আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশে গুম-খুন এসব কোন নতুন ঘটনা না। তত্ত্বাবধায়ক ও সেনাশাসনের পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এসব গুম হয়ে যাওয়া কিংবা হঠাত করেই গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তির লাশ খুঁজে পাওয়া যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়েই দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক কর্মী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক – বাদ পড়ছে না কেউই। তবে এই গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপি কর্মীদের সংখ্যা সব চাইতে বেশি।
এই গুম-খুন নিয়ে অনেক দিন থেকেই আমি কথা বলে আসছি। আমার আলোচনা-পর্যালোচনা দেখে সম্প্রতি একটি সংবাদপত্র আমার কাছে গুম হওয়া নিয়ে কিছু প্রশ্ন জানতে চায়। সেই প্রশ্ন গুলোর উত্তর আমি আমার মত করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং আমার জ্ঞান-বুদ্ধি ও আমার পাওয়া বিভিন্ন তথ্যাদি বিশ্লেষণ ও বিবেচনা করেই আমাকে করা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছি।
আপনাদের জন্য সেই প্রশ্ন গুলো ও উত্তর গুলো নিচে দিয়ে দিলাম।
গুম করে কারা? – এরও সহজ উত্তর হলো, বাংলাদেশ সরকারের অধীনে নিয়োজিত গোয়েন্দা সংস্থা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গোয়েন্দাসংস্থা ডিজিএফআই, র্যাব, ডিবি পুলিশ ইত্যাদি।
সরকার কেন গুম করবে? – এর সহজ ও সঠিক উত্তরটি হলো, কোন ব্যক্তি যখনই আওয়ামীলীগ সরকার বা আওয়ামীলীগ কোন কর্মীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করবে কিংবা দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করবে, তখনই তাকে গুম করে ফেলা হয়।
গুম করে কি করা হয়? – এটি আসলে একটি হাস্যকর প্রশ্ন। ক্লাস ফোর-এর একটা বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করলেও বলে দিতে পারবে। গুম করে সেই ব্যক্তিকে বন্দি করে রাখা হয়। তাকে বিভিন্ন ভাবে শাসিয়ে দেওয়া হয় যাতে সে তার সরকারের বিরুদ্ধে যায় এমন কোন কার্যক্রম না করে। এবং করলে তাকে বা তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হবে।
গুম থেকে ফেরা ব্যক্তিরা প্রতিবাদ করে না কেন? – এটাও অনেকটা হাস্যকর প্রশ্ন। প্রতিবাদ করবে কার বিরুদ্ধে? শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে? না তার গোয়েন্দা বাহিনীর বিরুদ্ধে? সেই সাহস কি কারো আছে?
অনেকেই গুম হয়ে যায় কিন্তু তার লাশ পাওয়া যায়, কেন? – যখন আওয়ামীলীগ সরকার মনে করে সেই ব্যক্তি আওয়ামীলীগের জন্য কোনভাবে বিপদজনক হতে পারে এবং তাকে ছেড়ে দিলে গুম হয়ে যাওয়ার তথ্য বাইরে ছড়িয়ে দিতে পারে, তখনি আওয়ামীলীগ তার গোয়েন্দাবাহিনিকে নির্দেশ দেয় ব্যক্তিটিকে হত্যা করে ফেলার জন্য। এবং সেই ব্যক্তিকে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখে এমন সব পরিত্যক্ত জায়গায় যাতে করে আওয়ামীলীগ কিংবা কোন গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা সন্দেহ না জাগে।
গুম করে সরকারের কি লাভ? – কি লাভ মানে? তারা কোনভাবেই চায় না কেউ সরকার তথা আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে কিংবা তাদের দুর্নীতি নিয়ে কিছু বলুক বা লেখুক। তাই সেই সকল ব্যক্তি যারা আওয়ামীলীগের দুর্নীতি নিয়ে কিছু লিখে বা জোরালো তথ্য-প্রমাণ মজুদ রাখে, তাদেরকেই গুম করে শাসিয়ে দেওয়া হয়। জব্দ করা হয় তাদের কাছে থাকা তথ্যগুলি।
