২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি মুদ্রায় লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের (এলইসি) তালিকাভুক্ত হয় ‘বাংলা বন্ড’। এটি আসলে ‘টাকা বন্ড’ যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলা বন্ড’। বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সহায়তায় এ বন্ড চালু হয়।
এলইসিতে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এখন প্রবাসী বাংলাদেশিরা টাকা বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন। বিনিয়োগ সুযোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অর্থায়ন সংকটও কিছুটা দূর হবে এর মাধ্যমে। এই বন্ডটি হবে তিন বছর মেয়াদী। বাংলা বন্ড চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উঠল। এই বন্ডে বেসরকারি খাতের যারা বিনিয়োগ করবেন, তারা সুদ পাবেন ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আর বন্ড থেকে টাকা নিয়ে যারা তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন, তাদের সুদ পরিশোধ করতে হবে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ।
২০১৫ সালে বিদেশে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকায় বন্ড ছাড়ার অনুমতি পায় আইএফসি। চার বছর পর বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ পূঁজি বাজারে সেই বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে তিন বছর মেয়াদি করা হলেও পরে তা বাড়িয়ে পাঁচ বছর, এমনকি ১০ বছর মেয়াদি করারও পরিকল্পনা রয়েছে। এ দফায় ৮০ কোটি টাকার ছাড়া হলেও শিগগিরই এই বন্ডের আকার হবে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং পর্যায়ক্রমে তা ৮ হাজার কোটি টাকাতেই উন্নীত হবে। বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে অর্থায়নের জন্য এক কোটি ডলারের সম-পরিমাণ এই বন্ড ইস্যু করেছে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইএফসি (ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স কর্পোরেশন) যারা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেসরকারি খাতে ঋণ দেয়।
বন্ড ছেড়ে বিনিয়োগ জোগাড় সারা বিশ্বেই একটি প্রচলিত পন্থা, বাংলাদেশে এখন সেই পথে পা দিচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান যে অবস্থা তাতে বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা এখন অনেক মজবুত। সবচেয়ে বড় কথা যে সব বেঞ্চমার্কের ভিত্তিতে কোনো দেশের অর্থনীতির মূল্যায়ন তার অন্যতম হচ্ছে ঋণের পরিমাণ। বাংলাদেশে এখন জিডিপির তুলনায় ঋণের পরিমাণ মাত্রা ৩৪ শতাংশ যেটা পুরো বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই ‘ইতিবাচক’ বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে বিদেশে থেকে ‘প্রতিযোগীতামূলক সুদে’ বেসরকারি বিনিয়োগ জোগাড়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এক কোটি ডলার দিয়ে শুরু করে টাকার বন্ড ছেড়ে বছরে ১০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিনিয়োগ জোগাড়ের লক্ষ্যে এখন কাজ চলছে।
এটি খুবই ইতিবাচক যে পরিমাণ অর্থের বন্ড ছাড়া হয়েছিল, কেনার আগ্রহ ছিল তার চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি কিনেছে বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীরা যাতে বাংলা বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন সেদিকে নজর দেওয়া উচিৎ। কেননা অনেক প্রবাসীরাই বিনিয়োগের সুযোগ খোজে এবং তারা কিনলে বন্ডের দামও বাড়বে।
মুনাফা বেশি হলে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উচ্চ হারে মুনাফা পাওয়ার সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে। যদিও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা কতটা অব্যাহত থাকবে, অভ্যন্তরীণ সুদের হার কী হবে এবং কত ভালো বিনিয়োগ প্রকল্প সেখানে পাওয়া যাবে সেটা বলা মুশকিল। তবে বর্তমানে টাকা স্থিতিশীল যেকারনে অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। তাছাড়া বৈদিশিক মুদ্রার সাথে টাকার বিনিময় হারও স্থিতিশীল। আর কোনো দেশের মুদ্রা যদি স্থিতিশীল হয় তাহলে তা অত্যন্ত ইতিবাচক। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সেটাই দেখা যাচ্ছে।
এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে যে কোনো বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগ থেকে ভালো মুনাফা পাবন। এখনকার বিশ্বে খুব কম জায়গাতেই বিনিয়োগ থেকে বড় মুনাফা আসে। সুতরাং ডলারে বিনিয়োগ না করে অনেক মানুষই টাকায় বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবে।