স্লিপিং প্যালেস

২২৩২ সাল

 

বিশ্বের বিখ্যাত ধনকুবের রায়ান সোবহানের বাড়ীর ডাইনিং রুম। উপস্থিত পৃথিবীর বিখ্যাত ৫০০ জন মানুষ। অতিথিদের উদ্যেশে রায়ান সোবহান বলছে।

 

আপনাদের সবায়কে ধন্যবাদ। আপনারা আমার ছেলে প্রিট ও মেয়ের মত পুত্রবধূ নিসের বৌভাতে এসেছেন।আমি জানি আপনারা আমার পুত্র ও পুত্রবধূর জন্য আপনাদের সর্বোচ্চ মুল্যবান উপহার নিয়ে এসেছেন কিন্তু আজ এই আনন্দখনে আমি উপহার দিবো পুরো বিশ্বকে। আর সেই উপহার আপনারা ৫০০ জন সম্মানিত অতিথি সবার আগে তা দেখতে পাবেন এবং নিজেদেরকে অন্যদের থেকে বেশী ভাগ্যবান ও সম্মানিত মনে করবেন। আপনারা সবায় চেয়ারে এসে বসে পরুন যারা দাড়িয়ে আছেন।

 

সবায় বসে পড়লে। চেয়ার থেকে অটোমেটিক বেল্ট এসে সবায়কে নিরাপত্তায় বেধে ফেলে।

 

কিছুক্ষন পরেই আমন্ত্রিত অতিথিরা দেখতে পায়, ঘর ঘরের সাজ সজ্জা আসবাব পত্র সব বদলে যাচ্ছে।

 

এমন সময় রায়ান সোবহানের কণ্ঠ শোনা যায়ঃ আপনারা যেখানে বসে আছেন বসে থাকুন প্লীজ। আর আপনারা কি এখন কি ভাবছেন আপনারা এখন কোথায়?

 

অবশ্যয় আপনারা কেউ আর আমার ডাইনিং রুমে নেই আপনারা সবায় এসে পড়েছেন কারমেল প্যালেসে। হা সেই ঐতিহাসিক রহস্যময় কারমেল প্রাসাদ।

 

২০১৪ সাল

 

সেনা বাহিনীর একটি অফিসে সেনা কর্মকর্তাদের সাথে বিখ্যাত গবেষণাগার ও ঔষধ কোম্পানির মালিক নিলয় তুহিনের কথা হচ্ছে।

 

সরকার নির্বাচিত হচ্ছে গণতান্ত্রিক ভাবে, জনগণের ভোটে। রাষ্ট্রের প্রধান হচ্ছে রাজা বা রানি তাদের রাখা হয়েছে কখন যদি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যাবস্থা ব্যর্থ হয় তখন আবার রাজা বা রানি রাষ্ট্রের হাল ধরবে।এই দিকে সমাজতন্ত্র ব্যর্থ তা প্রমানিত। গণতন্ত্র খুড়িয়ে হাঁটছে। আর সেকেলে রাজা বা রানি আশায় আশায় থাকবে কখন গরু মরে যাবে। যাইহোক পৃথিবী এখন শাসিত হবে সেনাদের দারা সেনারা দশ বিশজন বেসামরিক মানুষকে সামনে রেখে বিজ্ঞান ভিত্তিক শাসনকাজ পরিচালনা করবে। রাষ্ট্র সমাজ ও জনগণের কল্যাণে।

 

নিলয় তুহিন আপনি রাজপ্রাসাদে যখন মন্ত্রী পরিষদের মিটিং হবে সেই সময়ে গ্যাস দিয়ে সবায়কে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঘুমে পাঠিয়ে দিবেন। গ্যাস যাবে এসির পাইপ ও বিদ্যুতের তার যেই পাইপের ভিতরে সেই পাইপ দিয়ে।

 

