এই বছরের অন্যতম আলোচনার বিষয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক মাসে ২০ কোটি টাকা খাবারের বিল এসেছে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবর নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। করোনাভাইরাস চিকিৎসায় ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের খাবারের বিল নিয়ে বিতর্কের মুখে সরকার এসব বিল খতিয়ে দেখার আগে অর্থ পরিশোধ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক সংবাদ সম্মেলন করে এসব খবরকে ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যমূলক হিসাবে উল্লেখ করেন। তিনি এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, চিকিৎসক, নার্স এবং নিরাপত্তা কর্মী মিলিয়ে প্রায় ৩৭০০ জনের থাকা, খাওয়া এবং পরিবহন বাবদ দুই মাসে ২৬ কোটি টাকার মতো খরচ হতে পারে। সেখানে তারা ২০ কোটি টাকা চাইলে সরকার তা বরাদ্দ করেছে, কিন্তু সেই বরাদ্দ থেকে কোন বিল এখনও পরিশোধ করা হয়নি। “যে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তা থাকা, খাওয়া এবং পরিবহন বাবদ দেয়া হয়েছে। হোটেল ভাড়া বাবদ ১২কোটি ৮০ লক্ষ টাকা, খাওয়া বাবদ পাঁচ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা এবং পরিবহন খরচ বাবদ এক কোটি ৭০ লক্ষ টাকা এই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত এই ২০ কোটি টাকা থেকে এখনও কোন বিল পরিশোধ করা হয়নি।”
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন আরও বলেন, “কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য সাধারণ সময়ের চেয়ে চারগুণ বেশি লোকবল লাগছে। এ হাসপাতালে এখন প্রায় সাড়ে ৬০০ এর বেশি করোনা রোগী রয়েছেন।” তাছাড়া তিনি জানান, ইতোমধ্যে তাদের যাতায়াত, আবাসন ও খাওয়া বাবদ ১৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যখন বাজেট চাওয়া হয় তখন জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ২০ কোটি টাকার মতো বাজেট দেওয়া হয় এবং সেটা তারা বিবেচনা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর অনুমোদন পায়।
এক মাসের খাবারের বিল ২০ কোটি টাকা-এ ধরণের শিরোনামে প্রকাশিত খবর নিয়ে আলোচনা জাতীয় সংসদেও উঠেছিল। এ নিয়ে বিরোধীদলের সংসদ সদস্যদের তোপের মুখেও পড়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারিরা পুরো ঘাটনাটি তদন্তের দাবি তুলেছেন। করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় স্বাস্থ্যখাতে যে ব্যয় হবে, তাতে স্বচ্ছ্বতা আনার জন্য আরও কঠোর নিয়ম দাবি করেন তারা।
স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী টাকার এই পরিমান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ বিশ্লেষকদের মতে, শুধু ঢাকা মেডিকেল নয়, এর সাথে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও জড়িত৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঢামেক এর এই বিলকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বললেও তাদের অনুমোদন ছাড়া তো এই বিল পাশ হয়নি। তারা এই দায় কিভাবে এড়াবেন?
ঢাকা মেডিকেলের তথ্য অনুযায়ী সেখানে এখন ৭০০ করোনা রোগী আছেন৷ করোনা চিকিৎসায় এখন তাদের মোট দুই হাজার চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, অন্যান্য কর্মচারী ও আনসার কাজ করেন৷ তাদের প্রত্যেকের দিনে দুই বেলার খাবার ও সকালের নাস্তার খরচ ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা৷ তাদের থাকার জন্য ৩০টি হোটেল ভাড়া করা হয়েছে যার বেড ভাড়া ৫০০ থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা৷ তাদের আনা নেয়ার জন্য যানবাহন ভাড়া করা হয়েছে ৷ এছাড়া চারটি ডাবল ডেকার বাসও ভাড়া করা হয়েছে৷ এইসব খরচ বাবদ ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে৷ যে ৩০টি হোটেল ভাড়া করা হয়েছে তারমধ্যে রিজেন্সি ও লা-ভিঞ্চির মত হোটেলও আছে৷
হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সাত দিন দায়িত্ব পালনের পর ১৪ দিন কোয়ারান্টিনে থাকেন৷ সুস্থ থাকলে পরের সাত দিন তারা বাসায় থাকেন৷ যারা আক্রান্ত হন তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়৷ ২১ দিনের থাকা খাওয়া এবং যানবাহন সবই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় হয়৷ এই সবকিছুর খরচই এর মধ্যে দেওয়া হয়েছে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷
এছাড়া ঢাকা মেডিকেলে কোভিড চিকিৎসার শুরুতে এক কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়৷ এর বাইরে আর কোনো টাকা এখনো খরচ করা হয়নি বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করে৷ এখন বিল তৈর হচ্ছে৷ নতুন ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ থেকে সেই বিল পরিশোধ হবে৷ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিরউদ্দিন বলেন,‘‘এটা অংকের ব্যাপার৷ যোগ, বিয়োগ , ভাগ করলেই বোঝা যাবে৷ রাখঢাকের কিছু নাই৷’’