দেশে কোনো চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেই দেশের অশিক্ষিত মুমিনরা ম্যা ম্যা করে উঠে “সৌদি আরবের মত শাস্তি থাকলে দেশে ধর্ষণ হতো না”।
আদৌ কি সৌদি আরবে ধর্ষণের বিচার হয়? নাকি এরা অযথাই না জেনে বলতে থাকে সৌদির শাস্তিই সেরা!
ধর্ষণের ইনডেক্স দেখলে সবাই খেয়াল করে থাকবেন সে তালিকায় উপরের দিকে উচ্চ সামাজিক ন্যায়বিচারের দেশের সংখ্যাই বেশি। ব্যাপারটা সঠিক আলোয় না দেখলে অনেকটাই confusing! উন্নত দেশে কেন ধর্ষণ বেশি হবে? ঠিকই তো প্রশ্ন!
উচ্চ সামাজিক ন্যায়বিচারের দেশে আইনের শাসন বেশি থাকে। সেখানে আইনের দ্বারস্থ হওয়ার সংস্কৃতি মহল্লার বিচারের সংস্কৃতির চেয়ে বেশি। মহল্লা বিচার বলতে সেখানে কিছুই নাই। তবে মুসলমানরা সেখানে গিয়ে এমন আলাদা মধ্যযুগীয় আদালতের দাবি জানায় প্রায়শই। সেসব দেশে শিক্ষার হার বেশি হওয়ায় যৌন সহিংসতার বিষয়ে মানুষ সচেতন বেশি। বৈবাহিক ধর্ষণ, পরিবারের ভেতর ধর্ষণ ইত্যাদির মত বিষয়ও সেসব দেশের পরিসংখ্যানে আসে।
এর তুলনায় মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্টেড হয়ই না। অধিকাংশ মুসলিম প্রধান দেশে বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধই না। অথচ কারো সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা, হোক সে স্বামী/স্ত্রী, ধর্ষণই।
সৌদিতে ধর্ষণের শাস্তি কী?
সৌদির আইন ব্যবস্থায় ধর্ষণ বলতে কিছু নাই। যেটা আছে সেটা হচ্ছে ব্যভিচার, যাকে আরবিতে জ্বেনা বলা হয়। শরীয়াহ আদালতে ধর্ষণ প্রমাণ করতে চারজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সাক্ষীর প্রয়োজন হয়, অথবা আট জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী সাক্ষী, যারা চাক্ষুস ধর্ষণটি প্রত্যক্ষ করেছেন। কোরানে এসেছে-
তোমাদের মধ্যে যে সকল নারী ব্যাভিচার করিবে, তোমরা তাহাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্যেকার চারিজনকে সাক্ষী রাখ, যদি তাহারা সাক্ষ্য দেয়, তবে তোমরা তাহাদিগকে সেই সময় পর্যন্ত গৃহে আবদ্ধ করিয়া রাখিবে যে পর্যন্ত না মৃত্যু তাহাদের সমাপ্তি ঘটায় কিম্বা আল্লাহ তাহাদের জন্য কোন পৃথক পথ বাহির করেন। এবং তোমাদের মধ্যেকার যে কোন দুইজন ব্যাভিচার করিবে, তোমরা সেই দুইজনকে শাস্তি দিও, অত:পর যদি তাহারা তওবা করে এবং সংশোধন করে তবে তাহাদের নিন্দাবাদ হইতে বিরত রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় মাশীল দয়ালু। নিশ্চয়ই যারা অজ্ঞতাবশত: দোষের কাজ করিয়া বসে, তৎপর অল্পকাল মধ্যে তওবা করে, তাহাদের তওবা কবুল করা আল্লাহর দায়িত্ব, আল্লাহ তাহাদের প্রতি সুদৃষ্টি করিয়া থাকেন, আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও মহাবিজ্ঞানী। সূরা-৪: নিসা, আয়াত:১৫-১৭
এখানে দুইপক্ষকেই শাস্তি দিতে বলা হয়েছে।
আচ্ছা, এ তো গেল আইন। প্রয়োগের ব্যাপারে কী?
সৌদির কুখ্যাত ব্লান্ডারের নাম কাতিফ রেইপ কেইস। এই কেইসে একজন নারীকে ৮ জন পুরুষ মিলে ধর্ষণ করে। ভিক্টিমকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে একজন তাকে দেখা করতে ডাকার পর তাকে গাড়িতে করে অপহরণ করে তাকে ধর্ষণ করা হয়। কোর্টে এ বিষয়টি আসার পর কোর্ট ধর্ষকদের সাথে ধর্ষিতাকেও শাস্তি দেয় কারণ সে অপরিচিত লোকের সাথে গাড়িতে উঠেছিল! বিশ্বমিডিয়ায় এই ব্যাপারটি আসার পর এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীলে নারীটির শাস্তি দ্বিগুন হয়ে গিয়েছিল।
ভাবতে পারেন? অপহৃত হওয়াকেও যে দেশে দোষ হিসাবে গণ্য করা হয় সে দেশের স্ট্যান্ডার্ডে ধর্ষণের শাস্তি চাওয়া কেমন বোকামী হতে পারে? কিন্তু এই জিনিস আমাদের দেশীয় মুমিনদের বলতে গেলেই তারা চাপাতি নিয়ে ঘাড় ফেলে দেবে।