আওয়ামিলীগ সরকার (ও তার প্রশাসন) মুসলমানের সমর্থনের জন্য এতোটা নগ্ন ও নির্লজ্জ হয়েছে যে, তাদের এই নির্লজ্জতা ঠিক কোন ভাষায়, কোন শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করবো, সেইটুকু ভাষা ও শব্দ আমার জ্ঞাণ ভাণ্ডারে নেই। রংপুরের ঠাকুর পাড়ার টিটু রায়কে ঠিক কোন অপরাধে গ্রেপ্তার করলো আওয়ামিলীগ সরকারের প্রশাসন? আমি বুঝে উঠতে পারছি না টিটু রায়ের অপরাধটা কি? যে ছেলেটা ফেইসবুকের ‘ফ’ ও বুঝেনা, সেই ছেলে কি করে ইসলাম ও নবী অবমাননা করবে? আমরা যা দেখেছি, যে টিটু রায় নামের আইডি থেকে খুলনার মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদীর যে পোষ্টটা শেয়ার করা হয়েছে, তা প্রকৃত ব্যক্তি টিটু রায় ছিলনা। টিটু রায় নামক যে আইডি থেকে ইসলাম অবমানকর পোস্ট শেয়ার করা হয় সেই আইডিতেও টিটু রায়ের ছবি ছিল মাত্র একটি। তাও আবার অস্পষ্ট। এর আগে টিটু রায় নামক আইডিতে তেমন পোস্ট করা হয়নি। এটা যে একটা ভুয়া আইডি এটা নুন্যতম ফেইসবুক ব্যবহারীকারীরা বুঝতে পারবেন। এই একটি ভুয়া ফেক আইডির পোস্ট দেখে কেন রংপুরের মুসলমানরা সংগঠিত হয়ে ঠাকুর পাড়ায় হিন্দুদের উপর হামলা চালালো? টিটু রায়রা ইসলামের দৃষ্টিতে হিন্দু মালাউন বলে? টিটু রায়রা অসহিংস ও সহিষ্ণু জাতি বলে তাদের দুর্বল ভাবা হয়? ইসলাম অবমাননাকর একটি মাত্র পোস্ট নিয়ে মুসলমানরা রাতারাতি এতো সংগঠিত হলো কি করে? এটা পুর্ব পরিকল্পিত নয় কি?
আচ্ছা ধরে নিলাম, খুলনার মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদীর পোস্টটি টিটু রায়ই শেয়ার করেছে। এখানে যদি টিটু রায় অপরাধী হয়, তাহলে তো তার চেয়ে শতগুন বেশি অপরাধী খুলনার মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদী। কারণ গত ১৮ই অক্টোবর তিনি লিখে এই পোস্টটি তার ফেইসবুক ওয়ালে পোস্ট করেন। এরপর তার পোস্টটি ৮৭ বার শেয়ার হয়েছে। তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো না? কেন তার বিরুদ্ধে ধর্মানুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্ত মুসলমানরা গ্রেপ্তারের দাবী জানায় নি? তার মানে মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদী একজন মোচহীন গালভরা দাঁড়িওয়ালা মুসলমান বলে? নাকি তার ইসলাম অবমাননাটা মুসলিম মুসলিম ভাই বলে পবিত্র অবমাননা ছিল? কোনটা? আর আমাদের প্রশাসনও কেন খুলনার মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদীকে গ্রেপ্তার করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি? কেন একাডেমিক শিক্ষাহীন একটা অশিক্ষিত নীরিহ যুবক টিটু রায়কে গ্রেপ্তার করা হলো? কে দোষী আর কে অপরাধী এটা বুঝার মতোও কি কাণ্ডজ্ঞাণ আমাদের পুলিশ প্রশাসনের হয়নি? নাকি উপরের অঙ্গুলি হেলনের নির্দেশ পেয়ে টিটু রায়কে গ্রেপ্তার করা হলো? যেহেতু সরকার আওয়ামিলীগ, প্রশাসন তার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার, বিচার বিভাগ তার, সেহেতু এই দায় আওয়ামিলীগের উপরই বর্তায়।
