আমাদের দুনিয়া এবং জগৎ যেটাকে ইংরেজিতে বলে ইউনিভার্স, এটার সৃষ্টি কিভাবে হলো, কেন হলো আজ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকরা বলতে পারেননি। তাঁরা বলেন, ‘বিগ ব্যাং, বিগ ব্যাং একটা হলো এবং দুনিয়ার সৃষ্টি হলো, জগতের সৃষ্টি হলো’ কিন্তু বিগ ব্যাংটা কে সৃষ্টি করলো- আজ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকরা এর জবাব দিতে পারেন নি। এর জবাব দিয়েছেন মৌলভী সাহেবরা এবং তাঁরা বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা। যেখানে জবাব বিজ্ঞান দিতে পারে নাই, সেখানে ধর্ম দিয়েছে এবং সে জন্যেই সায়েন্স এং ধর্ম কমপ্লিমেন্টারী। আমাদের ধর্মে বিজ্ঞান সম্বন্ধে বলা রয়েছে, শিক্ষা সম্বন্ধে বলা রয়েছে, জ্ঞান সম্বন্ধে বলা রয়েছে। আপনারা একটা কথা শুনেছেন যে আল্লাহ্ তা’আলা রিজিক দিবেন। এটা কিন্তু ভুল কথা নয়। এখন রিজিক যে দিবে তার জন্যে কাজ করতে হবে। কাজ না করলে ফল পাবেন না। বাংলাদেশের ইতিহাস অনেক পুরনো ইতিহাস। এ মাটির নিচে কি যে আছে অজস্র ধন-দৌলত, কিন্তু অতীতে আমরা সান করিনি। ফলে আহরণ করতে পারিনি কিছুই। আমাদের বৈজ্ঞানিকগণ হতে চান অফিসার, তাঁরা খোঁজেন চেয়ার-টেবিল। মাঠে-ঘাটে যেখানে প্রকৃত গবেষণা চলে সেখানে তাঁরা যেতে চান না। এটাই হলো বাংলাদেশের আসল দুর্ভাগ্য। এই দুর্ভাগ্যগুলি আমাদের নিজেদের তৈরি করা। আমাদের মাটিতে সবকিছু রয়েছে। জিওলজী সম্বন্ধে আমার সামান্য স্টাডি রয়েছে। আমি ইদানীং পড়েছি। আমি এগুলি আগে জানতাম না। এখন পরিস্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের মাটিতে স্থল এলাকা এবং পানি এলাকা অর্থাৎ সমুদ্র এলাকায় গ্যাস তো আছেই, তেলও রয়েছে। তেল মাটির স্থল এলাকাতে রয়েছে, পানিতেও রয়েছে এবং এর প্রমাণ আপনারা আগামী দিনগুলিতে পাবেন। বেশিদিন লাগবে না। গ্যাস আমরা পেয়েছি, কারণ গ্যাসটি হলো হালকা এবং এটা উপরে থাকে। তেল একটু ওজনদার, নিচে থাকে। কিন্তু আমরা সেই গভীরতায় যাইনি। ১৯২৩ সালে সিলেটের এক জায়গায় তেল পাওয়া গিয়েছিলো, কিন্তু সেটা কেবল এক হাজার মিটার অর্থাৎ তিন হাজার ফুট নিচে। কিন্তু আমাদেরকে পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার মিটার নিচে যেতে হবে এবং আমরা নিঃসন্দেহে তেল পাবো- যে তেল আজ আমাদের এতো পীড়া দিচ্ছে।
কেবলমাত্র সেখানেই শেষ হয় না গল্প। সমুদ্র এলাকায় বঙ্গোপসাগরে আমরা চাপ দিয়েছি, রাজনৈতিক চাপ দিয়েছি বৈজ্ঞানিকদের তেল পেতেই হবে। আপনারা জানেন, মাস কয়েক আগে আমরা বললাম যে, আমাদেরকে অবসর ড্রিলিং ক্যাপাবিলিটি ডেভেলপ করতে হবে। তখন আমাদের বৈজ্ঞানিকগণ, ইঞ্জিনিয়ারগণ এ বিষয়ে সম্যক তথ্য বের করলেন। এখন দেখা যাচ্ছে যে, বঙ্গোপসাগরের যে স্ট্রাকচার আছে জমির নিচে, এগুলিতে হাইড্রো-কার্বন অর্থাৎ তেল পাবার বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বিদেশী তেল কোম্পানীগুলি অনেকে যারা চলে গিয়েছিলো তারা এখানে এসে ড্রিলিং চালাচ্ছে। এই যে জমির নিচে-আমাদেরকে যে শিখানো হয় এটা আছে, এটা নেই, এগুলি সব বিদেশী চক্রান্ত। আমাদেরকে অতীতে যেভাবে বোকা বানিয়েছে এখনও আমাদেরকে বোকা বানিয়ে চলেছে। আর আমরা সেটা মেনে নিচ্ছি। আমাদের স্থির লক্ষ্য থাকলে সবকিছুই হবে। এবং সেই স্থির লক্ষ্য হবে রাজনৈতিক লক্ষ্য। আপনারা