ। কিন্তু তাকে গ্রেপ্তার কেন করা হলো?
ফাহিম মাশরুরের সাথে আমার কখনো দেখা হয়নি। আমি তার সম্পর্কে খুব বেশি জানি না। যদি তিনি বাংলাদেশবিরোধী কিছু না করে থাকেন আমি তার মুক্তি চাই। আমি শুধু বুঝি একজন মানুষের দেশের প্রতি দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই ১৮ বছর আগে ২০০০ সালে তিনি তার কিছু বন্ধুদের নিয়ে বিডিজবস প্রতিষ্ঠা করেন I এটি এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় জব পোর্টালI প্রতিদিন ১ লাখের বেশি লোক এই পোর্টাল ভিজিট করেI ২০ লাখের বেশি ব্যক্তির জীবন-বৃত্তান্ত এই প্ল্যাটফর্মে সংরক্ষিত আছে I গত ১৮ বছরে ১০ লাখেরও বেশি চাকরিপ্রার্থী বিডিজবসের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছে Iএগুলো কী দেশের জন্য কোন সেবা নয়? দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা যিনি করছেন, যিনি দেশসেবা করছেন কেন তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে? দেশ ছেড়ে বিদেশে না চলে যাওয়া কী তার অপরাধ?
আমি এখনো বুঝতে পারছি না ফাহিম মাশরুরের অপরাধটা কী? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক একজন নেতা নাকি ২২ এপ্রিল কাফরুল থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। আর সেই এজহারেই তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে? আমি ঠিক জানি না তিনি কোন মাত্রায় অপরাধ করেছেন। কী অপরাধ করেছেন। কিন্তু সাদাচোখে আমি যেটা বলবো তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার বা মামলা দুটোই হয়রানি।
সত্যি বলছি আমি ভয় পেয়েছি। হতাশ হয়েছি। ক্ষুব্ধ হয়েছি। আমি দেখছি আপনারা সবাই চুপ করে আছেন। শোনেন আমিও মানুষ। আমিও পুলিশ মামলা হামলা ভয় পাই। কিন্তু এর চেয়ে বেশি ভয় পাই নিজের বিবেককে। কোন কিছু অন্যায় মনে হলে চুপ করে থাকলে আমার বিবেক খুব যন্ত্রণা দেয়। তাই প্রতিবাদ করি বারবার। কিন্তু সব দায়িত্ব কী আমার? আপনারা প্লিজ চুপ করে থাকবেন না।
আর আপানারা যারা ভিন্নমত হলেই হয়রানিতে বিশ্বাস করেন তাদের বলবো মাওলানা ভাসানী কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুকে গালি দিতেন। অন্য বিরোধীরাও। অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে বলতেন এদের গ্রেপ্তার করো। বঙ্গবন্ধু বলতেন তোমাদের সমস্যা কী? একটা সমাজে নানা মতের মানুষ থাকবে। নানা ভাবনার মানুষ থাকবে। সবাইকে মিলেই দেশকে আগাতে হবে। এভাবে যদি আমরা পরষ্পরকে ফাঁসাতে থাকি তাহলে কিন্তু দেশের অগ্রগতি হবে না। বরং বিভেদ বাড়বে। আপনারা যারা চুপ করে আছেন তাদের বলি চুপ থাকবেন না। কাল আমি পরশু আপনিও গ্রেপ্তার হতে পারেন। ৫৭ ধারা কখনোই কোন সমাধান নয়।
আবারও বলছি দেশবিরোধী কিছু না করে থাকলে একজন ফাহিম মাশরুরকে গ্রেপ্তার করা মানে বহু মানুষ ভুল বার্তা পাবে।