চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ স্থাপনের কাজ চলছে। এ শিল্পনগরের জোন-২ এ (৯৩৯ একর) ও জোন-২বিসহ (৪৭৪ একর) পারিপার্শ্বিক জোনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে ৪ হাজার ৩৪৭ কোটি ২১ লাখ ২ হাজার টাকা খরচে একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। তার মধ্যে সরকার দেবে ৩৭৯ কোটি ৭৪ লাখ ২০ হাজার আর বিশ্বব্যাংক ঋণ হিসেবে দেবে ৩ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এই যে এত হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় সেই টাকা আসলেই খরচ করা হচ্ছে নাকি সুইস ব্যাংকের কোন নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে সেই খবর কয়জন রাখছে?
১৯ জানুয়ারি একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার কথা ছিল। তবে বিশেষ কারণে একনেক সভা স্থগিত হওয়ায় পরবর্তী সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পেতে পারে বলে জানানো হয়। শুধু এই প্রকল্প কেন এর আগে পদ্মাসেতু প্রকল্প নিয়ে কি কম জল ঘোলা কিংবা কম দুর্নীতি হয়েছে? একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়ে আর তা ফলাও করে প্রচার করে জনগনকে উন্নয়নের সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার যেই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে তা জনগনের আর বুঝতে বাকি নেই। উন্নয়ন প্রকল্প হতে হবে সময়োপযোগী। যাতে করে জনগনের জীবন যাত্রায় পরিবর্তন আসে। এই যেমন লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। আবার করোনা মহামারিতে চাকরি কিংবা সর্বোস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে কত মানুষ। কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাদের জন্য? কিছুই না। এই সরকার ব্যস্ত বড় বড় লোক দেখানো প্রজেক্ট নিয়ে যাতে তারা বিশ্বের কাছে দেখাতে পারে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ। যেখানে দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদাই পূরণ হচ্ছে না ঠিকঠাক ভাবে।
জানা গেছে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন” শিরোনামের প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের উদ্যোগে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিল্পায়ন করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশব্যাপী প্রায় ১০ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের সুযোগসহ ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনে কাজ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। বেজার গভর্নিং বোর্ডের প্রথম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে দেশের সর্ববৃহৎ এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি স্থাপনের কাজ চলমান। কিন্ত সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার যেই ফিরিস্তি দেওয়া হয়েছে তা শেষ পর্যন্ত ঐ কাগজ কলমের লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাস্তবতা এর বহুক্রোশ দূরে।
বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট সাপোর্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক ঋণচুক্তির অধীনে বাস্তবায়নাধীন ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ফেজ-১’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের জোন-১ (মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল) এর আওতাভুক্ত ৫৪৮ একর ভূমি উন্নয়নসহ পারিপার্শ্বিক অন্যান্য জোনের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ইউটিলিটি সেবা সৃষ্টির মাধ্যমে ইতোমধ্যে শিল্প ইউনিট স্থাপনের ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে। এরমানে হচ্ছে আবারও হাজারকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বন্দোবস্ত হয়ে গিয়েছে। যতটা ফলাও করে এসব প্রকল্প পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয় ঠিক ততটাই জোরেসোরে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মহাযজ্ঞ চলে লোকচক্ষুর অন্তরালে। কে রাখবে এই খবর? সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করে রাখা হয়। কেউ এসব ভেতরের খোজ খবর বের করতে চাইলে তাদের উপর চলে অমানবিক জুলুম, নিষ্ঠুর নির্যাতন।
বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প ঋণের সহায়তায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আওতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের মূলত জোন-২এ (৯৩৯ একর) ও জোন-২বিসহ (৪৭৪ একর) পারিপার্শ্বিক অন্যান্য জোনে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন; যেমন- ৩০ কিলোমিটার চার লেন সড়ক, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস নেটওয়ার্ক, নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রশাসনিক ভবন, সিইটিপি, ডিস্যালাইনেশন প্ল্যান্ট, স্টিম নেটওয়ার্ক, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, সোলার প্যানেল ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে ওই জোনকে পরিবেশ সহনীয় ‘গ্রিন ইকোনমিক জোন’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে ছয়টি কাজ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমীক্ষা/স্টাডি ও পরামর্শক সেবা গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। যাদের উপর এই সমীক্ষা/স্টাডি দায়ভার ন্যস্ত করা হয়েছে তাদের থেকে শুরু করে একেবারে হাই কমান্ড পর্যন্ত চলবে লুটপাটের মহাযজ্ঞ। আর কিছুদিন পর ঢালাওভাবে প্রচার করা হবে সরকারের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় প্রকল্পের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আদতে যা ছিলো পকেট ভারি করার মাস্টারপ্ল্যান। এই করোনা মহামারীর মধ্যেও বিগত ৬ মাসে দেশ থেকে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।