নিলয় তুহিন বুজতে পারে তার জন্য কোন বিকল্প নেই। তিনি যদি সেনাদের কথা অনুযায়ী কাজ করেন তাহলে কাজ শেষে, সকালে তাকে মেরে ফেলে, কাগজে রেদিওতে টিভিতে ইন্টারনেটে ঢালাও প্রচার করা হবে, নিলয় তুহিন ক্ষমতা দখলের উদ্যেশে কারমেল প্রাসাদে জীবাণু আক্রমণ করেছেন। এবং দেশপ্রেমিক সেনা বাহিনী নিলয় তুহিনকে হত্যা করতে পারলেও প্রাসাদের কাউকে বাচাতে পারেনি। এবং প্রাসাদ এখন নিরাপদ নয় সাথে সাথে প্রাসাদ থেকে যদি সেই জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে তাহলে এই শহরের একজন মানুষ ও বচবেনা। তাই সেনা বাহিনী ও জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থা প্রাসাদ ও তার আশেপাশের বৃহৎ এলাকা সাধারনের জন্য নিসিধ্য করে চারিদিকে সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছে। সেনা বাহিনী ও জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থা নাগরিকদের কল্যাণে পুরো এলাকা সিলগালা করে দিয়েছে।

 

আর যদি নিলয় তুহিন সেনাদের কথা না শুনেন তাহলে তার পরিবারের এক এক সদস্য কেউ এক্সিদ্যান্তে, কেউ অবৈধ কাজের অভিযোগে, কেউ পাগল হয়ে মারা যেতে থাকবে। আর রাষ্ট্র দ্রোহ অভিযোগ তো দারিয়েয় আছে। নাহ নিলয় তুহিন পৃথিবীর সব চেয়ে হতভাগ্য লোক।

 

২২১৪ সাল

 

রায়ান সোবহানের ছেলে প্রিট রায়ান সোবহান। প্রিটের বয়স মাত্র বিশ। সে তাদের কোম্পানির প্রধান বৈজ্ঞানিকের সহকারী তরুণ বিজ্ঞানি আবির হায়াতের সাথে মিলে ব্যাক্তিগত টাইম ম্যাশিনের ব্যাপক উন্নতি করেছে। সে টাইম ম্যাসিনে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। প্রিট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নাম দেয় প্রমিথিউস।

 

কোন এক রাতে কাউকে না জানিয়ে প্রিট সময় ভ্রমণে যাওয়ার কথা বললে আবির নিষেধ করে।

 

প্রিটঃ তুমি কি ভয় পাচ্ছ?

আবিরঃ ভয় পাচ্ছিনা তবে আমি আমার সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না।

প্রিটঃ সময় নষ্ট হওয়ার কি আছে! আবিস্কারের জন্য সাহসী হও!

আবিরঃ না সম্ভব নয়। আমরা সময় ভ্রমণে হারিয়ে গেলে প্রম আমাদের কেন্দ্রে বার্তা পাঠাতে সক্ষম হলেও আমরা আমাদের চলমান বর্তমানকে হারিয়ে ফেলতে পারি।

প্রিটঃ তুমি তোমার বান্ধবীর জন্য যেতে ছাইছ না?

আবিরঃ ( ভয় পায় প্রিটের কথায় ) না মানে তা নয়

প্রিটঃ (চিবিয়ে চিবিয়ে বলে) তাহলে আমরা তোমার বান্ধবীকে নিয়ে যাই আমাদের সময় ভ্রমণে? তাতে আমাদের একজন সঙ্গী বাড়ে তাও নারী। আমরা যদি সুদূর অতিতে যাই তুমি ও তোমার বান্ধবীর সন্তান হবে সেই সময়ের কোন দেবতা দেবী বা প্রেরিত পুরুষ। আর হা আমি কিন্তু পদ্মলোচন হব না নিশ্চিত।

আবিরঃ (আতঙ্কে চিৎকার দিয়ে বলে) না প্লীজ না। ও থাকুক। আমি যাচ্ছি তোমার সাথে।

প্রিটঃ (মুচকি হেসে) ঠিক আছে আমি জানি তুমি দায়িত্বশীল। তবে সভ্যতার জন্য সাহসী মানুষের খুব দরকার। তুমি সাহসীও আমি তা জানি।

 

প্রিট ও আবির প্রমিথিউস নামের সময় যন্ত্রের ঘাড়ে চড়ে বসে।

প্রিটঃ (নির্দেশ দেয়) প্রিয় ‘প্রম’ আমাকে আমার বন্ধু আবির ও মানব সভ্যতাকে চমকে দিতে তুমি সামনে বা পিছনে সফর করা শুরু কর দয়া করে।

 

