ভেজা বেড়াল The Love Cat  

হাটতে হাটতে অবশেষে প্রীতম শিব বাড়ী ব্যাচেলর স্টাফ কোয়াটারের গেটের সামনে এসে দাড়ায়। দাড়িয়েই গেট দিয়ে ওর মাথাটা ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু সে কোয়াটারের দেয়াল ভেদ করে রুমের ভিতরের কিছু দেখতে পায়না আর দেখতে পাওয়াটাও খুব সুন্দর কিছু হতনা কারন একটি রুমে এক জোড়া ছেলে মেয়ে যেন ম্যাসাজ পার্লার খুলে বসেছে আরেকটি রুমে বাচ্চা ছেলেটি খাটের উপর বসে বালটিতে বমি করছে  আর পাশে দাড়িয়ে তার বাবা তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। প্রীতম আরেকটু উকিঝুকি দিয়েই পকেট থেকে মোবাইলখানা বেড় করে হনহন করে টিএসসি’র দিকে হাটা দেয়।

শাহেদঃ কিরে ওয়ালটন প্রীতম
প্রীতমঃ ঐ শাহেদ একটু টিএসসি’তে আয়তো
শাহেদঃ তুই আমার কোয়াটারে আয়
প্রীতমঃ ধুর বেটা তোর কোয়াটারে উকি দিয়েই আসলাম। আয় তাড়াতাড়ি কথা আছে।টিএসসি

মিঃওয়ালটন প্রীতম জরুরী তলব কেন?
শালা ওয়ালটন ওয়ালটন মারছ কেন?
সিঙ্গার প্রীতমের সাথে তোমার দিল কা রিস্তা তাই। আসল কথা হল দুই দুইটা প্রীতম, মানুষ বুজবো কি করে বল,তাই আরকি। আর তা ছাড়া ও বিদেশি মাল টানে আর তুই হালায় কিনা যশোরে আমাগো ভাং খাওয়ালি। তোরে দেশি মাল ওয়ালটন কমু নাতো ফরেইন কমু।

হইছে হইছে চা বিড়ি বিস্কুট কেক খাইলে খা।
একটা একটা না সব?
বাবা রাক্ষস তোমার যাহা যাহা মন চাহে
তো কি খবর বাহে?
বিলাই সরি একটা বিড়াল (গলা খাঁকারি দেয় প্রীতম)
বিড়াল হট ক্যাট কোনটারে ঐ যে ঐ আরঅয়ান ফাইভের সাথেরটা? (শাহেদ টিএসসি’র সামনে দাড় করানো হুন্ডাগুলোর একটির দিকে ইশারা দিয়ে বলে)
আরে ধুর বাল
BAL Bangladesh Awami League

প্রীতম ফাজলামো এড়িয়ে মুল কথায় যায়।
আফসানা আমাকে একটা বিলাই সরি বিড়াল দিবো।
মানুষের জিএফ দেয় ফুল এরপর কিস আর তোর আফসানা দিবো বিলাই! বিলাতি?
নাহ! দেশি। নেড়ি কুত্তা আছেনা অমন নেড়ি বিড়াল।
তো?
তুই তোর মেসে রাখবি
আমার মেস চিড়িয়াখানা না, তোর বাসায় রাখ
না আমার মা বিড়াল খালি না কোন পোষা প্রানি লাইক করেনা।তোর বিড়াল পালার অভিজ্ঞতা আছে?

ঐ হালা বিয়া করতে অভিজ্ঞতা লাগেনা আর তুই বিলাই পালতে অভিজ্ঞতা খুজস! যাইহোক আজকে তুই প্রথমবার বিড়ি খাওয়ালি তোর হা তে হা না তে না মেলানো আমার উপর ফরজ ওয়াজিব সুন্নত সব।
হ ক আমি যে কাইস্টা তাও ক। শুন কাজের কথায় আসি। বিড়াল তো তোদের মেসে আছেই?
হুম আছে সেলিমের আছে রতনের আছে আর বাকি বিড়ালগুলোর মালিকানা এজমালি। সব বিড়ালই ভালো তবে একটা বিড়াল ধুর হালায় বিলাই আছে ওর নাম দিছি তারেক। শালায় বাইরে থিকা জানি কি সব খাইয়া আসে এরপর আর ঘরে কিছু খায়না। ঘরে যদি তুই দুধ সাদস তাহলে সে খাবে। ঘরে খাটি জিনিস চায় বাইরে আরেক জিনিস চালায়।

শাহেদ তুই মানুষ আর বিড়ালের চরিত্র একসাথে মিলিয়ে ফেলতাছস মনে হয়।
হ মিলাম্না বিড়াল হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের সাথে আছে একটু মানুষের ভাব অগো মাঝে আইতেই পারে।

