যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে আওয়ামীলীগ সরকার তাদের নোংরা রাজনীতির প্রতিফলন করেছে। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার জন্য আওয়ামীলীগ তার ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ওয়াদা করেছিল। সে কারণে ভারতের সহায়তা পেয়ে তারা নির্বাচনে জয়লাভও করেছে।
কিন্তু নির্বাচনে জয় পাওয়ার পর তারা ৪ বছর পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয় নি এই ওয়াদা পূরণের। ঐ মেয়াদের শেষ বছর এসে তারা নির্বাচনী ইস্যু হিসেবে কাদের মোল্লার রায় নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করে।
স্কাইপে কেলেংকারী ফাস হবার পর আমরা জানতে পারি এসব রায় ফরমায়েশি রায়। সরকার তাদের মনমত রায় দেয়, সেগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে রায় হিসেবে আসে।
কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবার পরে সরকার সমর্থকদের দ্বারা শাহবাগে বিরিয়ানি আন্দোলন শুরু হয়। চিহ্নিত আওয়ামীপন্থী ব্লগার অমি রহমান পিয়াল, আজম খান, আসিফ মহিউদ্দিনরা শাহবাগে বসে আওয়ামীলীগের ফ্যাসিবাদী মতবাদকে পাকাপোক্ত করতে দিন-রাত ফাসি চাইতে থাকে।
ভারত থেকে বিপুল পরিমানে অর্থ আর নিরাপত্তা নিয়ে শাহবাগে নাস্তিক ব্লগারদের আন্দোলন ছিল মূলত আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের সিড়ি। দিন রাত সেখানে বসে বিরিয়ানি খেয়ে খেয়ে তারা আন্দোলন করে।
আন্তর্জাতিক আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার সুযোগ ছিল না। এই আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ আপীল করার সুযোগ এনে দেয় যেন সবাইকে তাদের মনমত রায় দিতে পারে। কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন দেয়ার পরে আওয়ামী লীগ শাহবাগের মাধ্যমে এই আইনে পরিবর্তনকে জনদাবি হিসাবে দেখিয়ে আইন পরিবর্তন করে।
আইনে আনা পরিবর্তনে আসামীপক্ষের পক্ষে কোনো রায় আসে নি। সব রায়ই সরকারের মনমত এসেছে। এ থেকে বুঝা যায় এই পরিবর্তন শুধু সরকারের পক্ষে কাজ করার জন্যেই করা।
শাহবাগের আন্দোলনের মাধ্যমে মব ট্রায়ালের মাধ্যমে সবাইকে ফাসির রায় দিয়ে দেয়া হয়েছে, যার প্রতিফলন আদালতের রায়েও এসেছে। এমন প্রক্সি আন্দোলন আদালতের মুক্তভাবে কাজ করাকে বাধাগ্রস্ত করে। আওয়ামীলীগ এটাই চেয়েছিল।
শাহবাগের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের সূচনা করেছে আওয়ামীলীগ। নিজেদের পেইড সমর্থকদের দিয়ে সারা দেশে নিজেদের পক্ষে একই সময়ে আন্দোলন করিয়েছে যেন মানুষ মনে করে দেশে আওয়ামীলীগের জন্যে জনসমর্থন আছে।
শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, পদ্মাসেতু দূর্নীতি, হলমার্ক কেলেংকারী, শেয়ারবাজারে ধ্বস, ইত্যাদি ইস্যু থেকে চোখ সরিয়ে মিডিয়ার মাধ্যমে সবার চোখ শাহবাগে আটকে দিয়েছিল সরকার। এই কয়দিন আর কোনো খবরই আসে নি মিডিয়ায়, ২৪ ঘন্টা শাহবাগ, শাহবাগ, শাহবাগ।
সংসদে আওয়ামী লীগ শাহবাগের সমর্থনে বিবৃতি দেয়। রাস্তা বন্ধ করে দিনের পর দিন আন্দোলন চলতে থাকে। কিন্তু বিএনপি জনসভা করার সুযোগ পায় না।
শাহবাগী ব্লগাররা সন্ত্রাসবাদী দাবি জানিয়ে দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধার খেতাব পায়। অথচ বিএনপির মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকার বানিয়ে দেয়া হয় শুধু প্রশ্ন তোলার কারণে! কাদের সিদ্দিকীর মত বর্ষিয়ান মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করা হয় মিডিয়া। আসিফ নজরুল, পিয়াস করিমের মত বুদ্ধিজীবিদের রাজাকার বানিয়ে দেয়া হয় সত্য কথা বলার কারণে।
শাহবাগ থেকেই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়েছে। আর শাহবাগের কারণেই বাংলাদেশে আগামী অনেক বছর ফ্যাসিবাদীরা টিকে থাকবে।