ঘরে-বাইরে নারীদের অধিকার আদায়ে আমরা সোচ্চার, নারীর বিরুদ্ধে সকল নির্যাতন রুখে দেয়ার জন্য কি-বোর্ডে ঝড় তুলে ফেলছি। নির্যাতিত হতে হতে অর্ধেক জীবন শেষ, এবার কি বাকী অর্ধেক জীবন শেষ করবো অধিকার আদায়ের সংগ্রামে, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করে আর এই কি-বোর্ডে ঝড় তুলে! নারীদের জন্য তবে প্রত্যক্ষ কী অবদান থাকলো আমার?
মধ্য বয়সে চলে এসেছি যারা, অনেকেরই হয়তো স্বামীর কূলের স্বজনদের সাথে বনিবনাও ভালো ছিল না, তবে এখন সংসারে নিজের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই। এখন কী ভূমিকা রাখছি আমি? নিজের ঘরকে কি নারী বান্ধব করেতে পেরেছি? আপনার আমার পুত্র সন্তানটি বাইরে যেয়ে অন্য মেয়েদেরকে হেনস্তা করছে না তো? মেয়েদেরকে মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধার চোখে দেখছে তো। আর আপনি নিজে বা আমি, আমরা নিজেরাই বা পুত্রবধূ-বান্ধব শ্বশুর, শাশুড়ি হিসেবে নিজেদেরকে কতখানি প্রস্তুত করছি?
আমার যদি একটা পুত্র সন্তান থাকে, তবে তাকে মনুষত্ববোধ সম্পন্ন মানুষ করে গড়ে তুলতে পারলেই আমার নারী জীবন সার্থক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুধু গোল্ডেন এ প্লাস আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো ডিগ্রী এনে দিলেই আমি খুশী থাকবো না, আমার ছেলে যদি তার বৌ-কে সুখে রেখে তার সাথে সুখে-শান্তিতে ঘর সংসার করতে পারে তবেই বুঝবো নারী অধিকার আদায়ে বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারলাম এমন ছেলে তৈরি করতে পেরে।
আর ঘরে যে মেয়েটি আছে, তাকেও আদর্শিক শিক্ষা দিতে হবে আত্মমর্যাদার সাথে মাথা উঁচু করে চলতে, নিজেকে স্বাবলম্বী ভাবতে। আর আর্ট অব কমপ্রোমাইজিংটা যৌক্তিকভাবে প্রয়োগের দীক্ষাও ছেলেমেয়ে সকলকেই দিতে হবে। পৃথিবীর প্রত্যেকটি নরনারীই পৃথক ব্যক্তিত্ব সত্ত্বা রয়েছে, সবাই কোন না ভাবে আলাদা, এমন দু’টো মানুষকে এক ছাদের নিচে নির্বিঘ্নে বাস করতে হলে কোথাও না কোথাও ব্যক্তি্ত্বের সংঘাত হওয়াই স্বাভাবিক, সেটার সাথে ঝগড়া-বিবাদ বা নির্যাতন মিলিয়ে না ফেলে বরং নূন্যতম কিছুটা এ্যাডজাস্ট করে চলতে পারাটাই ক্রেডিট বলে আমি মনে করছি। এজন্য আমি হেরে গেলাম, সবক্ষেত্রেই তা নয়। এ শিক্ষা আমার পুত্র সন্তান আমার কন্যা সন্তান সকলের জন্যই।
আমি দেখেছি কিভাবে আমরাই ছেলে-মেয়ের মাঝে অপ্রয়োজনীয় অনেক ক্ষেত্রেই বিভাজনের কালচারটা সযতনে ঢুকিয়ে দিই। কিছু কাজ অবশ্যই থাকবে যেগুলো ছেলেরা করলে ভালো হয়, আর কিছু কাজ হয়তো মেয়েরা করলেই সুচারুরূপে করা সম্ভব। এভাবেই প্রকৃতি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টির প্রয়োজনেই। মেয়েদের ধৈর্য্য্ সহ্য বেশি প্রকৃতিই দিয়েছে, তা না হলে নয় মাস পেটে সন্তান নিয়ে নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে থাকার মতো পরিস্থিতি হতো না, মানবজাতি যুগ যুগ ধরে টিকে থাকতো না।
রাত ১২ টায় হঠাৎ পরিবারের কারো জন্য ওষুধ কেনার প্রয়োজন থাকলে কাজটা ছেলেরা করলেই ভালো, আবার পরিবারের অসুস্থ সদস্যের যত্নআত্মির কাজটা মেয়েদের মতো কেউ পারবে না। এ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু ছুটির দিনে মা যেদিন মুখরোচক কিছু রাঁধেন, তখন মেয়েটাকে ডাকেন পাশে থেকে সাহায্য করতে আর দেখে শিখে নিতে যেন সেও সুন্দর করে রন্ধনশিল্পটা আয়ত্বে আনতে পারে।
আপনি কেন আপনার ছেলেকে কোনদিন ডাকেন না, রন্ধনশিল্প জানার দরকার নেই, ছেলেটাকে রন্ধন বিদ্যাটা তো দিতে পারতেন। এটা একটা বেসিক সারভাইভাল ট্রিকস। ছুটির দিনে পেঁয়াজটা কেটে দেয়া, অন্তত চা নানানো, ডিম ভাজি করা, তাতো শেখানো যেতেই পারে। আর আমি দেখেছি বড় বড় ছেলেদের জিন্সের প্যান্ট মায়েরা ধুয়ে দেন আবার বেশ তৃপ্তি নিয়ে গল্প করেন আমার ছেলেটা না খুব আহ্লাদী হয়েছে, গ্লাসে পানিটা পর্যন্ত ঢেলে খেতে পারে না, ভাবী আমার এমন ছেলের জন্য ঘরের কাজ জানা একটা ফুটফুটে বৌ খুঁজে দেন না। খবরদার কেউ এই মায়ের ছেলের জন্য কেউ বৌ খুঁজতে যাবেন না।
আর যেসব ছেলের মায়েরা স্বপ্ন (আমার নিজের ছেলে আছে) দেখতে শুরু করেছেন যে ছেলের বৌ এসে আপনাদের উদ্ধার করবে, তারাও অনুগ্রহ করে নিজের দিকে তাকান। আপনাদের সবচেয়ে বেশী বা বড় প্রত্যাশা থাকা উচিৎ আগে নিজের সন্তানের কাছ থেকে। যে ছেলেটি আপনার জ্বর হলে কোনদিন গায়ে হাতটা দিয়ে দেখেনি, মাথায় একটু জলপট্টি কিভাবে দিতে হয় তাও শেখাননি, সেই ছেলের বৌ এর কাছ থেকে কী কী সেবা পেতে চান তার লিস্ট করা শুরু করে দিয়েছেন মনে মনে।
শোনেন ভ্রাতা ও ভগ্নিরা আমার, চ্যারিটি যেমন বিগিনস এট হোম, তেমনি চেঞ্জ শুড স্টার্ট ফার্স্ট এ্যাট ওন হোম। তারপরে আসেন নারী অধিকারের কথা বলি।