বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড

অনেকে ভাবেন আওয়ামীলীগ বিএনপি দুটোই খারাপ দল। ওরা এক অন্যকে মেরে ফেললে কার কী আসে যায়! সাধারণ জনগণের তো কোনো ক্ষতি নাই এতে। তাদের জন্য চোখ খুলে দেয়ার মত ঘটনা হচ্ছে বিশ্বজিত হত্যাকাণ্ড।

২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে ছাত্রলীগের গুন্ডারা নিরপরাধ বিশ্বজিতকে হত্যা করে। বিশ্বজিত কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। সে সামান্য একটা দর্জি ছিল। তার অপরাধ? সে ভুল সময়ে ভুল জায়গায় উপস্থিত ছিল।

বিএনপির ডাকা হরতালের মিছিল নিয়ন্ত্রণের “দায়িত্ব” পেয়েছিল ছাত্রলীগ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দিয়ে বিশ্বজিত হেটে তার দোকানে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা রড আর চাপাতি নিয়ে তার উপর ঝাপিয়ে পরে। সে বাঁচতে চেয়ে দৌড় দিয়ে দোতলা একটা বিল্ডিংয়ে আশ্রয় নেয়। কিন্তু খুনী ছাত্রলীগ কর্মীদের মাথায় তখন মানুষ হত্যার নেশা চড়ে বসেছে।

তারা বিশ্বজিতকে খুজে বের করে এলোপাতাড়ি কোপ এবং রড দিয়ে পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে তার গায়ে রড ঢুকিয়ে দেয়া হয়। সে মাটিতে লুটিয়ে পরলে আশেপাশের কিছু লোক তাকে হাসপাতালে নিতে চায়, কিন্তু খুনীরা এতোটাই পিশাচ যে তাদের কোনো কথাই শুনে নি। বিশ্বজিতের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরেই তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

বিশ্বজিত কোনো রাজনৈতিক দল করতো না। সে সাধারণ জনগণই ছিল। ছাত্রলীগের হাতে সাধারণ জনগণও নিরাপদ না।

এ ঘটনা নিয়ে দেশে তোলপাড় শুরু হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে বিচার হয়। কিন্তু আপীলে দেখা যায় ফাঁসির শাস্তি পাওয়া আসামীকেও খালাস দিয়ে দেয়া হয়! আওয়ামিলীগ করার সুবিধা এই-ই।

দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলা পরিচালনা করা হয়। ৮ ডিসেম্বর, ২০১৩ বুধবার দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটের দিকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক এ বি এম নিজামুল হক এ রায় ঘোষণা করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মীর মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। বাকি ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, এবং প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন আদালত। তবে আসামীদের মধ্যে মাত্র আটজন গ্রেপ্তার ছিলেন, এবং বাকি ১৩ জন ছিলেন পলাতক।

পরবর্তীতে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড পাওয়া ৮ জনের মধ্যে ২ জন বেকসুর খালাস, ৬ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং মাত্র ২ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। সেই সাথে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে যাবজ্জীবন কারাদন্ড পাওয়া দুইজন আসামীকেও খালাস দেওয়া হয়।

আপনি যত বড় অপরাধীই হোন না কেন, যত বড় শাস্তিই হোক না কেন আপনার, আপীলে আপনাকে মাফ করে দেওয়া হবেই। আপীলে না হলে রাষ্ট্রপতি তো আছেই। উনি মাফ করার জন্যেই রাষ্ট্রপতি হয়েছেন।

 

 

You may also like...

StatCounter - Free Web Tracker and Counter
Read previous post:
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব?

আশি হাজার মামলায় বিএনপির বিশ লাখ নেতা ও কর্মী আসামী। এই কথা বলেছেন প্রবীন রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ। সংখ্যাটি...

Close