বিডিনিউজ২৪, ২৫শে নভেম্বর ২০২০-
“নির্যাতনের শিকার নারীদের সহায়তায় সরকারের জাতীয় হেল্পলাইন ‘১০৯’ এ চলতি বছরের অগাস্ট পর্যন্ত নয় লাখ তিন হাজার ৮৩০ জন নারী ও শিশু সহায়তা নিয়েছেন।
২০১৮ সালে ছয় লাখ ৫০ হাজার এবং ২০১৯ সালে ১৮ লাখ ১১ হাজার নারী ও শিশু চিকিৎসা সেবা, কাউন্সেলিং, পুলিশের সহযোগিতা, আইনী ও অন্যান্য সহযোগিতা নিয়েছেন।
আর ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেলে জুলাই পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার ৪২ হাজার ৮৪৩ জন নারী ও শিশু চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৮৪২ জন যৌন নির্যাতন ও ২৮ হাজার ৪৯৪ জন শারীরিক নির্যাতনের শিকার।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্ধযুগে সবচেয়ে বেশি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২০১৯ সালে। গত বছর দেশে এক হাজার ৩৭০টি ধর্ষণ, ২৩৭টি গণধর্ষণসহ চার হাজার ৬২২টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দুই হাজার ৭১১টি নির্যাতনের তথ্য পেয়েছে মহিলা পরিষদ। এর মধ্যে গত মাসে ১৭১টি ধর্ষণ, ৪৪টি গণধর্ষণসহ সবচেয়ে বেশি ৪৩৬টি নির্যাতনের ঘটনা এসেছে।”
এভাবে গত ১০/১৫ বছরের পরিসংখ্যান বের করলে নারী নির্যাতনের ঘটনার ঊর্ধ্বমুখীতাই দেখা যাবে। অনেকেই বলতে পারেন রিপোর্ট বেশি হয় বলে এখন পরিসংখ্যানে বেশি আসে এসব ব্যাপার। কিন্তু সত্যটা আসলে তা না, এখনো অধিকাংশ ঘটনাই পত্র-পত্রিকায় আসে না, গ্রাম্য সালিশি বিচারে শেষ হয়ে যায়। পঞ্চায়েতের বিচারে ধর্ষককে কানে ধরানো, ধর্ষকের সাথে বিয়ে, এবিউজিং স্বামীর সাথে মানিয়ে নিয়ে সংসার করা, ধর্ষককে সামান্য অর্থদণ্ড, ইত্যাদি flick in the wrist শ্রেণির শাস্তি দেয়া হয় এখনো। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নারী শিক্ষার উন্নয়ন, প্রগতিশীল নীতিমালার প্রণয়নের পরেও কেন এই অবস্থা এটা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত।
আমার মনে হয় আসল সমস্যা পুরুষতান্ত্রিকতা এবং ধর্মে নিহিত আছে।
কোরানে বর্নিত আছে-
তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র, সুতরাং তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যে প্রকারে ইচ্ছা অবতীর্ন হও। সূরা-২: বাকারাহ, আয়াত:২২৩
“পুরুষগণ নারীদিগের উপর কর্তৃত্বশীল, এই কারনে যে, আল্লাহ উহাদের কাহাকেও কাহারও উপর মর্যাদা প্রদান করিয়াছেন, এবং পুরুষেরা স্বীয় মাল হইতে তাহাদের অর্থ ব্যয় করিয়াছে, ফলে পূন্যবান রমনীগন অনুগত থাকে, অজ্ঞাতেও তত্ত্বাবধান করে, আল্লাহর তত্ত্বাবধানের মধ্যে…” সুরা ৪, আয়াত ৩৪।
এসব আয়াত পরিষ্কার করে দেয় যে আল্লাহ নারীদের পুরুষের অধীনস্থ প্রাণি হিসাবে সৃষ্টি করেছেন, তাদের আলাদা কোনো সত্ত্বা নেই। পুরুষ যেভাবে ইচ্ছা নারীকে ব্যবহার করবে, আর নারীর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে সেটার বিচার পুরুষের মন মত হবে। এই ব্যাপারগুলি একই সাথে অপরাধ প্রবণতাকে আর বিচারহীনতাকে উস্কে দেয়।
অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং বিচারের পূর্বশর্ত হচ্ছে সহমর্মিতা।
ভুক্তভোগীর প্রতি সহমর্মিতা সভ্য দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে। বিচারের ক্ষেত্রেও তাই। কিন্তু ইসলামী জুরিসডিকশনে যেহেতু নারীকে পুরুষের অধীনস্থ দেখানো হয়েছে সেহেতু এখানে সহমর্মিতার চেয়ে ক্ষতি/ক্ষতিপূরণ বড় প্রভাবক। ধর্ষণের ভিক্টিমকে বাদ দিয়ে তার অভিভাবকের “সম্মানহানি” বড় করে দেখার ব্যাপারটা এখানে খুব relevant।
নারীকে মানুষ হিসাবে দেখা কোনো আইন করে নিশ্চিত করা সম্ভব না। মানুষের মানসিকতা বদলানো প্রয়োজন। কিন্তু মানসিকতাকে প্রগতিশীল পথে বদলানোর সাথে আরো অনেক ব্যাপার চলে আসে। Egalitarian values যে কোনো শোষনযন্ত্রের জন্যে ক্ষতিকর। পূঁজিবাদ, পুরুষতন্ত্র, আমলাতন্ত্রের মত এস্টাবলিশমেন্ট মানুষের মধ্যে egalitarian values চায় না কারণ এতে তাদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
সে কারণেই সরকার গোড়া কেটে আগায় পানি দিচ্ছে।