আশেপাসের সব কিছু যেন ঘুরতে শুরু করে দিয়ে নিমেসে ধুয়া বা কুয়াশায় পরিণত হল। প্রিট আর আবিরের শিরদাঁড়া দিয়ে যেন হিম শিতল একটি স্রোত বয়ে গেল। ওরা জানেনা এই ধুয়া বা কুয়াশা কখন দূর হবে।

 

হটাত একটা ঝাকুনি তারপর ওরা কিছু একটা যেন দেখতে পেল। সময় যন্ত্রের দেয়াল তিনটে ভাগে পদ্মের পাতার মত তিন দিকে ছড়িয়ে পড়লো। প্রিট প্রমের থেকে কিছু আশা করলো। কিন্তু প্রম কিছুই বললো না।

 

প্রমের আচরণ মানুষের মতই হেঁয়ালি মনে হল প্রিটের কাছে। প্রিট মনে মনে বলল প্রম মানুষের চেয়েও অসাধারন।

 

প্রিটঃ আবির দেখতো কি

আবির ও প্রিট এক সাথেই কদম বাড়ায়। ওরা অবাক হয়ে দেখে একটি সেমিনার হলে এসে পড়েছে। বক্তার পোশাক দেখে মনে হচ্ছে সে কোন এক সময়ের রানি। এবং শ্রোতারা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছে।

 

রানি দাড়িয়ে আছে তার একটি হাত উপরে তুলে বিশেষ ভঙ্গিমায়। সবায় যেন অদ্ভুত মূর্তি। কোন নড়াচড়া নেই। প্রিট ও আবির রানির টেবিলের সামনে যেয়ে টেবিলের উপর রাখা ফাইল তুলে নেয়।

ফাইল পড়ে প্রিটের শরীরও যেন কনফারেন্স রুমের অন্যদের মত পাথর বা স্থির হয়ে পড়েছে। প্রিট নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বলে-

আবির আমরা ২০১৪ সালের কারমেল প্রাসাদের শেষ মিটিঙে উপস্থিত হয়েছি।

 

প্রম এবার প্রিট ও আবিরকে জানায় যে কোন পরিস্থিতির জন্য তৈরি হও। তোমরা দ্রুত আরও কিছু কামরা ঘুরে নাও মনে রেখ খুব দ্রুত। সময় বেশী নেই কারন আমি ওদের সবাইকে জাগাতে বাধ্য।

ওরা একের পর এক কামরায় ঘুরতে থাকে যাতে যে কোন পরিস্থিতিতে ওরা দ্রুততম সময়ে সব চেয়ে সঠিক সিধান্ত নিতে পারে।

 

ওরা একটি রুমে যেয়ে দেখে রাজকুমারীকে। রাজকুমারী শুয়ে আছে বিছানায়। প্রম প্রিট ও আবিরের ডিভাইস স্যুটের মাধ্যমে স্ক্যানিং করে বলে

প্রিট ও আবির তোমাদের এই রুমেই ফিরে আসতে হবে অন্য ঘরগুলো দেখে কারন রাজকুমারী গর্ভবতী। আমি আর কিছুক্ষন পরেই জাগিয়ে দেব সবাইকে, দ্রুত।

 

মহলের মাঝ খানে ফাঁকা তাই মহলের যত উপরে উঠবে নিচের দিক পরিষ্কার হবে। প্রিট ও আবির তিন তলায় দাড়িয়ে নিচতলা আর দোতলার যতটুকু দেখা যেতে পারে চেষ্টা করছে।

 

প্রমঃ ৯ ৮ ৭ ৬ ৫ ৪ ৩ ২ ১ ০

 

হটাত যেন মহলের প্রতিটি ঘুমন্ত শরীরে বিদ্যুত বয়ে গেল। ওরা দেখলো মহলের এক মহিলা দাড়িয়ে দুই হাতে একটা বিড়াল আদর করার ভঙ্গিমায় ধরে ছিল শত শত বছর ধরে আর বিড়ালটিও কি মনে করে যেন কোন আওয়াজ না করেই সেই আদরের অম নিচ্ছিল সাধনা মনে করে। সেই ধ্যন, বিড়াল মুনির ভাংতেই সবার আগেই হাত থেকে ঝাপ দেয় এবং মাটিতে পড়ার আগেই বলে উঠে ম্যাও।

 

যেন সদ্যজাত শিশু মায়ের থলি থেকে বেড় হয়ে যেভাবে জানান দেয় সেইভাবেও বিড়ালটিও জানান দেয় সময় হয়েছে জেগে উঠার।

