ভেজা বেড়াল The Love Cat (শেষ পর্ব)

ভেজা বেড়াল The Love Cat  পর্ব ০১

http://likhalikhi.com/%E0%A6%AD%E0%A7%87%E0%A6%9C%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A7%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B2-the-love-cat/

ক্যাভ ওয়ে The Cave Way

আফসানা রেল লাইনের সামনে সান্তনা মার্কেটের একটি দোকানের বাইরে দাড়িয়ে কোল্ড ড্রিংকের বোতলে পাইপ ঢুকিয়ে টেনে টেনে খাচ্ছে। হটাত ও খেয়াল করে যে ওর টানে আওয়াজ হচ্ছে। ও দ্রুত সাইলেন্ট মোডে চলে যায়। শাহেদের দেয়া রিষ্ট ওয়াচে একবার সময়টা দেখে নেয়। আহ সোহান গাধাটাকে গত রাতে একবার বললাম, সকালে বললাম, এখনো কোন দেখা নেই। আরে বাবা প্রেম করার শখটা কি তোমার না আমার। বন্ধু আছো বন্ধু থাকো না তার বয় ফ্রেন্ড হওয়ার খায়েস হইছে যতসব।

এমন সময় রিমির ফোন আসে। হ্যালো রিমি আমি সান্তনার কোনার দোকানটায় আছি।

রিমি ফোনটা রেখে ভাবতে ভাবতে হাটে। আফসানা পারেও বটে। এই শাহেদ এই সোহান এই অমুক ঐ তমুক। তবে কথা সত্য মেয়েটার মাঝে একটা সচ্ছতা আছে। ও সোহানকে সরাসরি বলেছে, দেখ সোহান তুমি যেভাবে সারাদিন একি আবদার ফেসবুক মোবাইলে করে বেড়াও, আমি চাইলে আমি তোমাকে সাপ বানরের নাচাতে পারি। তোমাকে ইউজ করতে পারি। নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে পারি। তুমি প্লীজ শান্ত হও।আরও কত মেয়ে আছে তুমি দেখ।

হটাত একটা আওয়াজে ও চমকে যায় ও নিচে তাকিয়ে দেখে ও বেখেয়ালে কারো ফেলে যাওয়া প্রানের জুসের টেট্রা প্যাকের উপর পা ফেলেছে। আশেপাশে তাকাতেই দেখে সবায় ওর দিকে বিশেষ করে ছেলেরা তাকিয়ে আছে। রিমি দেখে প্যাকটার সামনেই মার্কেটের পানির সরু ড্রেন ও যদি প্যাকে পা না দিয়ে ড্রেনে পা দিয়ে পরে যেত তবে এই সব ছেলেরা কেউ দাড়িয়ে মজা নিত। কেউ সাহাজ্য করার নামে শরীরে হাত দেয়ার সুযোগ নিত। রিমি দেখতে পায় যে সে ড্রেনে না পরায় ওদের চোখে একটা হতাশা। হায়রে আমাদের সমাজ!  হাজার বছরের ধর্মাচার রীতিনীতি এদের পুরুষালী খোলস থেকে মানুষে মানুষে সমানে আনতে পারেনি। এই সমাজে একটা মেয়ের বায়ু ত্যাগের রোগ থাকলে একটা বিয়েও ভেঙ্গে যায়। ঠিকই আছে আফসানা আরও এইসব সোহান টোহানদের নাকে  দড়ি দিয়ে ঘুরাক, গাধা বানাক।
আফসানাকে দেখতে পেয়ে রিমির ভাবনা ক্ষোভে ছেদ পরে।

রিমি আসার পর সোহানের কথা বলে। কোথায় বসা যায় তা নিয়ে আলাপ করে দুই বান্ধবী মিলে।

সোহানের কল আসে এমন সময়।
হ্যালো
টিংকারবেল  তুমি কোথায়?
পিঁটারপ্যানের সাথে আড্ডা দিচ্ছি
এই কথায় সোহান খুশি হয় (সোহান মনে করে আফসানাকে টিংকারবেল বলায় আফসানা সোহানকে পিঁটারপ্যান বললো)
মাঝখানে তুমি কাবাব মে হাড্ডি হলে সোহান
এই কথা বলেই আফসানা হাসতে থাকে সেই হাসিতে যোগ দেয় রিমিও।
ওকে আমি হাড্ডি খিযির তো এখন কোথায় আসবো?
ক্যাভওয়েতে আসো
কি ওয়ে বললে?
ক্যাভ ওয়ে অহ তোমার তো কানে ঠাণ্ডা লেগেছে হিঃ হিঃ হিঃ গুহা আছেনা গুহা,  গুহার ক্যাভ ক্যভ ওয়ে গুহা গলি। যে কাউকে বলবে দেখিয়ে দিবে।