অনেক অনেকদিন আগে আমার এক বন্ধু দীর্ঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিলেন, -বন্ধু পৃথিবীতে যাকে ভালোবাসি সেইই বেশি কষ্ট দেয়। কথাটা এদেশের হিন্দু-আওয়ামিলীগের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও শতভাগ ঠিক। সেই ৭১ পরবর্তী এদেশের হিন্দুরা তাদের প্রাণের দল মনে করে আওয়ামিলীগকে যেভাবে ভালোবেসে এসেছে, আমার মনে হয় কোনো তরুণ তার প্রিয়জনকেও এতোটা দীর্ঘ সময় ধরে ভালোবাসেননি। তারপরও এখনো এদেশের অধিকাংশ হিন্দু-আওয়ামিলীগার সুযোগ পেলে কুকুরের মতো নুয়ে পড়ে শেখা হাসিনা পা চাটবেন! আবার অনেকে হয়তো গোপনে গোপনে হতাশা হয়ে অশ্রু ফেলেবেন। ও হ্যাঁ, আওয়ামিলীগের পা চাটার মধ্য অন্যতম আত্নসম্মানহীন ও পতিত কবি হলেন কবি নির্মেলেন্দু গুন। এই পতিত কবিটি নাকি শেখ হাসিনার ক্লাসমেড। এই পচনশীল কবিটি ২০০৬ সালে শামসুর রাহমান প্রয়াত হবার পর ভেবেছিলেন এদেশে তিনি প্রধান কবির আসনে আসীন হবে। আহারে তার আশা এখনো ঘুচলো না! যেখানে আল মাহমুদ ও সৈয়দ শামসুল হক আছেন সেখানে তিনি হালে পানি পাবেন না। এটাও তিনি বুঝলেন। এরপর দম নিলেন। এবার তিনি জোরপুর্বক আওয়ামিলীগের ললাটে সেঁটে দিতে চাইছেন অসম্প্রদায়িকতার তিলক! কবি এখন আওয়ামিলীগে পা চাটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা যখন টেকনাফে গিয়ে মায়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা-প্রেম দেখান, তখন তিনি মায়ানমার গিয়ে বৌদ্ধ মারার জন্য শেখ হাসিনা সরকারের কাছ থেকে বন্দুক (যদি সরকারী একুশে পদক আরেকটা জুটে মন্দ কি?) চেয়ে প্রতিবাদী কবিতা লিখলেন। কিন্তু সংখ্যালঘু হিন্দু-আদিবাসীদের উপর যখন এদেশে মুসলমানরা ধর্ষণ নির্যাতন চালায়, তখন তার মুখ বোবা থাকে। সম্ভবত তখন তিনি মুসলমানের… ইয়েটা মুখে নিয়ে….. তাদের ….সুখ দেন!
লেখাটা শুরু করছিলাম গতকাল। আজ লিখতে গিয়ে দেখছি টিটু রায়ের মামলা লড়ার জন্য তার পাশে কোনো আইনজীবি নেই! টিটু রায় এখন এতোটা অসহায় এদেশে। টিটু রায় যদি খুন করতো, সেই যদি কোনো ধর্ষণ করতো, তাহলে তার মামলাটা রাষ্ট্রীয় ভাবে এতোটা গুরুত্ব পেতো না। তার বিচার ও শাস্তির গুরুত্বও থাকতো না এদেশে। যতটা গুরুত্ব পাচ্ছে রাষ্ট্র ও মুসলমানের ইসলাম-ধর্মানুভূতির মামলা বলে। টিটুকে রায়ের উপর মিথ্যে অভিযোগ এনে তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করায় আর নতুন করে কিইবা অবাক হবো? এর আগেও দেখেছি, গত বছর একই ভাবে জাহাঙ্গীর নামক এক মুসলিম যুবক রসরাজের নামে ভুয়া আইডি বানিয়ে ক্বাবার উপর শিবের ফটোশফের ছবি দিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট করে। আর এদেশের ইসলাম ও মুসলমানের দালাল প্রশাসন ভিক্টিম অক্ষরজ্ঞানহীন লেখাপড়া না জানা রসরাজকেই গ্রেপ্তার করে। আরেক দিকে ব্রাম্মনবাড়িয়ার মুসলমানরা রসরাজের নামে মিথ্যে অভিযোগ শুনে নাসিরনগরের তিনশ হিন্দু পরিবারের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে শন্মান করে দিল!
