প্রশ্ন: ডারউইনিয়ান বিবর্তন কি বিশ্বাসের বিষয়?
উত্তর: (১) ডারউইনিয়ান বিবর্তন নিখাদ বিজ্ঞান। এটা জীববিজ্ঞানের অংশ। যুক্তি/বিজ্ঞান, কিন্তু বিশ্বাস-অবিশ্বাসের বিষয় না। বিজ্ঞান প্রমাণের বিষয়। আমরা কখনো কি বলি, টেবিলে রাখা এক গ্লাস পানিতে আপনি বিশ্বাস করেন কি? প্রাণীদেহের শিরা-উপশিরা দিয়ে যে রক্ত সংবহন হচ্ছে, আমরা কি কাউকে এই দেহের ভিতর রক্ত পরিচালন ক্রিয়া কাউকে বিশ্বাস করতে বলি? উদ্ভিদের শরীরে খাদ্য উৎপন্ন হয় সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এই সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া কিন্তু কখনো কাউকে বিশ্বাস করতে বলি না। বরং এটা এই জগতের প্রমাণিত বিষয়। উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদন সম্পর্কে এটা একটা ফ্যাক্ট। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে পৃথিবী। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে চাঁদ। এই যে প্রদক্ষিণরত অবস্থা এটা কি কাউকে বিশ্বাস করতে হয়? শরীরে কোষ বিভাজনের ফলে প্রাণী কিংবা উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটে। কোষ বিভাজনের বিষয়টি কাউকে বিশ্বাস করতে হয় না। এটা বাস্তব ঘটনাবলী। অর্থাৎ যা প্রমাণিত, যার ইম্পিরিক্যাল এভিড্যান্স আছে, তাকে আমাদের বিশ্বাস করতে হয় না। বিশ্বাস কেবল সম্পর্কিত অপ্রমাণিত বিষয়ের সাথে। তথাকথিত “গায়েবী” বিষয়ের সাথ। যাদের আদতে কোনো অস্তিত্ব নেই। যেমন ভূত-প্রেত-জিন-পরী-ঈশ্বর-ভগবান-আল্লাহ–হেন তেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
(২) একুশ শতকের পদার্থবিজ্ঞান এখন সেই সতের শতকের নিউটনের যুগে আটকে নেই। বিজ্ঞানের এই শাখা এখন অনেক অনেক সমৃদ্ধ। আইনস্টাইনের পদার্থবিজ্ঞান ছাড়িয়ে এই বিদ্যা এখন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের যুগে প্রবেশ করছে। তেমনি আজ থেকে প্রায় দুই শত বছর আগের লুই পাস্তুরের সময়কার ভাইরোলজিও বর্তমানে সময়ে অনেক অনেক উন্নত। বিজ্ঞানের যে কোনো শাখাই বলেন, গত দেড়-দুইশ বছরে এতো বেশি উন্নত হয়েছে, এতো বেশি সমৃদ্ধ হয়েছে যে, এখন আর সেই শুরুর দিককার সময়কার তথ্য দিয়ে বিচার করা যায় না। ঠিক তেমনি বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানও ডারউইনের যুগে আটকে নেই। মেন্ডেল, জেবিএস হ্যালডেন, জুলিয়ান হাক্সলি, থিওডোর ডবজানস্কি, আর্নেস্ট মায়ার, রোনাল্ড ফিশার প্রমুখ খ্যাতিমান বিজ্ঞানীদের হাত ধরে বিজ্ঞানের এই শাখাটি সর্বোতভাবে প্রমাণিত এটা বায়োলজিক্যাল সায়েন্স। একইসাথে ন্যাচারাল সিলেকশন থিওরি অজস্রভাবে প্রমাণিত।
তাই ডারউইনিয়ান বিবর্তনকে কেউ বিশ্বাস করে কি করে না, এইটা জানার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এই ধরনের প্রশ্ন করাটাই কেমন যেন বোকার মতো শোনায়। আজকের ভ্যাক্সিশনের এই যুগে এখন কেউ যদি বলে আমি ভ্যাক্সিনের কার্যকরিতায় বিশ্বাস করি না, পানি পড়া, তাবিজ পড়া, বান মারা, তেল পড়ায় বরং বিশ্বাস করি; তাহলে এটা যেমন শোনাবে, ঠিক তেমনি আজকের যুগে বিবর্তন কেউ বিশ্বাস করে কি, করে না প্রশ্নটা তেমনি শোনাবে!