ক্যাভওয়ে রেস্টুরেন্ট হল একটি পপুলার টোনাটুনি স্পট। রেস্টুরেন্টটা একটি মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডে। আর রেস্টুরেন্টে যেতে বেশ লম্বা সরু ও অন্ধকার একটি গলি পার হয়ে যেতে হয়। ইহাই ক্যাভওয়ে নামকরনের শানে নুজুল।

সোহান ব্যাপারটা জানেনা। সে কয়েকজন মুরুব্বীকে জিজ্ঞাসা করে
আঙ্কেল ক্যাভওয়েটা কোথায়?
মুরুব্বী গম্ভীর চেহারা করে একবার সোহানের মুখটা দেখে বলে সামনে। ক্যাভওয়ের কথা জিজ্ঞাসা করলেই মুরুব্বীদের চেহারায় একটা গম্ভীর ভাব আসে। এই গম্ভীরভাবের দুটো কারন হতে পারে।

এক।  মুরুব্বী ভাবছে পোলাটাকে চিনলাম না তার মানে বাইরের মহল্লার তাই আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করার সাহস করেছে। ছেলেপেলে বখে গেল বেয়াদব মুরুব্বীজন বুঝেনা।
দুই। আহ এইতো আমরাও ক্যাভওয়েতে যেতাম তখন মাত্র ক্যাভওয়ে নতুন শুরু হয়েছে। আমরা খুব সাবধানে আসতাম যদি কোন মুরুব্বীর চোখে পড়তাম তাহলে খবর ছিল। বলে বেড়াতো হ হাজী বছিরের পোলাটা গেছে দেখলাম ঐ আন্ধারগলিতে ঢুকতাছে।

যাইহোক সোহান শেষে একটি ইয়ো ইয়ো টাইপের ছেলেকে জিজ্ঞাসা করতেই ছেলেটি মুচকি হেসে বললো এই তো সামনেই আমি যাচ্ছি সেখানে। সোহানও মুচকি হেসে বলে থ্যাঙ্কস।

সোহান ক্যাভওয়েতে যেয়ে কোথায় কিভাবে চেয়ার বসানো হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। টেবিলের সাথে চেয়ারগুলো জোড়া দেয়া যেন লোডশেডিংএর সময় কেউ এক দুটো চেয়ার চুরি করে নিয়ে যেতে না পারে। প্রতিটি টেবিলের সাথে বেয়াক্কলের মত চারটে করে সিট দেয়া। সোহান ধৈর্যচ্যুত হয়ে আরেকবার সার্চ করতে যেয়ে দেখে এক কোনায় প্রায় দেখা যায়না সেখনে দুটো চেয়ার আছে। সোহান দ্রুত যেয়ে দখল নেয়। একটি চেয়ারে সোহান আরেকটি চেয়ারে আফসানা বসবে। সোহান নির্ভার হয়ে  কানে হেডফোন গুজে দেয়। হালকা মাথাও নাড়াতে থাকে ছন্দে আনন্দে।

আফসানা ফোন দেয়।
সোহানঃ হ্যালো
কোথায়?
গুহা গলিতে
আমিও তো
সোহান হাত তুলে বলতে থাকে মোবাইলে এইযে আমি এইযে
হাত দেখে আফসানা এগিয়ে আসে।
কি? আমি কি একা আসছি যে তুমি দুই সিট নিয়ে বসে আছো?
সোহান বুকে পাথর চাপা দিয়ে মুখের পেশীতে অভার লোড দিয়ে কৃত্রিম হাসি সৃষ্টি করে।

চল চল ঐ চেয়ারে বসি। চেয়ারে বসেই এক আধটু কথা বলেই সোহান নিজে উঠে যেয়ে বিভিন্য খাবার অর্ডার দিতে থাকে ‘যত খাবার তত দেরি তত আড্ডা তত নৈকট্য হাসিল’ কৌশলে।

