বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্পভবন দুর্ঘটনায় (রানা প্লাজা ধস) ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিকের মৃত্যুর বিচার পাঁচ বছরেও এগোয়নি। আসামির পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুই হয়নি। একই অবস্থা ইমারত আইনের মামলারও। কেবল দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে রানা প্লাজা ভবন নির্মাণের অভিযোগে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।
ঢাকা জেলার প্রধান সরকারি কৌঁসুলি খন্দকার আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, রানা প্লাজা ভবন ধসে মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুই বছর আগে ৪১ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন করেন। বিচার শুরুর ওই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে মামলা করলে আটজন আসামির পক্ষে স্থগিতাদেশ আসে। এর ফলে মামলার আর সাক্ষ্য গ্রহণ নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে ইমারত আইনের মামলা পরিচালনাকারী সরকারি কৌঁসুলি আনোয়ারুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত ২০১৬ সালে ১৮ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বিচার শুরুর ওই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চারজন আসামি রিভিশন মামলা করেন। সেই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণ হচ্ছে না।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে রানা প্লাজা ধসে আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার ব্যক্তি। হতাহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই পোশাকশ্রমিক। এ ঘটনায় পরদিন ২৫ এপ্রিল সাভার থানায় দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে অবহেলাজনিত মৃত্যু চিহ্নিত হত্যা মামলাটি করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ ছাড়া নিহত পোশাকশ্রমিক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী শিউলি আক্তার খুনের অভিযোগ এনে আদালতে নালিশি মামলা করেন। সাভার থানা-পুলিশের করা মামলার সঙ্গে এই মামলাটির তদন্ত আদালতের নির্দেশে একসঙ্গে করা হয়। এ ছাড়া দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ভবন নির্মাণের অভিযোগে আরেকটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এর আগে হত্যা মামলায় ছয়জন সরকারি কর্মকর্তাকে আসামি করার অনুমতি না মেলায় তিন বছর ঝুলে ছিল বহুল আলোচিত এই মামলা। সে সময় জনপ্রশাসন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুক্তি ছিল—যাঁরা বড় অপরাধ করেননি, তাঁদের আসামি করার অনুমতি তাঁরা দিতে পারবেন না। তবে সরকারের অনুমোদন না পেলেও তাঁদের আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়েই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলকে জানানো হয়নি
রানা প্লাজা ধসের ঘটনার হত্যা মামলার সর্বশেষ সাক্ষ্য গ্রহণের শুনানির তারিখ ছিল ১৫ এপ্রিল। মামলার নথিতে দেখা যায়, রাষ্ট্রপক্ষ সেদিন আদালতের কাছে সময় চান। আদালত আগামী ১৬ মে পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন। এর আগে গত ৭ মার্চ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের শুনানির দিন ধার্য ছিল। সেদিনও সরকারি কৌঁসুলি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আদালতের কাছে সময় চান। সেদিন তিনি আদালতকে জানান, তিনজন আসামির পক্ষে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ রয়েছে।
রোববার সরকারি কৌঁসুলি আবদুল মান্নান জানান, হত্যা মামলার আসামি সাভার পৌরসভার তৎকালীন কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী খানের ক্ষেত্রে কেবল উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে।
উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় রানা প্লাজা ধসের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ আটকে আছে, তা কখনই জানানো হয়নি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে। রোববার রাতে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এত বড় আলোচিত মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ স্থগিতাদেশে আটকে আছে, তা কখনো জানানো হয়নি।
আক্ষেপের সুরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বিচারিক আদালতের সরকারি কৌঁসুলি তো তাঁকে টেলিফোন করে কিংবা দেখা করে বিষয়টি জানাতে পারতেন। তিনি জানান, যখনই সরকারি যেকোনো দপ্তর থেকে তাঁর কাছে কোনো বিষয় জানানো হয় সঙ্গে সঙ্গে তিনি পদক্ষেপ নেন।
স্থগিতাদেশের ব্যাপারে সরকারি কৌঁসুলি খন্দকার আবদুল মান্নান জানান, স্থগিতাদেশ হওয়ার তথ্য লিখিতভাবে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে জানিয়েছেন।