এতো দিনের পুতুলগুলো বলছে ‘হা কি যেন বলছিলাম জনাব’ ‘মহারনির জন্য স্নানের ব্যবস্থা কর’

 

শত শত কথা রাজকীয় সংযত কণ্ঠে প্রকাশ পেতে লাগলো তবে কোন গুঞ্জরন সৃষ্টি হয় না কারন সব কিছুই শতভাগ রাজকীয়।

হটাত প্রিট ও আবির দেখে কেউ একজন ধপ করে ফ্লোরে পড়ে গেল। আরেজনের নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু করলো।

 

আবির বলে উঠে প্রিট রাজকুমারীর ঘরে চল প্রাসাদের কেয়ামত শুরু হয়েছে। প্রিট ও আবির দৌড় দেয়া শুরু করতেই দেখলো কেউ একজন তিনতলা থেকে পড়ে গেল। আবির একটু গ্রিল ঘেসে যাচ্ছিল সে দেখল সেই ভদ্র মহিলা প্রথমে দুতলার গ্রিলে বারি খেয়ে নিচতলায় পড়ে গেল।

 

পানীয় সরবরাকারী যার সামান্য ভুলের জন্য রাজকীয় চাকরি চলে যেত সে কিনা কোন এক লর্ড বা ব্যারনের মাথায় লাল রঙের পানিয় ঢেলে দিল আর সেই লাল রং লর্ড না ব্যারনের মাথার চুল বেয়ে তার মূল্যবান ত্যাকজাডো স্যুট নষ্ট করে দিল। কিন্তু এখন আর তার চাকরির জন্য কেউ হুমকি হতে চাইছে না। কোন এক পুরুষ কণ্ঠে ঈশ্বরের নাম শেষবারের মত শুনা গেল। যদিও এখন স্বয়ং ঈশ্বরও তাদের ডাকে সাড়া দিতে ইচ্ছুক নয়।

 

এবার প্রিট ও আবির রাজকুমারীর কামরায় পৌঁছে গেল। রাজকুমারী চেঁচাচ্ছে আর তার আশেপাশের নারীরা তাকে ঘিরে ধরেছে। আবির ও প্রিট অবাক হয় যে সবায় তো এর মাঝে এই পৃথিবীতে বাস করার অধিকার খুইয়েছে কিন্তু এই ঘরের নারীদের ক্ষমতা মনে হয় অন্যদের থেকে বেশী।

 

প্রম বার্তা পাঠায়

যা হচ্ছে দেখতে থাকো কিছু করার চেষ্টা করবে না

একজন নারী চিৎকার দিয়ে বলে আমাদের রাজকুমারী হয়েছে রাজকুমারী। ছোট রাজকুমারী ‘চারিদিকে অনিষ্ট’ বুজতে পেরেই যেন চিৎকার দিয়ে উঠে। কেউ একজন তার নাড়ি কেটে দেয়। নাড়ি কেটে দিতেই রাজকুমারী মাতা মাতৃত্বের সম্মান নিয়ে ঢুলে পড়ে যান।

 

যেই নারীর হাতে শিশু রাজকুমারী সেই নারী এখন পর্যন্ত মহলের শেষ জীবিত প্রান। ঐ নারী প্রকৃতির দেয়া অসাধারণ শক্তি নিয়ে শিশু রাজকুমারীকে নিয়ে দরজার দিকে হাটা দেয় কিছু দূর যেয়েই সেই শেষ নারীও হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়ে। দ্রুত আবির হেটে যেয়ে হাঁটু ভাঙ্গা নারীর হাত থেকে কারমেল প্রাসাদের শেষ প্রতিনিধি রাজকুমারী নিসকে নিজের হাতে তুলে নিতেই, সেই হাঁটু ভাঙ্গা নারী দুই হাত সামনে বাড়িয়ে মাথা মাটিতে রেখে প্রথম ও শেষ বাড়ের মত রাজকুমারী নিসকে সম্মান জানায়।

You may also like...

Read previous post:
অভিশাপে লাভ ক্ষতি পর্ব ০৩ (শেষ)

নেয়ামুলের কাম বা অকাম যাই বলা হোক তা হল পুরা জেলা ঘুইরা এর কথা ওর কানে লাগানো। এই জন্যে লকেরা...

Close