২০১০ এর নিমতলী থেকে ২০১৯ এর চকবাজার। পুরান ঢাকাতে যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। সেদিন একরাতের অগ্নিকান্ডে ৭৮ জন নিহতের ঘটনা ঘটে। একুশে ফেব্রুয়ারির চুড়িহাট্টা পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে।
২০১০ সালে ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিক কারখানায় একই ধরনের অগ্নিকাণ্ড প্রাণ হারিয়েছিলেন শতাধিক মানুষ। সেই ভয়াবহ ঘটনার কথা পুরনো ঢাকার মানুষ ভুলতে পারার আগেই আবারও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রথমবার অগ্নিকাণ্ডের পর পুরনো ঢাকা থেকে বিপজ্জনক রাসায়নিক কারখানা এবং গুদাম সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা হয়নি। ফলে তাদের আবারও পড়তে হয় আরেকটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে। পুরনো ঢাকার এমন ভয়াবহ দাবানল যেন থামানোই যাচ্ছে না।
পুরোনো ঢাকায় যত্রতত্র রাসায়নিক দ্রব্যের কয়েক হাজার গুদাম, কারখানা বা দোকানের বেশিরভাগের নিবন্ধন বা লাইসেন্সসহ কোনো কাগজপত্র নেই। এইসব ব্যবসায়ী এবং তাদের সহায়তাকারী স্থানীয় লোকজনের ভোটব্যাংক রয়েছে এবং তাদের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কর্তৃপক্ষ কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয় নি। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে অনেকে দাবি করেন ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণে আগুনের শুরু, কেউবা বলতে থাকেন গাড়ির সিলিন্ডার যত নষ্টের গোড়া। পুরান ঢাকার এই স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে তখন স্পষ্টত দুটি দল। একদল রাসায়নিক কারখানাকে কোনভাবেই দায়ী করতে রাজি নন। আরেকদল আবার যেকোন মূল্যে চান এই এলাকাগুলো থেকে রাসায়নিক কারখানা ও গুদামের অপসারণ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, ভবনের চেয়ে রাস্তায় থাকা মানুষই প্রাণ হারায় বেশি। প্রথমত গাড়ীর গ্যাস সিলিন্ডার, দ্বিতীয়ত ভবনে থাকা রাসায়নিক দ্রব্য আর সবশেষ পুরান ঢাকার অপরিকল্পিত সরু গলিপথই আগুনকে দিয়েছে দানবের রূপ।চকবাজারের গলিপথটি পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে। যারা প্রাণে বেচে গিয়েছে এই আতঙ্ক তাদের অনেকদিন তাড়া করে ফিরবে।
নিমতলীর ভয়াবহ ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ে সরকার চাপের মুখে পড়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটে তখন পুরোনো ঢাকায় ৮০০’র বেশি অবৈধ রাসায়নিক গুদাম এবং কারখানা চিহ্নিত করে সেগুলো কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি এবং পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বা পরিবেশ অধিদপ্তর তারাও সেভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। সিটি করপোরেশন যারা এসবের লাইসেন্স দেয় বা তদারকি করে, তারাও সেটা সঠিকভাবে করেনি। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি মেনে নেওয়া কষ্টের।সরকার, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এমনকি স্থানীয় মানুষ-কেউই এমন পরিস্থিতির দায় এড়াতে পারে না।
পুরান ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্থানীয় মানুষদের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। জীবনের চেয়ে বড় কিছু হতে পারেনা। জীবনটাকে তুচ্ছ করে যদি তারা ব্যবসাটাকে প্রাধান্য দেয় তাহলে এরকম ঘটনা বারবার ঘটবে।