আমি এমন একটা দেশে জন্মগ্রহণ করে বেড়ে উঠেছি, যেখানে অধিকাংশ মানুষ ধার্মিক। ধার্মিক বলতে শুধু মুসলমান নয়, এখানকার হিন্দু, বৌদ্ধ আর খ্রিষ্টান ধর্ম থেকে যারা এসেছেন, তারাও অধিকাংশ ধার্মিক। এরাই আমার আত্মীয়, বন্ধু। আমার হিতাকাঙ্ক্ষী বলতে যাদের মুখ ভেসে ওঠে, তখন আস্তিক ও নাস্তিকের পৃথক কোনো তালিকা পাই না।
যাদের ঘিরে আমার পৃথিবী, তাদের মাঝেই আমি আবার সংখ্যালঘু হয়ে পড়ি শুধুমাত্র আমার অবিশ্বাসের কারণে। এই সমাজে অবিশ্বাসীরা ভয়ানক অপরাধী। অন্য ধর্মের কেউ যদি শোনে মুসলমানের ঘরে জন্মেও আমি অবিশ্বাসী, তখন তাদের কাছেও আমি অপরাধী। সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস রাখা পরম পুণ্য আর তাতে অবিশ্বাস করা সব চাইতে জঘন্য পাপ।
বিশ্বাসীরা ঘৃণা করে অবিশ্বাসীকে। কারণ জানা আছে কারো? আমি নিশ্চিত জানি, কোনো অবিশ্বাসী শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস রাখার জন্য কাউকে ঘৃণা করে না। ঘৃণা কাদের মধ্যে বেশী হলো তাহলে? বুক-ভর্তি ঘৃণা নিয়ে ভালোবাসার চাষ হয় না।
ধর্ম যতদিন জীবিত থাকবে, ততদিন একটা সুন্দর পৃথিবীর আশা করাটা বোকামি। সম্প্রদায় থেকেই সাম্প্রদায়িকতা। সব মানুষের গায়ের রং যদি একরকম হত, তবে সাদা, কালো বা পীতবর্ণের কারণে যে অন্যায় আর শোষণ হয়েছে এবং হচ্ছে, সেসব হতে পারতো না। গায়ের রঙ আমরা চাইলেই এক করে দিতে পারি না। কিন্তু চাইলে ধর্মহীন হওয়া সম্ভব। এতে কারো পাপ হবে না।
বামাতিদের কাছে সব সমস্যার সমাধান – বিপ্লব করে কমিউনিজমের প্রতিষ্ঠা। যেমন করে মুসলমানের কাছে আল্লাহ্র আইন, হিন্দুদের কাছে ফিরে পাওয়া খাঁটি সনাতন, খ্রিষ্টানের কাছে যীশুর বাণী। সকল সমস্যার সমাধানের জন্য কেউ যখন কেবল একটা দাওয়াই প্রেসক্রাইব করে, তখন বুঝতে বাকি থাকে না, ঐ ব্যাটার মগজ ভাইরাসে ঠাসা।
পৃথিবী নানারকম ‘বাদ’-এর ফাঁদ বহুদিন যাবত দেখছে। মানবতাবাদও ক্ষেত্রবিশেষে আপেক্ষিক হয়ে পড়ে। আমার রফতানি যখন বাড়ে, তখন অন্যের আমদানি বাড়ে। আমি আমার প্রয়োজনে যখন নদীতে বাঁধ দিই, তখন অন্যপাড় শুকিয়ে যায়। আমার উঠোনের ধান যখন আমি আগলে রাখি, তখন কাকের অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়।
সৃষ্টিকর্তা বলে সত্যই যদি কেউ থাকতো তবে সে বলে দিত মানুষ কাকে গ্রহণ করবে, কতোটা গ্রহন করবে, কাকে বর্জন করবে, কতোটা বর্জন করবে। পরিমাণ বা সীমার মাপকাঠি যে নির্ধারণ করে, সে হচ্ছে সময়। সময়ের প্রয়োজনকে সবার আগে স্থান দিতে হবে।