বছর শেষে আলোচনায় ‘শুদ্ধি অভিযান’

ঘটনাবহুল একটি বছর ছিলো ২০১৯ সাল। বছরের শেষলগ্নে এসে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মিলিয়ে নতুন বছরের প্রস্তুতির সাথে সাথে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বিদায়ী বছরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সরকার ঘোষিত ‘শুদ্ধি অভিযান’।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দল-মত নির্বিশেষ ‘শুদ্ধি অভিযানের’ ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিভিন্ন খাতের অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও অবৈধ অর্থের বিরুদ্ধে তৎপরতা শুরু করে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা।  

বিশেষ এই অভিযানটিতে সরাসরি দায়িত্ব পালন করে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। ১৮ সেপ্টেম্বরে রাজধানীতে অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে যেই অভিযান শুরু করে র‌্যাব, তা ছিলো সরকার ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের অংশ। অভিযান শুরুর দিন বিকেলে ফকিরাপুলের ইয়াং ম্যানস ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযান চালানো হয়। ওইদিন রাতেই একে একে ওয়ান্ডার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ ক্লাবে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ক্যাসিনোর সন্ধান পাওয়া যায়। সেদিন রাতেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (পরে বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের বাসা থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়। 
এরপর ২০ সেপ্টেম্বর আরেক যুবলীগ নেতা ‘টেন্ডারবাজ’ খ্যাত জি কে শামীমকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় তার অফিস থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর উদ্ধার করা হয়। একই দিন রাতে রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ও ধানমন্ডি ক্লাবে অভিযান চালানো হয়, গ্রেফতার করা হয় কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি ও কৃষকলীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজকে।

আলোচিত শুদ্ধি অভিযানে র‌্যাব দেশি-বিদেশি মুদ্রাসহ প্রায় ৯ কোটি নগদ টাকা জব্দ করে। উদ্ধার করা হয়েছে  প্রায় ১৬৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার এফডিআর, ১৩২টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই এবং ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক। ৭.২০ ভরি অলংকারও (৮ কেজি) জব্দ করা হয়েছে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৪ কোটি টাকা। এছাড়া, বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার এবং অবৈধ অস্ত্র হিসেবে মোট ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, বিদেশি মদ উদ্ধার করেছে বাহিনীটি।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযান দেশের সাধারণ মানুষের সমর্থন পেয়েছে। আরো আগেই এ ধরনের অভিযান চালানোর দরকার ছিল। ক্ষমতাসীন দলে ভিড়ে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া, ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে টাকার ভাগাভাগির খবর এসেছে গণমাধ্যমে। এই অভিযানের ভেতর দিয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ পরিশুদ্ধ করা করা শুরু হয়েছে। 
শুদ্ধি অভিযানে সকলেই খুশি। তবে এই ধরনের  অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। প্রশাসনযন্ত্র রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত। মাঠপর্যায়ে সরকারদলীয় উচ্ছৃঙ্খল কিছু প্রভাবশালী নেতাকর্মী ও প্রশাসনের দুর্নীতিবাজদের যোগসাজশে দুর্নীতি উন্নয়নের প্রধান বাধা হয়ে পড়েছে। এর জন্য দেশকে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছানো কষ্টকর। উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই ধরনের  অভিযানের কোন বিকল্প নেই। এই ধরনের শুদ্ধি অভিযান জনগণ কর্তৃক অভিনন্দিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। সকলের উচিত এই ধরনের  অভিযানকে সফল করতে সহায়তা করা।

You may also like...

Read previous post:
বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড

অনেকে ভাবেন আওয়ামীলীগ বিএনপি দুটোই খারাপ দল। ওরা এক অন্যকে মেরে ফেললে কার কী আসে যায়! সাধারণ জনগণের তো কোনো...

Close