বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণ্যতম নাম গুলোর মধ্যে রাজাকার দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী ওরফে দেইল্লা রাজাকার একটি নাম। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আজীবন ঘৃণার সঙ্গে এই নামতি স্মরণ করবে। এই দেইল্লা রাজাকার জামায়েত ইসলাম রাজনৈতিক দলের নায়েবে- আমির বা ভাইস প্রেসিডেন্ট বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধে আর ধর্ম অবমাননা দায়ে অভিযুক্ত হয়ে কারাবন্দী আছে।
দেইল্লা রাজাকার ওরফে দেলু শিকদারের জন্ম হয় ১ ফেব্রুয়ারী ১৯৪০ সালে পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী গ্রামে। পিতা ইউসুফ সাঈদী। ছোটবেলায় স্থানীয় সবার কাছে দেলোয়ার শিকদার নামেই পরিচিত ছিল। প্রাথমিক ধর্ম শিক্ষা লাগ করে তার বাবার প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় একটি মাদ্রাসায়।
১৯৬২ সালে ছারছিনা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিল কিন্তু পরে খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় ট্রান্সফার নিয়ে আসে।ধর্ম শিক্ষার শেষে স্থানীয় গ্রামেই ব্যাবসা শুরু করে এবং মাওলানা হিসেবে ধর্ম ব্যাবসা খুলে বসে। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে এই নরঘাতক স্বাধীনতার বিরোধিতা করে এবং পাকিস্তানি সেনাদের সাথে মিলে আধাসামরিক বাহিনী গঠন করে। এই আধাসামরিক বাহিনী রাজাকারের সক্রিয় সদস্য হিসেবে সাঈদী মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করে। এই নরপশু লম্পট এর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, নির্যাতন ও জোরপূর্বক সংখ্যালঘু হিন্দুদের ধরে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ সুস্পষ্ট ভাবে প্রমানিত হয়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে, যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ সমূহঃ
অভিযোগ ১- পিরোজপুর সদর এলাকার মধ্য মাসিমপুর বাসস্ট্যান্ডের পেছনে পরিকল্পিতভাবে পাকবাহিনীকে সহায়তা করে আগে থেকে জড়ো করা ২০ জন নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করে হত্যায় সাহায্য করে।
অভিযোগ ২- মাসিমপুর হিন্দুপাড়ায় হিন্দু বাড়িগুলোতে লুট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। অসহায় মানুষ পালাতে শুরু করলে সাঈদী ও তার দলের সদস্যরা পালাতে বাঁধা দিয়ে গুলিবর্ষণ করলে ১৩ জন সেখানে শহীদ হন।
অভিযোগ ৩- সাঈদী নিজে মাসিমপুর হিন্দুপাড়ায় মনীন্দ্রনাথ মিস্ত্রী ও সুরেশ চন্দ্র মণ্ডলের বাড়ি লুট করে আগুন ধরিয়ে দেন।
অভিযোগ ৪- ধোপাবাড়ির সামনে এবং পিরোজপুর সদর পুলিশ স্টেশনের এলজিইডি ভবনের পেছনের হিন্দুপাড়া ঘেরাও করে গুলি বর্ষণ করে এবং সেখানে দেবেন্দ্রনাথ মণ্ডল, জগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, পুলিন বিহারী ও মুকুন্দ বালা মারা যান।
অভিযোগ ৫- ১৯৭১ এ পিরোজপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সাইফ মিজানুর রহমান, পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদ এবং ভারপ্রাপ্ত এসডিও আবদুর রাজ্জাককে কর্মস্থল থেকে ধরে বন্দি করা হয়। সাঈদীর উপস্থিত থেকে এই ৩ সরকারি কর্মকর্তাকে গুলি করে লাশ বলেশ্বর নদে ফেলে দেয়।
অভিযোগ ৬- সাঈদীর নেতৃত্বাধীন শান্তি কমিটির একটি দল পাকিস্তানি দোসর সেনাদেরকে নিয়ে পারেরহাট বাজারের আওয়ামী লীগ, হিন্দু সম্প্রদায় এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের বাড়িঘর ও দোকান চিনিয়ে দেয়। আর পাকি সেনারা এসব দোকান ও বাড়িতে লুটপাট করে।
অভিযোগ ৭- সাঈদী পাকিস্তানি দোসর সেনাদের সাথে নিয়ে দবাদুরিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম খানের ছেলে শহীদুল ইসলাম সেলিমের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সেখানে নুরুল ইসলাম খানকে আওয়ামী লীগের আর শহীদুল ইসলামকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করে এবং পাকিস্তানি সেনাদের হাতে সোপর্দ করেন। পরে তাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে চলে যায়।
অভিযোগ ৮- সাঈদী ও তার দলবল মিলে চিথোলিয়া গ্রামের মানিক পসারির গ্রাম লুট করে। এখানে পাঁচটি ঘরে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে মানিক পসারির ভাই ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করে।
অভিযোগ ৯- সাঈদী ও তার সশস্ত্র দলবল ইন্দুরকানি পুলিশ স্টেশনের নলবুনিয়া গ্রামের আবদুল হালিম বাবুলের বাড়িতে লুটপাট করে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।
