কয়লা ও কঠিন শিলার পর দিনাজপুরের মাটির নিচে সন্ধান মিলেছে লোহার আকরিকের।দেশের প্রথম এই লোহার খনিটি বাংলাদেশের দিনাজপুরের হাকিমপুরে। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) এই খনিটির সন্ধান পায়। ইসবপুরের এই খনিতে উন্নত মানের লোহার আকরিক রয়েছে বলেও জানিয়েছিল সরকারি সংস্থাটি৷ এরই প্রেক্ষিতে তিন মাস ধরে কূপ খনন আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। প্রায় ৫০ শতক জমিতে খনিজ পদার্থের সন্ধানে খনন কাজ পরিচালনা করেছে ভূ-তাত্বিক জরিপ অধিদপ্তর।
গত (২০১৯) বছরের ১৯ এপ্রিল খনন কাজ শুরু করে জিএসবি৷ তখন ১৩৩৪ ফুট গভীরতায় আকরিকের সন্ধান পাওয়া যায়৷ পরে জয়পুরহাটের বিসিএসআইআর পরীক্ষাগার এবং খনন এলাকায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় উপাদান৷ তারই ভিত্তিতে ইসবপুরে লোহা আকরিকের বিষয়ে নিশ্চিত হয় বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর৷ এরপরে প্রাথমিকভাবে ১৩৩৪ ফুট থেকে ১৭৮৬ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করা হলে এই গভীরতায় বিভিন্ন স্তরে আকরিক পাওয়া যায় যার পুরুত্ব ছিল প্রায় ৪০০ ফুট৷ খনি এলাকার ব্যাপ্তি ৫ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেলে এবং পুরুত্ব ৪০০ ফিট থাকলে, অবশ্যই এটাকে বড় মজুদ বলা যায়।
প্রাথমিক পর্যায়ে করা জিওফিজিক্যাল সার্ভে থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী লোহা আকরিকের খনি থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পরীক্ষাগারের রিপোর্টে দেখা গেছে, যেই আকরিক পাওয়া গেছে তাতে লোহার পরিমাণ প্রায় ৬০ ভাগ৷ লোহার পাশাপাশি কপার, নিকেল আর ক্রোমিয়ামের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে এই খনিতে৷ যদিও তার পরিমাণ খুবই কম৷ তবে সব কাজ শেষ হলে, এই খনি থেকে লোহা উত্তোলনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে৷ বাংলাদেশ নিজেরাই সেটা তুলতে পারবে৷ বাইরের কোনো দেশের সাহায্যের প্রয়োজন হবে না৷ বাংলাদেশে ইতোমধ্যে দুইটি মাইনিং চলছে, আরো দুইটিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ৷ ফলে আকরিক উত্তোলনের সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে৷
যেকোনো খনি থেকে আকরিক আহরণের আগে কত মজুদ আছে, সেটার আকার কত সে বিষয়ে ড্রিলিং ছাড়াও আরও কয়েক ধাপের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এছাড়া খনিজ আহরণের ব্যয় এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে তার চাহিদা ও দামের তুলনা করার পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এখনো প্রাথমিক অবস্থাতেই রয়েছে বাংলাদেশের লোহা খনির বর্তমান পরিস্থিতি।
২০১৩ সালে হিলির মুর্শিদপুরে কূপ খনন করে খনিজ পদার্থের সন্ধান পায় ভূ-তাত্বিক জরিপ অধিদপ্তর। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই ৬ বছর পর বিশেষজ্ঞরা গত ১৯ এপ্রিল, ২০১৯ সালে উপজেলার মুর্শিদপুর গ্রামে প্রথম ড্রিলিংয়ের কাজ শুরু করেন। এই কাজ শেষ করে দুই কিলোমিটার দূরে ইশুবপুর গ্রামে আরেকটি ড্রিলিং কাজ চলে। লোহা ছাড়াও খনিটিতে মূল্যবান কপার, নিকেল ও ক্রোমিয়াম রয়েছে বলেও জানা গেছে।
পৃথিবীর খুব কম দেশেই লোহার খনির পাওয়া যায়৷ এখন পর্যন্ত ক্যানাডা, অ্যামেরিকা, সুইডেন, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়ার মতো হাতে গোণা কয়েকটি দেশে এর সন্ধান মিলেছে৷ বাংলাদেশে তুলনামূলক কম গভীরতায় লোহার আকরিকের সন্ধান পাওয়া গেছে যা সত্যিই বিরল৷ পৃথিবীর অন্য দেশে আরো অনেক গভীর পর্যন্ত খনন করতে হয়৷