আচ্ছা হিন্দুরা কিসের জন্য এখনো আওয়ামিলীগ প্রেমী? যে আওয়ামিলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের সমর্থন পাবার নেশায় হিন্দুদের উপর রাষ্ট্রীয় বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে, সেখানে হিন্দুরা এখনো কেন নৌকায় ভরসা রাখছে? বিগত কয়েক বছরে দেখেছি যশোর, সুমানগঞ্জ, কুমিল্লা, পাবনার সাঁথিয়া, ব্রাম্মনবাড়িয়া হিন্দুদের উপর মুসলমানদের করা লুটপাট, ধর্ষণ, নির্যাতন ও ভুমি দখল করার মহোৎসব। এইবার হল রংপুর ঠাকুর পাড়ায় । আচ্ছা ৭১এর পরবর্তী কি হিন্দুরা এই বিশ্বাসঘাতক আওয়ামিলীগের কট্টর সাম্প্রদায়িক মুসলমান তোষণ নীতিই আশা করেছিল? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসায়ী এই বেশ্যা-রাজনৈতিক দল আওয়ামিলীগকেই তারা চেয়েছিল? চক্ষুলজ্জা বলে একটা কথা আছে, আওয়ামিলীগ দল ও তার প্রশাসন এই চক্ষুলজ্জাবোধটুকু পর্যন্ত হারিয়েছে! একটা নীরিহ নিরাপরাধী সংখ্যালঘু হিন্দু যুবক টিটু রায়কে গ্রেপ্তার করে আওয়ামিলীগ সরকার মুসলমানদের বোঝাতে চাচ্ছে আমরাও তোমাদের মতো বর্বর ও নির্লজ্জ মুসলমান! তোমরা যদি ক্বাবার উপর শিবের ফটোশফ করে হিন্দু ছেলে রসরাজের নামে চালিয়ে দিয়ে বিনা অপরাধে হিন্দুদের ৩০০ পরিবার জ্বালিয়ে শম্মান করে দিতে পারো, তবে আমরাও রসরাজের নামে মিথ্যে অভিযোগ এনে রসরাজকে গ্রেপ্তার করে তোমাদের খুশি রাখতে পারি! তোমরা-আমরা তো দুজনেই মুসলমান। অমিল থাকি কি করে?
–টিটু রায় হলো এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের কাছে আওয়ামিলীগের অতিরিক্ত মুসলমান প্রেম প্রদর্শন করার জন্য বলির পাঁঠা! আওয়ামিলীগ দলটার কাছে রাজনৈতিক ভাবে মুসলমানের সমর্থন মজবুদ করার জন্য এর চেয়ে সহজ উপায় আর ছিলোনা। এর আগেও নাস্তিক ব্লগার, নিরীহ হিন্দু-আদিবাসী যুবককেও আওয়ামিলীগ তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য বলির পাঁঠা বানিয়েছিল। শুধু মাত্র তাদের ব্যক্তি স্বার্থের আশায়। ক্ষমতায় টিকে থাকার নেশায়। এখানে নিরীহ, নিরস্ত্র, নিরাপরাধী টিটুকে রায়কে গ্রেপ্তারে করার মধ্যে সরকার ও তার প্রশাসনের মধ্যে কোনো দক্ষতা ফুটে উঠেনা, বাহাদুরীও না। ফুটে উঠে এক সীমাহীন বর্বর ইতরামির নির্লজ্জতা ও বিশ্বাসঘাতকের চরিত্র!