তারপর প্রীতম একটা নাতিপুতি দীর্ঘ নির্দেশিকা মূলক খুতবা দেয় শাহেদকে।
হইছে চুপ মার শালা। কাল সকাল ৯টায় আমি তোকে আমার সরি আমাদের বিড়ালটা বুঝিয়ে দিবো। ওকে তুই সকালে মিল্ক ভিটার দুধ সাথে দুই চামচ হরলিক্স মিক্স করে দিবি। দুপুরে দুধে হরলিক্সের হরলিক্স বিস্কুট হকের হরলিক্স বিস্কুট না আবার বুজলি তো চেটকাইয়া দিবি, দেয়ার আগে লিকুইড লাইফবয় দিয়া তোর ইয়েতির মত এই রোমশ হাত মোবারকটা ধুয়ে নিবি আর রাতে অল্প ভাতের সাথে ছোট্ট একটা মাছ।  মামা মাছ মাছ কিন্তু কাঁটা না বুজলা। ও কিন্তু বিলাই না সরি বিড়াল না ও হল লাভ ক্যাট ঐযে লাভবার্ড আছেনা ঐরকম।

ওয়ালটন মামা তুই যা তোর লাভক্যাটের ম্যানু কইলি হেই ম্যানু আমার ম্যানুর সাথে চ্যাঞ্জ করলে তুই মাইন্ড খাবি? এই সপ্তাহে দুই দিন মাসে এক সপ্তাহ বছরে ৪ মাস। মা কালির দিব্যি আমি ঐ ম্যানুতে সাবু’র মত পালোয়ান হয়ে যাবো। (চাচা চৌধুরীর সাবু)

চুপ শোন টাকা পয়সা হাগি (Hagi/Haji/হাজী) সাব দিবো। হাগি সাব মানে Me  and My self আমি নিজে দিমু খালি তুই একটু যত্ন নিবি।

বিড়ি খাওয়াবিনা আমারে ওয়ালটন?
কোন ব্র্যান্ডের? নো প্রবলেম। খালি আখেরি একটাই কথা তোরে দিয়া যামু বিড়ালের বাচ্চা তুই আমারে ফেরত দিবি বাঘের বাচ্চা।

হ ওয়ালটন তুই যা ম্যানু কলি তাতো ঢাকা চিড়িয়াখানার বাঘের বাচ্চারা দুঃস্বপ্নেও দেখেনা।এক সময় ঐ বাঘের বাচ্চাগুলিতে পুষ্টিহীন হয়ে তোর অতিপুষ্টির বিলাইয়ের সামনে খারাইতে শেইম খাইবো কসম।

ওকে যাই দোস্ত আমার লাভক্যাট তোর কাছে আমার পবিত্র আমানত থাকবো।
শাহেদ আস্তে আস্তে বলে ওয়ালটন আমি তোর ঐ লাভক্যাটরে আফসানা মনে করেই পালুম ডোন্ট ওয়ারী।
প্রীতম বুঝে শাহেদ টিটকারি দিয়েছে তাকে।

লাভক্যাট

আকিব ব্যাডরুম থেকে উকি দিয়ে মাকে খুজে। পা টিপে টিপে আকিব রান্না ঘরে উকি দিয়ে দেখে মা রান্নাবান্নায় ব্যাস্ত। আকিব মাকে দেখে আবার পা টিপেটিপে দরজার সামনে আসে। দরজাটা অনেক কৌশল করে খুলে যাতে কোন আওয়াজ না হয়।
আকিবের আজ ক্লাস হাফ হলেও পেট ব্যাথার কথা বলে ফাকি দিয়েছে। এখন সে হাউজিংয়ের ছোট্ট মাঠে অন্যদের সাথে দৌড়ঝাঁপ করবে। সে মাঠে এসে দেখে মাঠে কেউ নেই। দূরে রাস্তার একেবারে কিনারে ছেলেদের একটা জটলা। সে এগিয়ে যায়। কাছে যেতেই দেখে মাহিনের হাতে একটা রশি সেই রশিতে বাধা একটা বিড়ালের বাচ্চা। বিড়ালটাকে বেশ মনোযোগ দিয়ে মাহিন ড্রেনের পানিতে একবার ডুবায় আবার টেনে তুলে। বাকিরা খুব গভীর দৃষ্টি নিয়ে তা পর্যবেক্ষণ করছে। আকিব বলে
এই তোমরা বিড়াল নিয়ে কি করছ?

সবায় আকিবের আওয়াজে আকিবের দিকে একসাথে তাকায়। আকিব ওদের একসাথে তাকানোতে একটু ভয় পায়। এবার মাহিন কথা বলে।

মাহিনঃ বিড়ালটাকে সাতার শিখাচ্ছি।
আকিবঃ তাই?
মাহিনঃ ও সাতার শিখে ইংলিশ চ্যানেল পার হবে।
আকিবঃ ইংলিশ চ্যানেল কি?
মাহিনঃ (দুই হাত ছড়িয়ে দেখায়) অনেক বড় নদী সমুদ্রের মত বড়। আমার মামা বলেছে ইংলিশ চ্যানেল বড়যেন দাস পার হয়েছে। আমার এই বিড়ালও ইংলিশ চ্যানেল পার হবে।
আকিবঃ ওর কি কোন নাম আছে?
মাহিনঃ নাহ!  ইংলিশ চ্যানেল পার হলে তো কত মানুষ জিজ্ঞাসা করবে বিড়ালটার নাম কি। কি নাম রাখা যায় বলতো?
আকিবঃ কেএফসি রাখি। আকিব গতকাল রাতে বাসার সবার সাথে কেএফসি থেকে ঘুরে আসায় কেএফসি’র নামটা ওর ছোট্ট মাথা থেকে যায়নাই।
মাহিনঃ কেএফসি কেন?

