আদমরে ধরণীতে পাঠানোর পর ঈশ্বরের প্রায়শই আদমের সহিত বাতচিত করার খায়েশ হয়। আদমের রস-কস-সিঙ্গাড়া-বুলবুলি মিলিয়া ঈভের সহিত যত ফষ্টিনষ্টি সবই ঈশ্বরের কাছে পরমং বিনোদনং। সেদিনও প্রাতভ্রমণে আসিয়া ঈশ্বর কী ভাবিয়া আদমের কুটিরে ঢুঁ মারিলেন।
ঈশ্বর গলা খাঁকরাইয়া কহিলেন, কী হে আদম, আছো নাকি?
আদম কুটিরে তখন ঈভের সহিত কিছু রমণগল্প তথা রসগল্পে মসগুল ছিল।
ঈশ্বরের ডাক শুনিয়া কিঞ্চিৎ গোঁ গোঁ করিয়া বাহির হইল আদম। আদমের চেহারার লুল-লুল ভাব দেখিয়া ঈশ্বর কিঞ্চিৎ বিষণ্ণ হইলেন বটে, তবে আদমকে বুঝিতে দিলেন না। আদমের সঙ্গে কেন যে ঐ ঈভ মাগিটাকে বানাইতে গিয়াছিলেন, ভাবিয়া কুল করিতে পারলেন না। আদমটা দিন নাই, রাত নাই সারাটা দিন ঐ মাগিটাকে লইয়া পড়িয়া থাকে। ভাবিতে ভাবিতে ঈশ্বর আদমের সহিত আজ কী আলাপ করিবেন, তাহাও ঠিক করিলেন।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও আদম ঈশ্বরের জন্য আঙ্গিনায় মাদুর পাতিয়া দিল। ঈশ্বর সপ্তাকাশের সিংহাসনের বদলে এই হুগলি পাতার মাদুরে বসিতে কিঞ্চিৎ দ্বিধা করিলেও পরক্ষণেই আদমের সহিত খোশগল্পের নেশায় পুলকিত হইয়া হাত পা ছড়াইয়া বসিয়া পড়িলেন। আদমপানে চাহিয়া রসিয়া রসিয়া ঈশ্বর শুধাইলেন, ‘ওহে আদম, আজ তুমি তোমার দুইটা দোষ আর দুইটা গুণের কথা আমায় বয়ান করো দেখি নে!’
আদম একটা ৪২০ মার্কা হাসি মারিতে গিয়াও সংযত হইল। ঈশ্বর মহাশয়ের উদ্দেশ্য আজ সুবিধার ঠেকিতেছে না। ঈভের সঙ্গে দুপুরে সাগরের বুকে জলকেলি করার কথা ছিল, এইসময় কিনা পড়িল ঈশ্বরের হাতে! আদম ভক্তির নয়নে ঈশ্বরের দিকে তাকাইল বটে, কিন্তু মনের মাঝারে ভাসিতেছে ঈভ ইন বীচ, ঈভের পরনের লতাপাতার কাঁচুলি, লতাপাতার কৌপীন, একে একে খুলিতেছে ঈভ, শরীর জুড়িয়া এক রুক্ষ লাবণ্য!
ঈশ্বর আবার গলা খাঁকারি দিয়া শুধাইলেন, ‘কই হে আদম শুরু কর! প্রথম তোমার দুইটা দোষের কথা বলিবে, তারপর বলিবে দুইটা গুণের কথা।’
আদম মাথা চুলকাইয়া আতুপাতু করিয়া কহিল, ‘এ তো মহা কঠিন কর্ম, হে ঈশ্বর মহাশয়! নিজের দোষ-গুণের কথা কেমনে বলি?’
‘আহা আদম, ভাবিয়া চিন্তিয়া বাহির কর, তারপর বল!’
ঈশ্বর হাসিয়া কহিলেন, ‘ভাবিয়া চিন্তিয়া বল, হে আদম? এত শরমিন্দা হওয়ার তো কিছু নাই।’
আদম উথাল পাথাল করিয়া নিজের দুইটা দোষ, দুইটা গুণ খুঁজিয়া বেড়াইতে লাগিল। খুঁজিতে খুঁজিতে আদমের গন্ধম গাছের ছালের তৈরি নেংটি পর্যন্ত ঢিলা হইয়া উঠিল! যাই হোক, অবশেষে আদম নিজের দোষ-গুণ খুঁজিয়া পাইয়া খিল খিল করিয়া হাসিয়া উঠিল।
ঈশ্বর শুধাইলেন, ‘কী হে আদম, পাইলে নাকি?’ ঈশ্বরেরও পরমাগ্রহ!