বিএনপি নেতাকর্মীদের কেন গুম করা হচ্ছে? – বিএনপি যাতে রাজনীতি করতে না পারে, ঠিক সে কারনেই গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীদের গুম করা হয়। এবং বিভিন্ন কর্মীদেরও গুম করে, যাতে তাদের পর্যায়ের অন্যান্য কর্মীরা ভয় পায় এবং বিএনপির সঙ্গ ছেড়ে আওয়ামীলীগ এ যোগ দেয়। কিন্তু বিএনপির দামাল ছেলেরা তাতে ভয় পায়নি বরং তাদের মধ্যে বিএনপির রাজনীতির প্রতি আরও স্পৃহা বাড়িয়ে দিয়েছে।
গুম করে কোথায় রাখা হয়? – আমরা বিভিন্ন সংবাদকর্মী ও সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি যে বাংলাদেশে ডিজিএফআই ও র্যাবের পরিচালনায় রয়েছে অনেক গুলো টর্চার সেল। সেখানেই বন্দি করে রাখা হয় গুমকৃত ব্যক্তিদের।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের সাথে কি করা হয়? – বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গুমকৃত ব্যক্তিদেরকে আলোবিহিন বন্ধ কামরাতে বন্দি করে রাখা হয়। তাদেরকে নানান ভাবে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করা হয়, ভয় দেখানো হয়। বিভিন্ন ভাবে চাপ দেওয়া হয় যাতে তারা আওয়ামীলীগ বা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোন তথ্য প্রকাশ না করে, তাদের দুর্নীতি নিয়ে যাতে করে কোন কথা না বলে।
কিভাবে বুঝলেন গুম-খুনের পেছনে সরকারই জড়িত? – যদি নিয়মিত বিভিন্ন সংবাদ লক্ষ্য করে থাকেন, তাহলে আপনারাও বুঝতে পারবেন। প্রতিটি গুম হয়েছে মোটামোটি একই কায়দায়। হঠাত করেই কোন ব্যস্ত সড়ক থেকে সাদা মাইক্রোবাস-এ করে সাদা পোষাকে থাকা কিছু লোক ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায়, এবং কিছুদিন পরে জানা যায় যে সেই গুম হওয়া ব্যক্তি অপহৃত হয়েছেন। এবং অপহৃত ব্যক্তিদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখলেও বুঝতেই পারা যায় যে তারা কোন না কোন ভাবে আওয়ামীলীগ কিংবা তাদের সেনা প্রশাসনের কোন দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছেন কিংবা সরকারের কুকীর্তির কোন প্রমাণ আছে। এতে একদমই স্পষ্ট হয় যে সরকারের নির্দেশেই এই গুম-গুম খেলা হয়।
গুম হওয়ার পর গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয় কেন? – শুধুমাত্র সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করবার জন্য। সাধারণ জনগণ যাতে বিশ্বাস করে নেয় যে এটি নিছক একটি অপহরণের ঘটনা। এতে করে সরকারের দিকে কোন সন্দেহের তীর যায় না।
গুম হওয়া নিয়ে আপনার মন্তব্য কি? – এ বিষয়ে আমি অনেকবার বলেছি, আবারো বলছি, একটা সভ্য দেশে কখনো সরকারি মদদে গুম করা একটি নেক্কারজনক ঘটনা। দুর্নীতি নিয়ে কথা বলবে বলেই আপনাদের এতো ভয়। দুর্নীতি করবেন কেন? কেন জনগণের টাকা মেরে খাবেন? জনগণের ভবিষ্যৎ কেন বিক্রি করে দিবেন দুটো টাকার জন্য? দেশের জন্য কি কোন মায়াদয়া নেই আপনাদের? আপনাদের বল্যতে এখানে আমি আওয়ামীলীগকে বুঝাচ্ছি। আসলে তাদের কোন লজ্জা শরম বল্যতে কিছু নাই। এই কারনেই এসব পাঁয়তারা করে থাকে। কেন ভাই? আপনারা দুর্নীতি করবেন আর আমরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবো? কেউ কোন কথা বল্যতে পারবো না? আমাদের সংবিধান আমাদের সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলার অধিকার দেয়। আপনারা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার কে? আপনারা তো অবৈধভাবে ক্ষমতার গদিতে চেপে বসেছেন আর ভুরি ভুরি দুর্নীতি করে বেড়াচ্ছেন। আর কেউ কোন কথা বলেই তাকে গুম করে ফেলছেন। সবার কাছে প্রশ্ন রেখে যাই, এভাবে আর কতদিন?