খাবারের নমুনা দেখে আফসানা মুচকি হাসে আর মনে মনে বলে হায়রে পাগল কবে পাগলামি থামাবে। আফসানা রিমিকে বলে এটা খা রিমি নিজে খায় অন্যটা। রিমি বুজতে পারে। সোহান বকবক করতেই থাকে।বকবক করতে যেয়ে ওয়ান টাইম গ্লাসে কোক ঢালতে যেয়ে টেবিলে ঢেলে দেয়। আফসানা হেসে উঠে।
জনাব সাবধানে।
সোহান লাজুক হাসি দিয়ে বলে
গ্লাসটা ফাজিল আমি কোক ঢালতে যাচ্ছি বুজতে পেরেই সরে গেল। দাড়াও কোক খাওয়া শেষে গ্লাসটাকে আচ্ছা করে মোচড়াবো।
ওর কথা শুনেই রিমি আর আফসানা হেসে উঠে। ওদের হাসিতে সোহান খুশি হয়।  যাক আমার একটি কথায় আফসানা বেশ করে হাসলো। প্রেম আড্ডায় নিজের ময়নাকে একটু মজার একটু চটুল কৌতুক বলে হাসাতে না পারলে কি হয়।

আফসানা হেসে একটু হালকা হয়। মনে মনে বলে সোহান তুমি মনে মনে কেন মিসরি খাচ্ছ।কোন লাভ নেই বন্ধু লাভ নেই।
কৌশলে দুই বান্ধবী দ্রুত খাওয়া অধ্যায় শেষ করে। সোহান বলে এই রিমি তুমি এটাতো খাওনি আফসানা তুমিও কিন্তু এটা ছুওনি। আফসানা বলে
এই তুমি জানোনা আমি কি খাই কি খাইনা?
সোহান কিছু বলেনা যদি সে বলে না আমি জানিনা তাতে প্রেমিকত্বের পুরুত্তে ঘাটতি হিশেবে দেখা হতে পারে।

এবার রিমি ওর মোবাইলটা টেবিলের নিচে ধরে কৌশলে আফসানাকে কল দেয়। আফসানা কল রিসিভ করে বলে
হা আম্মু আমি এখনি আস্তাছি কি তুমি খালা মনির বাসায় যাবে? এইসব বলে আফসানা ফোন কেটে দেয়।

আফসানা তার ব্যাগ থেকে কয়েকটি বই বেড় করে বলে সোহান তুমি বইগুলো লাইব্রেরীতে জমা দিয়ে দিও। আর আমি এখন উঠি মা যেতে বলেছে।  খালা মনির শরীর খারাপ।  মা দেখতে যাবে। আর হা সোহান আমি তোমাকে সন্ধ্যায় ফোন দিবো কেমন।
সোহান হতাশ হয়ে যায় কিন্তু কি বলবে ভেবে পায়না। বইগুলো হাতে নিয়ে বলে ওকে জমা দিয়ে দিবো। যখন শুনে যে সন্ধ্যায় আফসানা নিজে ওকে ফোন দিবে তখন সে কিছুটা শান্তনা খুজে পাওয়ার চেষ্টা করে।

*
আফসানা বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে উথতেই দেখে সিঁড়ির ধাপে আকিব বসে আছে। ওর এক হাতে একটি ছোট্ট কিউট বিড়ালের বাচ্চা আর অন্য হাত দিয়ে সে বাচ্চাটাকে আদর করছে।

কি আকিব এখানে বসে কেন? ঘরে জাওনা কেন? পুশিটা তো অনেক কিউট।
প্রথম দুই প্রশ্নে আকিবের দুই চোখে জল জমে উঠে।  শেষের প্রশ্নে সে সাহস পায় খুশি হয়।

সে সব খুলে বলে আপুকে। আপু হেসে বলে তো আকিব তোকে তাহলে আমাকে উদ্ধার করতে হবে তাইনা। শুনো তুমি এখানে দাড়াও আমি কলিং বেল বাজাই। আমি নিজে ঘরে ঢুকে তোকে ধুকাবো। তুই ঘরে ঢুকেই বিড়ালটা নিয়ে বারান্দায় চলে যাবি। সেখানে বিড়ালটাকে দড়ি দিয়ে বেধে রাখবি। আমি ওকে খাবার দিবো। তুই আম্মুকে এখন বিড়ালের ব্যাপারে কিছু বলবি না।

আপাতত আকিবের ভাগ্যটা ভালোই। আম্মু আমের আচার বানানোই ব্যাস্ত। তাই আকিবের বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে কোন রুপ উত্তম মাধ্যমের ব্যাবস্থা করতে অপারগ হয়ে আছে।

আফসানা মায়ের সাথে কাঁচা আমে মাল মসলা তেল দেয়ায় ব্যাস্ত হয়ে পরে।

বারান্দায় ছোট একটা পাওয়ার সেভিং লাইট জলছে। গ্রিল দিয়ে বাইরে তাকালেই চাঁদটাকে দেখা যাচ্ছে।
আজকের চাঁদটা মোটেও হিজাব পড়া নয় পুরো খুললাম খোলা। চাঁদের সাইজটা হবে আকিব যেই প্লেটটায় খায় তার থেকে দেড় দুই ইঞ্চি বড়।