আদম কহিল, ‘জ্বী, হুজুর।’
‘তাহলে আর দেরি কেন, শুরু কর দেখি’, ঈশ্বর আরো জমাইয়া বসিলেন।
আদম ইতত করিতে করিতে কহিল, ‘হুজুর, আমার একটা দোষ – আমার পশ্চাৎ গুহা হইতে প্রতিদিন হাগু নির্গত হয়।’
ঈশ্বর কিঞ্চিৎ বিস্মিত ও বিচলিত হইলেও পরক্ষণেই বলিলেন, ‘তা তো বটেই, তা তো বটেই!’
আদম লজ্জাবনত নয়নে চাহিয়া আবার কহিলো, ‘আর আমার দ্বিতীয় দোষ – আমার সম্মুখদণ্ড দিয়া হিসি করিতে হয়।’
ঈশ্বরের মুখ হাঁ হইয়া আসিল আদমের বালখিল্য বুদ্ধিমত্তায়, কিন্তু মানিয়া লইল। আসলে কয়েকদিন হইলো স্বর্গ হইতে মর্তে আসিয়াছে, অন্য মানুষ নাই, সমাজ নাই, তাই হয়ত আদম প্রতিদিনকার বর্জ্যত্যাগকেই দোষ ভাবিতেছে। এ আর দোষের কী! ঈশ্বর ভাবিলেন। আহারে নাজুক আদম সন্তান।
ঈশ্বর বিড় বিড় করিয়া শুধাইলেন, ‘এবার তোমার দুইটা গুণের কথা বল, হে আদম!’
আদম চকচক চোখে ঈশ্বর পানে তাকাইয়া খুব ভাব মারিয়া কহিল, ‘ঐ সকলই তো আমার গুল, হে ঈশ্বর মহাশয়।’
ঈশ্বর এবার কিছুটা থতমত খাইয়া উঠিলেন। আদমের বাতচিত ইদানীং বড় ফাউল হইয়া উঠিযাছে। ব্যাটাকে একবার হাবিয়া দোজখের পাশ দিয়া ঘুরাইয়া নিয়া আসিলে বুঝিত, ফাইজলামির ঔষধ কী। যাই হোক, ঈশ্বর সব সামলাইয়া বলিলেন, ‘কী বলিতেছ, একটু ঝাড়িয়া কাশিয়া কহো, হে আদম।’
আদম এবার আরো ভাব মারিয়া কহিল, ‘কেন হে ঈশ্বর, আমার সম্মুখদণ্ডখানাই তো আমার একটা মহা গুণ। এই দণ্ড দিয়াই তো ঈভ মাগীটার সাথে আমার রমণলীলা চলে। এই গুণ না থাকিলে ধরণীতে আমি যে বেগুন হইয়া যাইতাম, ঈশ্বর মহাশয়।’
ঈশ্বর এইবার চমকাইয়া উঠিলেন বটে, তবে হজম করিয়া কহিলেন, ‘এবার দ্বিতীয় গুণটা কহো দেখি নে আদম?’
আদম বিড়বিড় করিয়া কহিল, ‘ভয়ে বলিব না নির্ভয়ে বলিব, হুজুর?’
‘ভয়ের কি কোনো কারন আছে, হে আদম। আমি থাকিতে তোমার কী ভয়? নির্ভয়ে বল, হে আদম।’
‘আমার দ্বিতীয় গুণ হলো আমার পশ্চাৎ গুহ্যদ্বার, হে ঈশ্বর।’
ঈশ্বর এবার আরো নড়িয়া চড়িয়া বসিলেন, ‘কেন কেন? এইখানে তুমি কী গুণ খুঁজিয়া পাইলে, হে আদম?’
‘ভয়ে বলিব না নির্ভয়ে বলিব, হে ঈশ্বর?’ আদম আবার কহিল।
ইদানীং আদমের মতিগতি ঈশ্বরেরও ঠাহর করিতে কষ্ট হয়। তবু ঈশ্বর হাস্যমুখে কহিলেন, ‘আহা আদম, আমি থাকিতে তোমায় ভয় কিসের? নির্ভয়ে বল।’
ঈশ্বর যে সকল দোষ-গুণসহ আদমরে রচিয়াছে, সেই দোষগুণগুলি তো ঈশ্বরেরই দোষগুণ, আদম তাহা ভালই ঠাহর করে। তদুপরি ঈভের সহিত সাগরে জলকেলি করিতে না পারায় এমনিতেই আদম ফুঁসিতেছে।
অবশেষে আদম মৃদু হাস্যে কহিল, ‘আমার পশ্চাৎ গুহ্যদ্বার যে বাকি জীবন ঈশ্বরের মনোরঞ্চনে ব্যয়িত হইবে, সে কি আমার আর বুঝিতে বাকি, হে ঈশ্বর!’
আদমের এই বালখিল্য রসিকতায় ঈশ্বর কী বুঝিলেন, বোঝা গেল না, তবে তিনি এই ধরাধাম ত্যাগ করিয়া তাহার সপ্তাকাশের সিংহাসনে আরোহন করাই আপাতত সমীচীন বলিয়া গন্য করিলেন!