অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি

চলতি বছরের (২০২০) আরও একটি দুখঃজনক ঘটনা অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি। যাত্রীরা দেখতে পাচ্ছিলেন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা গন্তব্যে পৌছাবেন আর এর মধ্যেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ঢাকার শ্যামবাজারের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীতে ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় মোটর লঞ্চ মর্নিং বার্ড লঞ্চটি চোখের সামনেই অল্প সময়ের মধ্যে পুরো ডুবে যায়।  প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে পরে জানা গেছে, দুটো লঞ্চই পশ্চিম দিক থেকেই আসছিল এবং শুরুতে প্রায় পাশাপাশিই ছিল। মর্নিং বার্ড উত্তরপাশে, আর ময়ূর-২ দক্ষিণ পাশে ছিল। মর্নিং বার্ড ছিল একটু সামনে। এর মধ্যে ময়ূর-২ এর সঙ্গে ধাক্কা লাগলে মর্নিং বার্ড পুরো ঘুরে যায়। এরপর ময়ূর-২ সেটার ওপর উঠে গেলে মুহূর্তের মধ্যে ডুবে যায় মর্নিং বার্ড।

বুড়িগঙ্গা নদীতে ওই দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৪ জনের লাশ পাওয়া গেছে। মর্নিং বার্ডের মাস্টার আমির হোসেন ও চালক বাদল হাওলাদারের খোঁজ কেউ দিতে পারেনি। তবে বিআইডব্লিউটিএ থেকে জানা যায়, ডুবে যাওয়া লঞ্চটির মাস্টার এবং চালক দুজনই তৃতীয় শ্রেণির ছিলেন। তৃতীয় শ্রেণির চালক এবং মাস্টার কিভাবে অনুমতি পেয়েছে লঞ্চ চালানোর সেটাই আসলে ক্ষতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তারা সংগঠনের সদস্য কিনা সেটাই কেউ বলতে পারে নি। এরকম জবাবদিহিতা, অব্যবস্থাপনা থাকলে কোন দুর্ঘটনার মূল উটপাটন তো করাই যাবে না উপরন্ত এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতেই থাকবে। 

দুর্ঘটনার পর ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদ, মাস্টার আবুল বাশার, মাস্টার জাকির হোসেন,স্টাফ শিপন হাওলাদার, শাকিল হোসেন, হৃদয় ও সুকানি নাসির মৃধাসহ অজ্ঞাত নামা পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেছে নৌ পুলিশ। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ওই মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

দুর্ঘটনার পর সদরঘাটের একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও  সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে পেছন দিকে চলতে থাকা ময়ূর-২ এর ধাক্কায় তুলনামূলকভাবে আকারে অনেক ছোট মর্নিং বার্ডকে মুহূর্তের মধ্যে বুড়িগঙ্গায় ডুবে যেতে দেখা যায়।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজে যেভাবে ঘটনাটি দেখতে দেখা গেছে তাতে মনে হয়েছে ধাক্কা দেওয়ার বিষয়টি ‘পরিকল্পিত’। তিনি আরও বলেন, “নৌযান শ্রমিকেরা নিয়ম-কানুন না মেনেই পরিবহন চালান, এবং এর ফলে নানা ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে।”

ঢাকার বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনায় ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক ও মাস্টারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’ ঘটানোর অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ৷

ডুবে যাওয়ার প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর এমএল মর্নিং বার্ডের ভেতর থেকে একজনকে জীবত উদ্ধার করা হয়েছে৷ তিনি কিভাবে ডুবে যাওয়া জাহাজের ভেতর দীর্ঘ সময় জীবিত ছিলেন তা নিয়ে হইচই পড়ে গেছে৷ উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির নাম সুমন ব্যাপারী (৩৫)৷ তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে আনুমানিক ৫০-৬০ জন যাত্রী ছিল বলে জানা যায়। মূলত সদরঘাট, সোয়ারীঘাট এবং মিটফোর্ড এলাকায় ব্যবসাবাণিজ্য করেন, এবং মুন্সীগঞ্জ থেকে সকালে ঢাকায় এসে বিকেল-সন্ধ্যায় ফিরে যান এমন মানুষেরা নিয়মিত এই রুটে যাতায়াত করেন।

পোস্তগোলা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদের একটি দল উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এদের মধ্যে ২৩ জন পুরুষ, আটজন নারী এবং তিনজন শিশু। এখনই এসব অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে এধরণের অবহেলাজনিত মৃত্যু ঠেকানো যাবেনা। দোষীদের খুজে বের করে শাস্তি দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। 

You may also like...

Read previous post:
করোনা ও মুজিববর্ষ

২০২০ সাল শেখ মুজিবের জন্মের শততম বার্ষিকী ছিল। আওয়ামীলীগ সরকার এই বছরটিকে উদযাপন করার জন্য সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল অনেক...

Close