করোনা ও মুজিববর্ষ

২০২০ সাল শেখ মুজিবের জন্মের শততম বার্ষিকী ছিল। আওয়ামীলীগ সরকার এই বছরটিকে উদযাপন করার জন্য সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল অনেক আগে থেকেই। অনেকে বলেন মুজিববর্ষ উদযাপনের জন্যেই আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় যেভাবে পারে সেভাবে টিকে থেকেছে।

মুজিববর্ষ আসায় দেশের দূর্নীতিবাজদের কপাল খুলে গিয়েছিল। জেলায় জেলায় মুজিবের ভাস্কর্য স্থাপনের নামে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। থানায় থানায়, সরকারি সকল অফিসে মুজিব বর্ষের স্মারক মগ, টিস্যু, ঘড়ি, ক্ষণগণনার ঘড়ি পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। অনেক মেগাপ্রজেক্টকে থামিয়ে রাখা হয়েছে যেন মুজিববর্ষে সেটা উদ্বোধন করা যায়। আওয়ামীলীগ প্রস্তুতির কোনো কমতি রাখে নি। সকল ব্যাংক, বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের থেকে চিঠি দিয়ে বাড়ির মালিকদের মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাসার দেয়াল রঙ করানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। থানায় থানায় আতশবাজি কেনা হয়েছে মুজিববর্ষের উদ্বোধন করার জন্যে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সব প্রস্তুতি শেষ।

চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালে একটা নতুন শ্বসনতন্ত্রের ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছিল। ভাইরাসটি সংক্রামক, এবং মারণঘাতি। জানুয়ারীর মধ্যে ভাইরাসটি ইউরোপকে আক্রান্ত করে ফেলেছে, আমেরিকাকে আক্রান্ত করে ফেলেছে। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নাস্তানাবুদ, যুক্তরাজ্যের অবস্থা শোচনীয়, যুক্তরাষ্ট্র আক্রান্ত ও মৃতের তালিকায় হুরহুর করে উপরে উঠে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারীর মধ্যে সারা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ পার হয়ে গেছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে আরো অর্ধ লক্ষ আক্রান্ত হয়েছে। মার্চের শুরুতে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ছিল, মাত্র কয়েক সপ্তাহে সেটা বেড়ে ১৪ হাজারে চলে আসে। বিশ্ব হতবাক, দিশেহারা।

এমন অবস্থায় বাংলাদেশে প্রথম সনাক্তকরণ হয় মার্চের ৮ তারিখে। বিদেশ ফেরত সহ তার পরিবারের ৩জন আক্রান্ত হয়। তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়। শুরুর দিকে যে সিরিয়াসনেস প্রয়োজন ছিল তার কমতি দৃশ্যমান ছিল। সাউথ কোরিয়া বা নিউজিল্যান্ডের মত তড়িৎ সিদ্ধান্তের ঘাটতি ছিল কারণ সামনে মুজিববর্ষের উদযাপন শুরু করতে হবে। মার্চের ১৬ তারিখে কেইসের সংখ্যা ছিল ৮। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত তখনও আসে নি। বিশ্বের বাকিরা হাবুডুবু খাচ্ছে এসব আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এবং দেশি মিডিয়ায় আসছে।

মার্চের ১৬ তারিখ রাত ১২টায় আতশবাজি ফুটিয়ে মুজিববর্ষ শুরু হলো। সবাই মিলে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে ফুল দিয়ে আসলেন। কেইসের সংখ্যা বাড়ছেই। ওবায়দুল কাদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য জন সমাবেশ করে সচেতনতা বাডালেন। এপ্রিলের ১ তারিখে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ পার করে ফেলেছে।

অবশেষে সরকার লকডাউন ঘোষণা করলো। মার্চের ২৪ তারিখ। তবে সেখানেও ফাঁকি! লকডাউন ঘোষণার আগে তারা ঢাকা খালি করে ফেললো। ঢাকা থেকে ভাইরাস সারা দেশে ছড়িয়ে গেল!

এক বছর পরে আজ দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ, মৃত দশ হাজার ছুয়ে ফেলবে। অপর্যাপ্ত টেস্টিংয়ের কারণে আমরা আসল সংখ্যাটা জানি না।

মুজিববর্ষের উদযাপন করার জন্য বৈশ্বিক মহামারীকে পাত্তা দেয় নি সরকার। তারা যদি শুরুতেই সিরিয়াসলি বর্ডার বন্ধ করে দিত তাহলে তাদের হয়ত এত কিছু করাও লাগতো না। কিন্তু তারা ব্যস্ত ছিল মুজিববর্ষ আর টাকা চুরি নিয়ে।

You may also like...

Read previous post:
সরকার ও সরকারী দলের কর্মীদের বেপরোয়া আচরণ

সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি সরকার ও সরকারী দলের প্রতিনিয়ত ক্রমবর্ধমান বেপরোয়া আচরণ এবং অসঙ্গতি দেখে  রাষ্ট্র এবং তার অধিকর্তাদের উপর...

Close