ছাত্রলীগের কলংকিত ইতিহাস

কথায় কথায় শুনি ছাত্রলীগের হ্যান ইতিহাস কিংবা ত্যান ইতিহাস। ছাত্রলীগের গর্বিত সাফল্যের কথা শুনে শুনে আসলে এক ধরনের বিম্বিসা এসে গেছে। এখনকার হাতুড়েলীগকে দেখে এসব ইতিহাস আর পেটে রোচে না। আসলে আওয়ামীলীগের কোনো ইতিহাস-ই গর্বের নয়। হয় খুনের না হয় কলংকের ইতিহাস ছাড়া এদের কোনো ইতিহাস আছে বলে আমার মনে হয় না।

ছাত্রলীগের কত গর্বিত ইতিহাস নিয়ে এখন কপচানো হচ্ছে। সেইসব কপচানোর মধ্যে কেউ বলেন না ১৯৭৪ সালের ৪-ই এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা শফিউল আলম প্রধানের নেতৃত্বে সূর্যসেন হলের ৭ টি নিরীহ ছেলেকে রাতে ঘুম থেকে উঠিয়ে ওই হলের টিভি রুমে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের পর পর-ই এরা বেপোরোয়া হয়ে ওঠে। বহুদিন থেকে এদের হাতে রক্তের দাগ। বহুদিন থেকেই এরা খুনী, এরা সন্ত্রাসী। এই বড় ভাইদের দেখেই আজকের ছাত্রলীগ বেড়ে উঠেছে। এই ইতিহাসই এরা জন্মদিবে যদি এখনই এই ছাত্রলীগ কে নিষিদ্ধ সহ সকল ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা না হয়।

পুরো ঘটনা জানি চলুন-

“৪ এপ্রিল ১৯৭৪। দিবাগত রাত ১টা ২৫। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে প্রথম ২/৩ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। শফিউল আলম প্রধানের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী সূর্যসেন হলের পঞ্চম তলায় ওঠে প্রথমে ৬৩৪ নম্বর রুমের দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে কোহিনুর নাম ধরে ডাকতে থাকে। রুমের ভেতর থেকে এক ছাত্র পাশের রুমে যোগাযোগ করতে বলার পর অস্ত্রধারীরা পাশের ৬৩৫ নম্বর কক্ষের সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কাধাক্কি করতে থাকলে দরজা খুলে দেন নাজমুল হক কোহিনুর। অস্ত্রধারীদের নির্দেশমতো মাথার ওপর হাত তুলে বের হন কোহিনুরসহ ওই রুমে থাকা আরো ছাত্র। অস্ত্রধারীদের অপর একটি যায় গ্রুপ ৬৪৮ নম্বর রুমে।

ওই রুম থেকে আরও ৩ জন ছাত্রকে একই কায়দায় বের করে নামিয়ে আনতে থাকে হলের নিচে। দোতলা পর্যন্ত নামার পর অস্ত্রধারীরা ২১৫ নম্বর রুমের সামনে গিয়ে আরও ১ এক ছাত্রের খোঁজ করতে থাকলে বিপদ আঁচ করতে পেরে ওই ছাত্র জানালা ভেঙে দোতলা থেকে নিচে লাফিয়ে পড়েন। অস্ত্রধারীরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পলায়নরত ওই ছাত্রকে জানালা দিয়ে গুলি করতে থাকে। ছাত্রটি পালিয়ে যাওয়ার পর দু’রুম থেকে অস্ত্র তাক করে নিয়ে আসা ৭ সাত জন হতভাগ্য ছাত্রকে সূর্যসেন হল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় মুহসিন হলে। রাত ২টা চার মিনিট। মুহসিন হলের টিভি রুমের সামনের করিডরে ওই ৭ ছাত্রকে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। রক্তে ভেসে যায় পুরো করিডর। রাত ২টা ১১ মিনিটে গুলিবিদ্ধ ওই ছাত্ররা ছটফট করতে করতে সেখানেই প্রাণ হারান। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর অস্ত্রধারীরা ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে রাত ২টা ২৫ মিনিটে ঘটনাস্থল ছেড়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে সামান্য দূরে পুলিশ ফাঁড়ি। আর অন্যদিকে পুলিশ কন্ট্রোল রুম। অস্ত্রধারীরা হত্যাযজ্ঞ শেষ করে রাত ২টা ২৫ মিনিটে ঘটনাস্থল ছেড়ে যাওয়ার আড়াই ঘণ্টা পর ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ৭ (সাত) ছাত্রের লাশ ময়নাতদন্তের জন্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়।

মুহসিন হলে নিহত ছাত্রলীগের সেই নেতাকর্মীরা হলেন, (১) নাজমুল হক কোহিনুর, সোশিওলোজি এমএ ২য় পর্ব, গ্রাম বৈলা, রূপগঞ্জ। (২) মো. ইদ্রিস, এমকম ১ম পর্ব, ১১৫/১১৬ চক মোগলটুলী, ঢাকা। (৩) রেজওয়ানুর রব, প্রথম বর্ষ (সম্মান), সোশিওলোজি, ৩৯/২, পাঁচ ভাই ঘাট লেন, ঢাকা। (৪) সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ, প্রথম বর্ষ (সম্মান) সোশিওলোজি, ৩৪ ঠাকুর দাস লেন, বানিয়ানগর, ঢাকা। (৫) বশিরউদ্দিন আহমদ (জিন্নাহ), এমকম ১ম পর্ব, ২৯ ডিস্ট্রিলারি রোড, ঢাকা। (৬) আবুল হোসেন প্রথম বর্ষ (সম্মান) সোশিওলোজি, পাইকপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এবং (৭)) এবাদ খান, প্রথম বর্ষ (সম্মান) সোশিওলোজি, পাইকপাড়া, ধামরাই।

নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই নারকীয় ঘটনা ঘটে এবং এই হত্যাযজ্ঞে শফিউল আলম প্রধান সরাসরি জড়িত। ঘটনার ৩ দিন পর পুলিশ শফিউল আলম প্রধান, কামরুজ্জামান ওরফে কামরুল এবং মাহমুদুর রহমান ওরফে বাচ্চু নামে তিনজনকে গ্রেফতার করার পর বিচার কাজ শুরু হয়”

You may also like...

Read previous post:
ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা

দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচীর মাধ্যমে ভাগ্য পর্রিবতন...

Close