কোরানে নারীদের নিয়ে অসম্মানসূচক আয়াত কেন? পর্ব- ১

নারীদের কে ইসলাম স্বাধীনতা দেয় না কেন?আল্লাহ যদি পুরুষ এবং নারী দুই সৃষ্টি করে থাকেন,তাহলে পুরুষদের উনি এক রকম এবং নারীদেরকে উনি নিকৃষ্ট করে রেখেছেন কেন?নাকি কোরান কোন পুরুষের লেখা?আমাদের চোখে ধুলো দিয়ে ১৪০০ বছর আগে শুধু পুরুষদের আরাম আয়েশের কথা ভেবেই কোরান লেখা হয়েছে?যদি কোরান আল্লাহ্‌ পাকের কাছ থেকে এসেছে,তাহলে সেখানে নারীদেরকে কোরানে কেন অসম্মান করা হয়েছে?আল্লাহ্‌ পাক নিশ্চয়ই তার সৃষ্টিকে ঘৃণা করবেন না। কোরানে বিভিন্ন সূরাতে বলা হয়েছে,

তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেএ, সুতরাং তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যে প্রকারে ইচ্ছা অবতীর্ন হও। সূরা-২: বাক্কারাহ, আয়াত:২২৩

সোজা কথায় নারীদেরকে এখানে একটা ভোগ্য পন্যের উপাদানের চাইতে আর বেশী মর্যাদা দেয় নাই। পুরুষগন তাদের স্ত্রীদেরকে যেভাবে খুশী যখন ইচ্ছা খুশী ভোগ করবে- এখানে নারীর ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন মূল্য নেই, যেন তারা শুধুমাত্র সেক্স ডল ও তাদের কাজ হলো রিপু তাড়িত স্বামী প্রবর যখনই যৌন তাড়িত হয়ে ছটফট করবে তখনই তাদেরকে দেহ দান করে তাদের যৌবন জ্বালা মেটাতে হবে, তা সে অসুস্থ থাকুক অথবা তার অন্য কোন শারিরীক বা মানসিক সমস্যা থাকুক তাতে কিছু যায় আসে না। আয়াতের প্রকাশ ভঙ্গী দেখা যাক,তোমাদের স্ত্রীগন তোমাদের শস্যত্রে, অর্থাৎ শস্যক্ষেত্রে যেমন ইচ্ছা খুশী চাষ বাস করা হয় ও নানাপ্রকার শস্য উৎপাদন করা হয় ইচ্ছা মত , নারীরা হলো ঠিক তেমনই এর বেশী কিছু নয়। এতটাই মর্যাদা নারীকে এ সূরার মাধ্যমে দেয়া হয়েছে।

তোমাদের আপন পুরুষ লোকের মধ্য হইতে দুইজন সাী রাখ, যদি দুইজন পুরুষ না পাওয়া যায়, তাহা হইলে একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোক –। সূরা-২: বাক্কারাহ, আয়াত:২৮২

উপরের আয়াতে নারীদেরকে সোজাসুজি পুরুষের অর্ধেক মর্যাদা বা সম্মান প্রদান করা হয়েছে কারন সেখানে একজন পুরুষের সমান দুইজন নারীর সাী রাখার কথা বলা হয়েছে। যার আরও সোজা অর্থ হলো- একজন পুরুষ সমান দুইজন নারী, অর্থাৎ নারীরা পূর্নাঙ্গ মানুষ নয়, একজন পুরুষের অর্ধেক এর সমান হলো একজন নারী। যদি নারীর এ ধরনের মর্যাদা কোরান দিয়ে থাকে তাহলে কোন দেশে মুসলিম নারীরা ভোটাধিকার প্রাপ্ত হওয়ার কথা নয়, কারন যে পূর্নাঙ্গ মানুষ নয় তার তো ভোটাধিকার থাকা অসম্ভব। একই ভাবে যে পূর্নাঙ্গ মানুষ নয় সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া তো দুরের কথা কোন অফিসের বস হওয়ারও তার কোন অধিকার নেই। পরিবারে তার কোন বিষয়ে মতামত দেয়ারও অধিকার থাকতে পারে না। কোরান সোজাসুজি নারীকে কোন পূর্নাঙ্গ মানুষ হিসাবেই স্বীকার করে না- এতটাই বেশী মর্যাদা ইসলাম নারী জাতিকে দিয়েছে।

তোমাদের মধ্যে যে সকল নারী ব্যাভিচার করিবে, তোমরা তাহাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্যেকার চারিজনকে সাক্ষী রাখ, যদি তাহারা সাক্ষ্য দেয়, তবে তোমরা তাহাদিগকে সেই সময় পর্যন্ত গৃহে আবদ্ধ করিয়া রাখিবে যে পর্যন্ত না মৃত্যু তাহাদের সমাপ্তি ঘটায় কিম্বা আল্লাহ তাহাদের জন্য কোন পৃথক পথ বাহির করেন। এবং তোমাদের মধ্যেকার যে কোন দুইজন ব্যাভিচার করিবে, তোমরা সেই দুইজনকে শাস্তি দিও, অত:পর যদি তাহারা তওবা করে এবং সংশোধন করে তবে তাহাদের নিন্দাবাদ হইতে বিরত রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় মাশীল দয়ালু। নিশ্চয়ই যারা অজ্ঞতাবশত: দোষের কাজ করিয়া বসে, তৎপর অল্পকাল মধ্যে তওবা করে, তাহাদের তওবা কবুল করা আল্লাহর দায়িত্ব, আল্লাহ তাহাদের প্রতি সু দৃষ্টি করিয়া থাকেন, আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও মহাবিজ্ঞানী। সূরা-৪: নিসা, আয়াত:১৫-১৭

