বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা এখন খেলাপি ঋণ। এই সমস্যা এখনো আছে আগেও ছিলো। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া মানে যে টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে তা আটকে যাওয়া। এর নানামুখী প্রভাব আছে। এ বিনিয়োগের জন্য ব্যাংককে কর দিতে হয়। সুদ স্থগিত থাকে, আবার এ জন্য ব্যাংককে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। যার ফলে ব্যাংকের মুনাফা কমতে থাকে। আবার এ টাকা ব্যবহারের মধ্যে না থাকায়, নতুন করে ঋণ দেওয়া যায় না এতে আমানতের ওপর চাপ পড়ে। আবার এতে করে ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ঘাটতি হয়, মূলধনেও চাপ পড়ে। পুরো বিষয়টি একটা চক্রের মতো। যার কারনে পুরো ব্যাংকই খেলাপি ঋণের কারণে চাপে পড়ে যায়।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ঋণখেলাপির সংখ্যা ছিলো দুই লাখ ৬৬ হাজার ১১৮ জন বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংসদ ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী দেশের শীর্ষস্থানীয় ২০ ঋণ খেলাপির নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেন সেই সময়ে।এরা হলো- কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেড, সামান্নাজ সুপার অয়েল লিমিটেড, বি. আর. স্পিনিং মিলস লিমিটেড, সুপ্রোভ স্পিনিং লিমিটেড, রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড, রাইজিং স্টিল লিমিটেড, কম্পিউটার সোর্স লিমিটেড, বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ম্যাক্স স্পিনিং মিলস, এস এ অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, রুবিয়া ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আনোয়ারা স্পিনিং মিলস, ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টস লিমিটেড, সুপ্রোভ রোটর স্পিনিং লিমিটেড, ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী নিটওয়্যারস লিমিটেড, সিদ্দিক ট্রেডার্স, রুপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যার লিমিটেড, আলপ্পা কম্পোজিট টাওয়েলস লিমিটেড এবং এম এম ভেজিটেবল অয়েল প্রডাক্টস লিমিটেড।
আওয়ামী লীগের আরেক সাংসদ হাজী সেলিমের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৪ হাজার ২৮৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ সোনালী ব্যাংকের ১২ হাজার ৫২৬ কোটি ৫৩ লাখ, জনতা ব্যাংকের ১২ হাজার ২২ কোটি ৫৪ লাখ, বেসিক ব্যাংকের ৮ হাজার ৪৪১ কোটি ৫৬ লাখ, অগ্রণী ব্যাংকের ৫ হাজার ৬৪৮ কোটি ৫৩ লাখ, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ৮৭০ কোটি ৪৭ লাখ, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ৭৭৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সরকার ছাড়াও বাংলাদেশে ব্যাংক এসব খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন সময়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। পরবর্তীতে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের জন্য বিদ্যমান আইনগুলিতে সংশোধন আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়।
বিগত কয়েক বছরে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ নিয়ে অনেক আলোচনা–সমালোচনা হয়েছে। নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর এ নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রায় এক লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে চলছে বিচার বিশ্লেষণ।