রাত কটা বাজে জানিনা, ঘড়ি দেখতেও ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে রাত মোটামুটি ভালোই গভীর। তক্ষকটা ডেকেই যাচ্ছে বিরতিহীনভাবে। কিছুক্ষন পরপর আবার দূরে কোথাও থেকে কিসের যেনো শব্দ ভেসে আসছে; শুনছি কান খাড়া করে। বুঝতে দেরি হল না যে বন্যপ্রাণিরা ডাকাডাকি করছে। ওয়াইল্ড-লাইফ সম্পর্কে আমার খুব ভালো জ্ঞান নেই। তবে যতটুকু শুনেছি এই অঞ্চলে কেন্দু বাঘ না কি যেনো একটা বাঘ জাতীয় প্রাণি আর বার্কিং ডিয়ারদের হরহামেশাই ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। আমার শিহরনের মাত্রাটা আরো বেড়ে গেল।
আপনি যখন লোকালয়ের বাইরে পাহাড়ে জঙ্গলে রাত কাটাবেন, আপনাকে প্রয়োজনীয় সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা আগে ভাগেই নিয়ে রাখতে হবে। প্রস্তুতিতে যাতে কোন প্রকারের ঘাটতি না থাকে। প্রস্তুতিতে সামান্য ঘাটতি আপনাকে বড় সমস্যায় ফেলে দিতে পারে।
আপনি যে অঞ্চলে যাচ্ছেন, চেষ্টা করবেন সে অঞ্চলের ফ্লোরা এবং ফণার উপর টুকাটাক পড়াশোনা করে যাবার। জানতে হবে, বুঝতে হবে- জানার কোন বিকল্প নেই। এডভেঞ্চারের ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞতা এবং অজ্ঞানতা আপনার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। দেখে, শুনে এবং বুঝে নিজেকে প্রকৃতির হাতে সপেঁ দিন, প্রকৃতি আপনাকে মন্দ রাখবে না; বরঞ্চ ভালোভাবেই আপ্যায়ন করবে। যে আপ্যায়নগুলো আপনার এই ক্ষুদ্র মানব জনমের একেকটা অর্জন।
যারা অভিযাত্রী, যারা এক্সপ্লোর করতে ভালোবাসেন অর্থাৎ যারা প্রকৃতিকে ভালোবাসেন তারা সাধারনত নতুন আবিষ্কার হওয়া জায়গাগুলোর ব্যাপারে তথ্য গড়পড়তাভাবে সবাইকে দিতে চান না। কারন বেশিরভাগ মানুষই প্রকৃতিকে প্রকৃতির মত থাকতে দিতে চান না। নিজেদের ব্যবহার করা জিনিসপত্রগুলো দিয়ে প্রকৃতিকে নোংরা করাটা স্বাভবিক ব্যাপার হয়ে গেছে।
প্রকৃতির মজা নিতে চান সবাই কিন্তু প্রকৃতির সাথে কেমন আচরন করতে হবে সে ব্যাপারে ধারনা খুব কম মানুষেরই আছে। এমন সব জিনিসপত্র সেখানে ফেলে রেখে আসা হয় যা শত শত বছরেও মাটির সাথে মিশবে না। এই ভয়ংকর জিনিসগুলো যদি ঐ স্থান ছেড়ে আসার আগে একসাথে করে পুড়িয়ে ফেলা হয় বা ব্যাক-প্যাকে করে নিয়ে এসে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা হয় তাহলে আর কোন সমস্যা থাকে না। এতে প্রকৃতির মজাও নেয়া গেল আর প্রকৃতিও প্রকৃতভাবে প্রকৃতির মতই থাকল।
যত যা-ই বলি, আমরা কিন্তু প্রকৃতির কাছে অসহায়। প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ কখনো সুফল বয়ে আনবে না, বয়ে আনবে শুধুই ধ্বংসযজ্ঞ।