মেট্রোরেল প্রকল্প

রাজধানী ঢাকা শহরে দুই কোটির বেশি মানুষের বাস। কিন্তু সেই তুলনায় নাগরিক সুবিধা অপ্রতুল। বিশেষ করে স্বাচ্ছ্যন্দে নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য চলাচলের ক্ষেত্রে নাগরিকদের বেশ অসুবিধায় পরতে হয়। যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভোগান্তির যেন শেষ নেই এই মেগা সিটির নাগরিকদের। নগরবাসীর নিত্যদিনের ভোগান্তি কমিয়ে আনা এবং সময় বাঁচাতে সরকার রাজধানী ঢাকাকে মেট্রোরেলের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) প্রকল্পের অধীনে নগরীজুড়ে অন্তত ছয়টি এমআরটি লাইন স্থাপনের কাজ চলছে।

২০১৯ সালে নতুন করে দুটি মেট্রোরেলের প্রকল্প বরাদ্দ করা হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকের সভায় এ দুটি প্রকল্প পাস হয়। এতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা।  
নতুন দুই মেট্রোরেলের মধ্যে একটি হবে বিমানবন্দর থেকে নতুন বাজার, বাড্ডা হয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত। এর দৈর্ঘ্য হবে ৩১ কিলোমিটার। এটি ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বা লাইন-১ নামে পরিচিত হবে।
আরেকটি মেট্রোরেল হবে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার, গাবতলী, মিরপুর-১, কচুক্ষেত, বনানী, গুলশান-২, নতুনবাজার হয়ে ভাটারা পর্যন্ত। এর দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। এই রুটটি এমআরটি লাইন-৫ নামে পরিচিত হবে।
প্রথম প্রকল্পে খরচ হবে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। প্রথম প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৬ সালের জুন মাসে। দ্বিতীয় প্রকল্পে খরচ ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। শেষ হবে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। দুটি প্রকল্পেই জাপানের সাহায্য সংস্থা জাইকা অর্থায়ন করবে।

এছাড়া উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের মেট্রোরেল লাইন-৬-এর একাংশ এখন দৃশ্যমান। কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। চলতি বছরই মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পারবেন নগরবাসী। প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে চালু হবে মেট্রোরেল। এর মধ্য দিয়ে মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করবে রাজধানী ঢাকা। কাজ শেষ হলে এটি চলবে একেবারে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। এটির দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। আর এই ২০ কিলোমিটারের মধ্যে স্টেশন হবে ১৬টি। এটি চালু হলে ঘণ্টায় উভয় দিকে ৬০ হাজার যাত্রী বহন করবে মেট্রোরেল। একই সময়ে উভয় দিকে ২৪ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কোচ। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে মেট্রোরেল। লাইন-৬ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এখন অপেক্ষা প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কেননা মেট্রোরেল চালু হলে রাজধানী ঢাকার যানজট কিছুটা হলেও নিরসন হবে। 

এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের পাশাপাশি দ্বিতীয় অংশের কাজও শুরু হয়ে গেছে। আগারগাঁও থেকে ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ, পল্টন ও মতিঝিল পর্যন্ত দেখা গেছে, আগারগাঁও-মতিঝিল পর্যন্ত প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ করার জন্য মূল সড়কের মধ্যখানের সড়ক বিভাজন বরাবর কাজের জায়গা সংরক্ষণ করে দুই পাশে প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে রাস্তার অংশে সার্ভিস লাইন সরানোর কাজ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি নয়টি টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ শেষ করে মূল পাইলের কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে মেট্রোরেল লাইন-১-এর জন্য ইতিমধ্যে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। লাইন-১ হবে বিমানবন্দর-কমলাপুর পর্যন্ত। বর্তমানে এর জরিপকাজ চলছে। জরিপ শেষ হলে নিশ্চিত হওয়া যাবে এ প্রকল্পে কী পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এটি হবে মূলত পাতালরেল। এ ছাড়া অন্য এমআরটি লাইন-৫, ৪, ৩ ও ২ নির্মাণে প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই বাছাই কাজ শুরু হয়েছে।
মেট্রোরেলের এই প্রকল্পগুলোকে সড়কের সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রকল্প বলা যায়। তবে নির্মাণ শেষ হলে ঢাকা হবে বিশ্বমানের শহর আর নগরবাসী হবে অনেকটাই যানজটমুক্ত। 

You may also like...

Read previous post:
আওয়ামী লীগ নামের কুলাঙ্গারের তথাকথিত উগ্র জঙ্গী সংগঠন হইতে সাবধান!!

১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ৭০ বছর উদযাপন করছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী...

Close