বিড়ালটার নাম রাখতে যেয়ে বাচ্চারা বেচারা বিড়ালের কথাই ভুলে যায়। বিড়ালের বাচ্চাটা রাস্তার একটি পাশ খামচে ধরে ড্রেনের পানিতে পরে যাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে টারজানের মত ঝুলে থাকে।

অন্য বাচ্চারা কেএফসি নামটা শুনে হাততালি দিয়ে উঠে কেউউ মাহিনের প্রশ্ন খেয়াল করেনা। একজন বলে কেএফসি আমার ভালো লাগে। আবার একজন বলে কেএফসি আমিও চিনি।

এমন সময় মাহিনের মনে পড়ে যে বাসায় ওকে বকা দিবে আম্মু।
মাহিনঃ এই আমি যাই দেরি করলে আম্মু বকবে। এই কথা বলেই মাহিন বিড়ালের  রশি ছেড়ে দিয়েই দৌর।
এর মাঝে আকিব রশিটা ওর হাতে নিয়ে নেয়। এটা দেখে টিনা বলে এই আকিব তুমি কি বিড়াল নেবে?
আকিবের এবার খেয়াল হয় তাইতো বিড়ালটা তো নেয়া যায়। আকিব বলে হা আমি নিবো।
এমন সময় নিয়ন সহ আরও অন্যরা বলে না আমি নেব আমি নেবো। কেউ বলে আকিব কেন নিবে অতো একটুও কেএফসি’কে সাতার শেখায় নাই। টিনা বলে আচ্ছা আমি অবু দশ বিশ বলি ঠিক আছে। সবায় টিনার কথা মেনে নেয়। টিনা বলতে থাকে অবু দশ বিশ ত্রিশ চল্লিস পঞ্চাশ ষাট সত্তর।

যে সত্তর হয় সে চিৎকার দিয়ে বলে আমি নেবো আমি নিবো কেএফসি’কে। টিনা বলে না তুমি বাদ হয়ে গিয়েছো। সত্তরের চোখ পানিতে হটাত টলটল করতে থাকে। টিনা আবার বলতে থাকে অবু দশ বিশ ত্রিশ চল্লিস………………………
শেষ পর্যন্ত টিনাই জেতে। আকিব কি বলবে ভেবে পায়না অবু দশ বিশ অনুযায়ী টিনা না পেলে বিড়ালটা আকিব নিজে পায়। টিনা মুখ খুলে
আমি বিড়ালটা নিবো না বিড়ালটা যদি আমার টিয়া পাখিটা খেয়ে ফেলে।

আকিব বাসার সামনে এসেই বিড়াল হাতে বিড়াল হয়ে যায়। মা বকবে বিড়াল দেখলে। ও আস্তে করে দরজা ধাক্কা দেয় দেখে দরজা বন্ধ। ও আবার আস্তে করে ধাক্কা দেয়। দরজা আস্তে কি জোরে যেভাবেই ধাক্কা দিক আকিবের আম্মু যদি দরজা খুলে তাহলে আকিবের আজকের দিনটা যাবে কেঁদেকেটে।

আর সন্ধ্যায় আব্বু আসলে আব্বুর মন ভালো থাকলে আকিব বাবার সব থেকে বেশী দৃষ্টি ও আদর পেতে নানা কৌশল করবে এই কাঁদবে আওয়াজ করে আবার আব্বুর সামনে দিয়ে বারবার যাবে কিন্তু আব্বুর হাতে ধরা দিবেনা। আব্বু তখন ডাকতে থাকবে আমার আকিব বাবা কোথায় রে আমার আকিব বাবার চোখে পানি কেন রে। এই বাপ বেটার আহ্লাদ যুদ্ধ চলবে  বাবুর চোখে ঘুম দিয়ে যা পর্যন্ত। আর যদি আব্বুর মেজাজ খারাপ থাকে তাহলে আফসানা আপুর পিছনে লুকিয়েই ওর রাতটা কাটাতে হবে।

The Cave Way গুহা গলি

চলবে

You may also like...

Read previous post:
মন

পৃথিবীতে কোন কিছুই কঠিন না, কঠিন শুধু মানুষের মন আর বাস্তবতা । তাই বাস্তবতা কে মেনে নিয়ে  মানুষকে বুজলেই হবে,...

Close