দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচীর মাধ্যমে ভাগ্য পর্রিবতন করেন বহু নিম্নবিত্ত মানুষের। তার বিরুদ্ধে করা হয় প্রতারণা মামলা।
ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা করে চাকরি হারানোর আতঙ্কে পরেন তারই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। বকেয়া পরিশোধ না করায় গ্রামীণ টেলিকমের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসানের বিরুদ্ধে ৬৫টি মামলা করেন তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।
মামলা করার পর থেকে তাদের চাকরিচ্যুতির হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে। চাকরিচ্যুতির হুমকিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মামলা দায়ের করা অনেক কর্মী। তারা বলেন, ‘এখন চাকরিচ্যুত হলে আমরা কীভাবে চলব, পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় যাব? শেষমেষ না খেয়ে মরা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় থাকবে না।’
পরবর্তীতে এই চাকরিচ্যুত করার ‘হুমকি’ দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান। তিনি বলেন, ‘যারা মামলা করেছেন তাদের তো কোনো হুমকি দেয়া হয়নি। তারা পাওনা টাকার জন্য মামলা করেছেন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত। আমরা তো আদালতের বাইরে নই। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তা মাথা পেতে নেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘চার মাসের বেতন দিয়ে যে কাউকেই চাকরিচ্যুত করা যায়, আইনে এমন বিধান রয়েছে। এতে হুমকি দেয়ার কী আছে?’
বকেয়া টাকা পাওয়ার জন্য কর্মীরা আদালতে মামলা করেছিল। এটা তাদের প্রাপ্য অধিকার। অথচ মামলা করায় তাদের চাকরি হারানোর ভয় দেখানো হয়। গ্রামীণ টেলিকমে কর্মরত এক কর্মী বলেন, ‘বর্তমানে গ্রামীণ টেলিকমে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১২০। এছাড়া ট্যালেন্ট সেন্ট্রিক নামক একটি থার্ড পার্টির ২৫ কর্মী এখানে কার্মরত আছেন। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, কোনো স্থায়ী পদে থার্ড পার্টি বা চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ দেয়া যায় না। কিন্তু সেটি মানা হচ্ছে না। এ কারণে আমরা আরও বেশি আতঙ্কগ্রস্ত।’
এরপর এক অনুষ্ঠানে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান মামলা দায়েরকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরা ওয়ার্কার পার্টিসিপেটের টাকা চাও। এটা কোর্ট (আদালত) নির্ধারণ করবে; তোমরা পাবা কি পাবা না? এর পরের স্টেপটা কী? কোর্ট যদি বলে দিয়ে দিতে; আমরা দিয়ে দেব। আর যদি না বলে, আমরা দেব না। আমার ধারণা তোমরা এতে জিতে যাবা। কারণ কোর্ট সবসময় ওয়ার্কারদের পক্ষে থাকে। কেসের (মামলা) ভেতরে গেলে একটা রায় হবে। রায় হওয়ার পরের দিন কী হবে? যারা কেস করেছে তাদের আমরা আর রাখব না। এটা পরিষ্কার সিদ্ধান্ত।’ তিনি আরও বলেন, ‘লোয়ার কোর্টের (নিম্ন আদালত) এসব ছোটখাট আদেশ দিয়ে লাফালাফি করার কিছু নাই। এটা উচ্চ আদালতে গিয়ে স্থগিত হয়ে যাবে। এই ঝামেলার মধ্যে না যাওয়ার জন্য তোমাদের আবারও অনুরোধ করছি। মামলার রায় পেলে তোমরা মনে করছ, এইটা সব চাইতে সিকিউরড (নিরাপদ)। কিন্তু এটা সব চাইতে আন-সিকিউরড (অনিরাপদ)। আমরা চাচ্ছি এটা দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। যারা কেস করবে তাদের নিশ্চিত বিদায় নিতে হবে। এটা ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত।’
তার বক্তব্যতেই কর্মীদের প্রতি হুমকির ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়। গ্রামীণ টেলিকমের মতো প্রতিষ্ঠানের এহেন আচরণ কারো কাছেই কাম্য নয়।