শুনেছেন যে, আমাদেরকে শিখানো হয়েছে বাংলাদেশের পশ্চিম অঞ্চলে গ্যাস পাওয়া যাবে না। অথচ কিছুদিনের মধ্যে আপনারা সে গ্যাসও পেতে চলেছেন। পশ্চিম-দক্ষিণ থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে একটি লাইন টানলে যেটাকে বলে হিঞ্জ এলাকা। যেখানে এখন বিদেশীরা, সেখানেও তেল পাবার বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আমাদের প্রিয় সিলেট ভূমিতে তেল পাওয়া যাবে অচিরেই- এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তবে যেটা বের করতে হবে এবং আল্লাহ তা’আলার হুকুমও সেভাবেই রয়েছে। সমুদ্র থেকে জমি উঠানোর ব্যাপারেও আমাদের সমস্যা আছে। সমাধানেরও উপায় আছে। নেদারল্যান্ড থেকে আমাদেরটা একেবারেই আলাদা, কিন্তু আমাদের সমস্যারও সমাধান আছে। সেটা অন্যভাবে করতে হবে। নেদারল্যান্ড থেকে এক্সপার্ট আনলে তাঁরা এর সমাধান দিতে পারবেন না। কারণ তাদের মন তো নেদারল্যান্ডে। তারা এখানে কাজ করতে পারবেন না। সম্ভব না। মনে রাখবেন জীবনটাই গড়া এবং ভাঙা, যতো গড়বেন ততো সমস্যা বাড়বে এবং যতো ভাঙবেন ততো সমস্যা বাড়বে। সমুদ্র থেকে জমি উদ্ধার করতেই হবে এবং সেটা আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি। আমরা অনেক জায়গায় ভুল করবো। কিন্তু ভুলভ্রান্তি থেকেই আমাদেরকে শিখে নিতে হবে।
জেলে অঙ্গদলের বিরাট সম্মেলন হলো, আমি তাদেরকে বললাম, যে খালি মাছ ধরছেন, কিন্তু মাছ তো উৎপাদন করছেন না। জনসংখ্যা বেড়ে গেছে। ৩০ বছর আগেরকার তুলনায় জনসংখ্যা দ্বিগুন। এক সপ্তাহে যদি আপনাদের মধ্যে কেউ এক সের মাছ খেতেন এখন সেখানে আধা সের খেতে পারেন। কিন্তু পাচ্ছেন না। কারণ নদীগুলি ভরে গেছে। আপনারা মাছ খালি খেয়েই চলেছেন কিন্তু উৎপাদন করছেন না। যার জন্যে মাছের এই অবস্থা। আপনারা ভাঙছেন- গড়ছেন না। জীবনটা হলো ভাঙা এবং গড়া। খালি ভেঙে যাচ্ছেন কিন্তু গড়ছেন না। আমাদের দেশের মাটির নিচে আরো অনেক জিনিস রয়েছে- কয়লা রয়েছে। এক বছর আগে পর্যন্ত আমাদের বৈজ্ঞানিকরা বলেছেন এগুলি পাওয়া যাবে না, কিন্তু এখন পাওয়া যাবে, সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এবং জামালগঞ্জ থেকে কয়লা উঠাবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগামী এক বছরের মধ্যে আমরা কয়লা উঠিয়ে নিতে পারবো। তেমনিভাবে আরো অনেক কিছু রয়েছে আপনারা জানেন এবং এর আগেও অনেকবার আমি বলেছি। রাজনীতির, অর্থনীতির চাবিকাঠি গ্রাম। এটা প্রমাণ করা নিষ্প্রয়োজন। আমাদের রাজনীতি আমরা গ্রামে নিয়ে গিয়েছি; এর ফল আপনারা ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছেন। কারণ আমাদের বিপ্লব বাস্তবায়িত করতে হলে বাংলাদেশের সকল মানুষকে এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং আমাদের স্ট্রাটেজী অনুযায়ী পুরুষ, মহিলা, যুবক, ছাত্র, ছাত্রী, শিশু পর্যন্ত আমরা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করছি। কারণ দেশটি সকলেরই। শিশুমন থেকেই তাদেরকে আগামী দিনগুলির জন্যে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের রাজনীতি-আজকের কিংবা দু’দিনের রাজনীতি নয়। আমরা এ রাজনীতিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চাই চিরকালের জন্যে এবং তার ভিত্তি শিশুমনেই দিতে হবে। তার ভিত্তি দিতে হবে