আকিবের হাতে তুলি। ছোট ছোট কৌটায় হলুদ কাল রং। আকিব হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে রঙ্গে মাখামাখি। পরিষ্কার করা দরকার। মনে মনে কি সব ভাবতে ভাবতে সে ভেসিনের দিকে এগিয়ে যায়। ভেসিনটা ডাইনিং রুমে। ডাইনিং রুমে ঢুকতেই পরবি তো পর বাঘের মুখে। ওর আব্বু হাতের অবস্থা দেখে বলে
কি আকিব পড়াশুনা বাদ দিয়ে কি করছো?
হটাত আব্বুকে দেখে আকিব চমকে যায়। ভয়ে বলে ফেলে ‘বিড়াল’।
বাবাঃ বিড়াল মানে?
আকিবঃবিড়াল বারান্দায় আছে
কথা শুনে মা ও আফাসানা ডাইনিং রুমে আসে।
বারান্দায় বিড়াল!  বিড়াল তুমি কোথায় পেলে?
বিড়ালের কথা শুনেই মা বলে উঠে
এই ফাজিল ছেলে আমার ঘরে এইসব আনা মানা তুমি জানো না? নিয়ে আসো বিড়াল আর তোমার হাতে রং কেন?

এতো প্রশ্ন থেকে বাচতে আকিব দ্রুত বিড়াল আনতে বারান্দায় যায়। বিড়ালটা ডাইনিং রুমে নিয়ে আসে।

বাবা মা দেখে একটা বিড়ালের বাচ্চা যার গায়ে হলুদ কালো সাদা রং করা।
বাবা মা আফসানা সবায় এই অবস্থা দেখে চমকে যায়।

মাঃ এই সব রং কেন আকিব?
আকিবঃ আমি পুশিটাকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বানিয়েছি।
বাবা প্রচণ্ড রেগে যেয়ে
এই আবর্জনাকে এখনি ফেলে আসো।
এবার আফসানা ভাইয়ের পক্ষে যায়।
এই রাতে আকিব কোথায় বিড়ালটাকে ফেলতে যাবে?
বাবা আরও রেগে যায় ফাজিল ছেলে সারাক্ষন দুষ্টামি বাঁদরামি যেখান থেকে এনেছ সেখানে ফেলে আসো।

মা দেখতেই থাকে হলুদ কালো সাদা রঙ্গের বিড়ালটাকে। মা মুখ খুলে এই বলে
বিড়ালটাকে পুরা সার্কাসের জোকার বানিয়ে ফেলেছে।
আকিব মিনমিনে কণ্ঠে প্রতীবাদ করে
পুষিটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
ওর কথা শুনে মা হেসে দেয়
ফাজিল ছেলে সে স্কুলের রং তুলি দিয়ে বিড়ালকে বাঘ বানায় বাঘ।

বাবা মায়ের সাথে তাল দেয়
বাঘ না জোকার হয়েছে।
এই কথায় মা আবার হাসে বাবাও তখন মায়ের সাথে হাসিতে হাজিরা দেয়। এই হাসিতে আকিব আফসানা সুযোগ দেখতে পায়। বাবা হাসি থামিয়ে বলে
ঠিক আছে এখন রাত হয়েছে রাখ বিড়ালটাকে।  আফসানা বিড়ালটার গা কাপড় দিয়ে মুছে কিছু খেতে দাও।

আফসানা আকিবের মুখে হাসি ফুটে উঠে কিন্তু ওদের হাসি দেখেই মা বলে বিড়ালটা কাল সকাল পর্যন্ত এই বাসায় আছে।  তোমার বাবা যেন সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে বিড়ালটা না দেখতে পায়।

এই কথা শুনে আকিব অসহায় ভাবে বোনের দিকে তাকায়। আফসানা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে তার ডান  হাতটা ছোট ভাইটার মাথায় রাখে। বোনের হাতের ছোঁয়ায় আবেগের ফারাক্কা বাঁধ ভেঙ্গে  ছোট্ট মানুষটার চোখ থেকে একটা পানির ধারা বেড় হয়ে আসে। বাবা মা দুই ভাই বোনের এই দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকে।

 

You may also like...

Read previous post:
শূণ্যতা – ১

চকচকে কালো পিচ, সূর্যটা জ্বেলে হাতরে খুঁজি চেনা রাস্তার নাম। কিছু মানুষ, কিছু মুখোশ, কিছু শুকনো পাতার ভিড়ে আমি খুঁজে...

Close