অভিযোগ ১০- সাঈদীর সশস্ত্র সহযোগী উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ার ২৫টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। সাঈদীর মদদে বিসা বালী নামের একজনকে নারকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে।
অভিযোগ ১১- টেংরাখালী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়িতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিয়ে যান সাঈদী। সেই স্থানে তার বড় ভাই আবদুল মজিদ হাওলাদারকে ধরে নির্যাতন করে। তারপর সাঈদী নগদ টাকা লুট ও মূল্যবান জিনিস নিয়ে যান। পরে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
অভিযোগ ১২- সাঈদী ১৫-২০ জনের একটি সশস্ত্র হানাদারদল পারেরহাট বাজারের ১৪ জন হিন্দুকে ধরে দড়ি দিয়ে বেঁধে পাকিস্তানি সেনাদের কাছে নিয়ে যায়। পরে তাদের সবাইকে গুলি করে শহীদদের লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
অভিযোগ ১৩- মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার মাস দুই-তিন পর সাঈদী পাকিস্তানি হানাদার দল নলবুনিয়া গ্রামের আজহার আলীর বাড়িতে যায়। সেখানে আজহার আলী ও তার ছেলে সাহেব আলীকে ধরে নির্যাতন করা হয়। সাহেব আলীকে পিরোজপুরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
অভিযোগ ১৪- সাঈদী ৫০-৬০ জনের একটি রাজাকার বাহিনী সাথে নিয়ে হোগলাবুনিয়ার হিন্দুপাড়ায় যায়। মধুসূদন ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামীকে ধর্ষণ করে। পরে এই হিন্দুপাড়ার ঘরে আগুন দেওয়া হয়।
অভিযোগ ১৫- সাঈদী ১৫-২০ জনের রাজাকার দল সাথে নিয়ে হোগলাবুনিয়া গ্রামের ১০ জন হিন্দু নাগরিককে ধরে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেনারা তাদের সবাইকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়।
অভিযোগ ১৬- সাঈদী ১০-১২ জনের রাজাকার দল সাথে নিয়ে পারেরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ি থেকে তার তিন বোন মহামায়া, অন্ন রানী ও কমলা রানীকে ধরে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তিন দিন ধরে ধর্ষণ করে পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগ ১৭- সাঈদী তার রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা পারেরহাটের বিপদ সাহার সাহার মেয়ে ভানু সাহাকে তার বাড়িতে আটকে নিয়মিত ধর্ষণ করে।
অভিযোগ ১৮- ভাগীরথী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেনা ক্যাম্পে কাজ করতেন। সাঈদী এক দিন খবর দেন, ভাগীরথী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়মিত নানা খবরা-খবর দেন। পাকিস্তানি সেনারা তাকে হত্যা করে লাশ বলেশ্বর নদে ফেলে দেয়।
অভিযোগ ১৯- সাঈদী প্রভাব খাটিয়ে পারেরহাটসহ অন্য গ্রামের ১০০-১৫০ জন হিন্দুকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে। তাদের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে বাধ্য করা হতো।
অভিযোগ ২০- সাঈদী ১০-১২ জনের একটি সশস্ত্র দল নিয়ে পরিকল্পিতভাবে ইন্দুরকানি গ্রামের তালুকদার বাড়িতে আক্রমণ চালায়। ৮৫ জন ব্যক্তিকে আটক করে তাদের কাছ থেকে মালামাল কেড়ে নেওয়া হয়। ১০-১২ জন বাদ দিয়ে বাকিদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এছাড়াও সাঈদী ওরফে দেইল্লা রাজাকার অগনিত অপরাধ সমূহের মধ্যে প্রমাণ এর অভাবে অনেক কৃত অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা যায়নি। সাঈদী অতি চতুরতার সাথে সাক্ষী এবং প্রমাণাদি গায়েব করে দিয়েছে। ভয় দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে সাক্ষীদের মুখ বন্ধ করে রেখেছে। হয়েছে বিশাল টাকার মালিক। নিজের কৃত কর্ম ঢাকতে ধর্মকে ব্যাবহার করে মানুষের মন জয় করে নিজেকে ধর্ম রক্ষক এর আসনে বসিয়েছে। অপপ্রচার করেছে যে সাঈদী কে চাঁদে দেখা গিয়েছে। ব্যাপারটা ঠিক রক্ষক যখন হয় ভক্ষক এরকম। এই জামায়েত ইসলামীর নেতা সুকৌশলে মেয়েদের কে নিজের মিষ্টি মধুর কথার ফাঁদে ফেলে, জোর করে নিজের লোকদের দিয়ে তার গোপন আস্তানায় এনে ধর্ষণ করত। পরে ভয় দেখিয়ে ওই সব মেয়েদের মুখ বন্ধ করে রাখত যেন তারা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ না করে। কিন্তু পাপ কখনো ঢাকা থাকে না। সাহসী একজন নারী সাঈদীর যৌন ফোনালাপ প্রকাশ করে দিয়েছিল। সেখানে আল্লামা পরিচয় ধারী ধর্মরক্ষক সাঈদী অত্যন্ত কুশ্রী ভাষায় একজন নারীকে নিজের বিকৃত যৌন উত্তেজনার তাক্ষনিক অবস্থার বর্ণনা দিয়েছিল। এর ভিত্তিতে সাঈদীর আর একটা নাম এই ফোনালাপের দরুন উঠে আসে। সাঈদী, দেইল্লা রাজাকারের পাশাপাশি ‘মেশিন ম্যান’ নামেও পরিচিতি লাভ করে।
সুত্রঃ
- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)
- মুঠো ফোনে সাঈদীর বিকৃত যৌন আলাপ
- দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী উইকিপিডিয়া