ছাত্র, ছাত্রী, যুবক-যুবতীদের মধ্যে। রাজনৈতিকভাবে সচেতন না হলে আমরা অন্যক্ষেত্রে কিছুই পারবো না। এবং আমি একটু আগেই বললাম যে, আমাদের রাজনৈতিক চাপের ঠেলায় বৈজ্ঞানিকরাই এখন তাদের মতামত, তাদের থিউরী পাল্টানো শুরু করেছেন। তাহলে কথা সেইখানে দাঁড়াচ্ছে, যেখানে আপনারা নিশ্চিত হয়ে বিশ্বাস করতে পারেন যে, আগামী দিনগুলিতে রাজনীতির চাকিাঠি গ্রামের হবে; কারণ আপনারা গত দুই-তিন বছরের মধ্যে বীজ বপন করে দিয়েছেন। স্বনির্ভর গ্রাম সরকার থেকে শুরু হয়েছে আমাদের পার্টির গ্রামীণ সংগঠন। এখন অর্থনীতির চাবিকাঠি- রাজনীতি ছাড়া অর্থনীতি হয় না। অর্থনীতি, রাজনীতি ছাড়া করা যায় না। অর্থনীতি ছাড়া, রাজনৈতিক পরিকল্পনা ছাড়া, প্লান ছাড়া রাজনীতি পৃথকভাবে ইন-আইসুলেশন থেকে যাবে। রাজনৈতিক মুক্তি, অর্থনৈতিক মুক্তি না হলে সামাজিক মুক্তি আসতে পারে না। কিন্তু রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক এই তিনটি একই সাথে কাজ করে একই পেটের উপরে। সেভাবেই আমরা এগিয়ে চলছি। আপনারা বলছেন যে, আমরা সমাজে সুষম বণ্টন আনতে চাই, কি বণ্টন যে আনবেন, আনবার আগে তো প্রথমে যে জিনিস বণ্টন করবেন সে জিনিসটা বনাতে হবে। জিনিস না থাকবেল বণ্টন কি দিয়ে করবেন এবং সৃষ্টি করতে হবে- যেখানে তাদের বেশি আছে তারা যেন ব্যাপারটা বুঝতে পারে। যাতে ব্যাপারটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়ে যায়। কারণ আমরা শান্তিপূর্ণ বিপ্লব সাধন করছি। এ সম্বন্ধে আমি অতীতে অনেক বলেছি আজকে বেশি বলা নিষ্প্রয়োজন।
সার্বভৌমত্বের মধ্যে ব্যাপারটা ভেবে দেখা যাক। ভিখারী হিসাবে থাকলে আমাদের সার্বভৌমত্বের মধ্যে যথেষ্ট খুঁত থেকে যাবে। ভিখারী হয়ে সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা যায় না। ভিখারী হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করা যায় না। তাই আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। আমাদেরকে অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে এবং আমাদেরকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আজকে বেশ কয়েকজন বক্তা বক্তৃতা রাখলেন। যাঁরা বক্তৃতা করেছেন তাঁরাও খুবই মূল্যবান কথাবার্তা বলেছেন এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা এসব বিষয়ে যে জ্ঞান অর্জন করলেন, জানলেন, আলোচনা করলেন সেগুলি কাজে লাগাবেন। যে জ্ঞান কাজে লাগানো যায় না, যে জ্ঞান পকেটকেন্দ্রিক সে জ্ঞান অর্থহীন। আমাদেরকে আমাদের জ্ঞান কাজে লাগাতে হবে, আমাদেরকে পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদেরকে পার্টিতে একতা সৃষ্টি করতে হবে। আমাদেরকে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, একটি সংগঠনের মধ্য দিয়ে আনতে হবে। সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা যেভাবে ইন্টারেস্ট নিচ্ছেন, যেভাবে আপনাদের মধ্যে চিন্তাধারার পরিবর্তন আসছে। আমরা আমাদের যে লক্ষ্যে রয়েছে সেটা আবশ্যই বাস্তবায়িত করতে পারবো। আগামীকাল আমাদের রয়েছে ক্যাডার বাহিনীর উপর আলোচনা, বক্তৃতা এবং কালকের আলোচনায় বক্তৃতা খুবই তাৎপর্যবহ হবে। এবং অনেক ঝগড়া-বিবাদ হবে বলে আমি আশা করি। এবং আমি আশা করি, আপনারা খুব চিন্তা করে তৈরি হয়ে আসবেন এবং আপনারাই এ সম্বন্ধে বক্তব্য রাখবেন।