কিভাবে শেখ হাসিনা সাংবিধানিক ও নৈতিক ভিত্তিহীন সরকার হয়ে উঠলেন

বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সর্বজনীন এসব আদর্শের বাস্তবায়ন এবং সেইসঙ্গে সাংবিধানিক মৌলনীতি পালনে ন্যায়পরায়ণ, দুর্নীতিমুক্ত ও শুদ্ধাচারী রাষ্ট্র ।
বাংলাদেশে স্বৈরচার সরকারের সমর্থক ও আগ্রাসনবাদী শক্তির দোসর এক রাজনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। ফ্যাসিস্ট বাকশালের প্রেতাত্মার রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে তার শরীরে- শিরায়। স্বৈরচার এরশাদ আর ওয়ান ইলেভেনের অবৈধ মঈন-ফখরুদ্দিন সরকারকে সমর্থন করেছেন তিনি। আর আগ্রাসনবাদী শক্তি ভারতের ক্রীড়ানক হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেশী দেশটির হাতে তুলে দিয়েছে এই অবৈধ সরকারের পাপেট প্রধানমন্ত্রী। অবৈধ সরকারের আঁতাতে ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন বিনাভোটে। দ্বিতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনার অবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকারের সরকারের চার বছর পার হয়েছে। তথ্য প্রমান এবং বাস্তবতায় দেখা যায়- এই সরকারের সাংবিধানিক, আইনগত কিংবা নৈতিক কোনো ভিত্তি নেই। কোনো বিবেচনাতেই এই সরকারের বৈধতা নেই। স্বাভাবিকভাবে এই সরকারের কোনো কার্যক্রমও বৈধ নয়।

আসুন, শেখ হাসিনার সরকার কেন বৈধ নয় সেদিকে একটু নজর দিই।

দেশের বর্তমান সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাগুলো থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরাসরি সংসদ সদস্য নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে, সিলেকশন নয়। অন্যদিকে ১২২(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকার-ভিত্তিতে সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।

কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী প্রহসনের নির্বাচনের আগেই তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতীয় অপদার্থ কাজী রকিব ১৫৪ কে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা দেন। নির্বাচনের আগেই সরকার গঠন করার মতো ১৫৪ জনকে এমপি ঘোষণা করা হয় যাদের কাউকেই জনগণ পক্ষে কিংবা বিপক্ষে ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। এটা স্পষ্টতই সংবিধানের ৬৫(২) এবং ১২২(১) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। সুতরাং এই সরকার অসাংবিধানিক।
এই সরকার আইনগতভাবেও অবৈধ ও অকার্যকর।

সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর৷ এর মেয়াদ শেষ হবে ২৪ জানুয়ারি৷ সংবিধানের ১২৩-এর ৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে পূর্ববর্তী সংসদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন সাংসদেরা কার্যভার গ্রহণ করতে পারবেন না৷ একটি সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় আরেকটি সরকারের মন্ত্রীসভা গঠন হতে পারে না৷ সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, বিদ্যমান সংসদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন সরকার দায়িত্ব নিতে পারে না৷ আর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন এমন কোন তথ্যও নেই৷ অথচ সরকার সেটাই করেছে।

সংবিধানের ৬৫ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে সাংসদদের সংখ্যা হবে ৩০০ জন৷ মহিলা সদস্যসহ ৩৫০৷ কিন্তু নবম সংসদসহ বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৬৩৮, যা অনুচ্ছেদ ৬৫-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷ ৭১ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে কোনো ব্যক্তি একই সময়ে দুই বা ততোধিক নির্বাচনি এলাকার সাংসদ হবেন না৷ কিন্তু বর্তমানে একই ব্যক্তি একই আসনে নবম ও দশম জাতীয় সংসদের সদস্য৷ ৭২ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে, নবম সংসদ ভেঙে দেয়া হয়নি৷ আর ৭২ (৩) অনুসারে নবম সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন সংসদ এবং সরকার বৈধ হতে পারে না।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নির্বাচন হওয়ার পর আপনা আপনি নবম জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ আইন বিশেষজ্ঞরা পরিস্কার বলেছেন, আওয়ামী লীগ জোর করেই নিজেদের সুবিধা মতো সংবিধানের ব্যাখা দিয়েছে সবসময়।

সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ সর্বসম্মতিক্রমে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল বলে রায় দিয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার ‘অকার্যকর’ এবং সংসদ ‘অপরিপক্ক’। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে স্পষ্ট, বর্তমান সরকার আইনগতভাবেও অবৈধ।

২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর শিক্ষা ভবনের পরিদর্শন ও নিরীক্ষণ অধিদপ্তরে ডিজিটাল মনিটরিং ব্যবস্থার উপর এক প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে বর্তমান ব্যাংক ডাকাত সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রকাশ্যেই স্বীকার করে বলেছেন এই সরকারের সব মন্ত্রীরা চোর এবং তিনি নিজেও চোর। অপরদিকে ব্যাংক ডাকাত সরকারের অর্থমন্ত্রী ডক্টর আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১৬ সালের ৮ জুন চোরাই সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন এই সরকারের আমলে কেবল ‘পুকুর চুরি’ নয় ‘সাগর চুরি’ হয়েছে। এ কথায় প্রমাণিত এই সরকারের নৈতিক ভিত্তিও নেই।

সকল তথ্য প্রমান এবং বাস্তবতা হলো, শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের সাংবিধানিক, আইনগত কিংবা নৈতিক ভিত্তি নেই। এই সরকার অবৈধ, অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক।এই সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে একদিকে প্রতিবাদী মানুষকে গুম খুন অপহরণ করছে অপরদিকে দেশের সরকারি বেসরকারি ব্যাংক থেকে শতশত কোটি টাকা লুটে নিয়ে বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। ব্যাংকে আমানত জামানত রেখেও এই সরকারের হাতে জনগণের অর্থ সম্পদ নিরাপদ নয়। এই সরকার ব্যাংক ডাকাত সরকার।

সবচেয়ে বড় কথা দশম নির্বাচনে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। ফলে এতে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি। একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় চেপে বসা এই সরকারকে বৈধ বলে স্বীকার করে না দেশের মানুষ।

You may also like...

Read previous post:
শেখ হাসিনার সরকারের কোন আইনগত, সাংবিধানিক কিংবা নৈতিক বৈধতা নেই

শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার ইতিমধ্যে চার বছর অতিক্রান্ত করেছে। বাংলাদেশের আইন, সংবিধান মোতাবেক এই জালিম সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোন আইনগত...

Close