উপরোক্ত আয়াতের লাইনগুলো পড়লে মনে হবে কোরান সত্যিই নারীদেরকে মহা মর্যাদা বা সম্মান (?) প্রদর্শন করেছে। এখানে বলা হচ্ছে- যে সকল নারী ব্যাভিচার করবে তাদের শাস্তি হলো মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আটকে রাখা, পান্তরে যখন কোন পুরুষ ব্যভিচার করবে তখন কিন্তু তাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড তো দুরের কথা, স্রেফ তওবা করলেই সে মাফ পেয়ে যাবে কারন কোরানের আল্লাহ পুরুষদের প্রতি সীমাহীন দয়ালু, কিন্তু নারীদের প্রতি কঠিন নির্দয়। আর পুরুষদেরকে এরকমভাবে আল্লাহ মাফ করে দেন বলেই তিনি মহাজ্ঞানী ও মহাবিজ্ঞানীও বটে! এভাবে নারীদের প্রতি এক তরফা কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে তিনি বলা বাহুল্য নারীদেরকে মহাসম্মান প্রদর্শন করেছেন বৈকি!

পুরুষগণ নারীদিগের উপর কর্তৃত্বশীল, এই কারনে যে,আল্লাহ উহাদের কাহাকেও কাহারও উপর মর্যাদা প্রদান করিয়াছেন, এবং পুরুষেরা স্বীয় মাল হইতে তাহাদের অর্থ ব্যয় করিয়াছে, ফলে পূন্যবান রমনীগন অনুগত থাকে, অজ্ঞাতেও তত্ত্বাবধান করে, আল্লাহর তত্ত্বাবধানের মধ্যে এবং যাহাদের অবাধ্যতার সম্ভাবনা দেখিতে পাও, তাহাদিগকে উপদেশ দাও, এবং তাহাদের সহিত শয্যা বন্ধ কর এবং তাহাদিগকে সংযতভাবে প্রহার কর, তারপর যদি তোমাদের নির্দেশ অনুযায়ী চলিতে থাকে,তাহা হইলে তাহাদের উপর নির্যাতনের পন্থা অবলম্বন করিও না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুউচ্চ মর্যাদাশীল মহান। সূরা-৪:নিসা, আয়াত:৩৪

এতন পর এই বার নারীর প্রতি কোরানের সম্মান একেবারে নগ্নভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ল। এখানে সরাসরি বলে দেয়া হচ্ছে, নারীর ওপর পুরুষরা তথা স্বামীরা কর্তৃত্ব করবে যা আল্লাহর ইচ্ছা, নির্দেশ ও বিধান, তবে আল্লাহর নির্দেশ বা বিধান বলেও মনে হয় সেই বর্বর আরব সমাজে পার পাওয়া যাচ্ছিল না , তাই কারন হিসাবে বলা হলো- যেহেতু স্বামী স্ত্রীর ভরনপোষন করে সেহেতু সে তার স্ত্রীর ওপর আধিপত্য করবে। এবং এখানেও সেই এক তরফা নারীদেরকে দোষী বা কুকর্মের হোতা হিসাবে সাব্যাস্ত করা হয়েছে এই বলে যে- যাহাদের অবাধ্যতার সম্ভাবনা দেখিতে পাও-অর্থাৎ শুধু নারীরাই একমাত্র অবাধ্য হয় আর তা হলে তার ফুলের মত পবিত্র স্বামী কি কি করবে তারও একটা ফিরিস্তি এ সূরাতে সুন্দরভাবে দেয়া হয়েছে। প্রথমে উপদেশ দিবে,তারপর শয্যা বন্দ করবে,এরপর প্রহার মানে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করবে- অর্থাৎ স্বামী প্রবরটি যা ইচ্ছা খুশী করবে কিন্তু স্বামী প্রবরটি দুনিয়ার আকাম কুকাম করে বেড়ালেও স্ত্রীকে চুপ করে বসে থাকতে হবে ঘরের চার দেয়ালের মাঝে। আর তা হলেই সে হবে পূন্যবতী , সতী , সাধ্বী নারী। নারীদেরকে কি বিপুল সম্মানই না প্রদান করা হয়েছে কোরান নামক আল্লাহ প্রেরিত পুস্তক খানিতে!

নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার রমনীকে বিবাহ কর, কিন্তু তোমরা যদি আশংকা কর যে, সমতা রা করতে পারিবে না, তদবস্থায় একই স্ত্রী কিংবা তোমাদের অধীনস্ত দাসী; ইহা অবিচার না হওয়ারই অতি নিকটতর। সূরা-৪: নিসা, আয়াত:৩

নারীদেরকে যে শুধুমাত্র যৌন আনন্দের জন্য ভোগ্য পন্য ছাড়া আর কিছুই ভাবা হয়নি তার অকাট্য প্রমান উপরোক্ত আয়াতের বানী। একজন পুরুষ চারটি পর্যন্ত বিয়ে করতে পারবে, অর্থাৎ তার জন্যে যৌন আনন্দ লাভের জন্য বৈচিত্রের ব্যবস্থা করেছে কোরান বা ইসলাম। কারন সেই যুগে অসভ্য আরবদের জন্য জীবন উপভোগের সবচাইতে বড় উপায় ছিল যৌন কর্ম। সেসব আরবদেরকে ইসলাম ধর্মে আকৃষ্ট করতে হলে তাই বলা বাহুল্য যৌন আনন্দ লাভের একটা ব্যপক ব্যবস্থা থাকতে হবে।নইলে মানুষ ইসলাম কবুল করবে না।

যেখানে নবী নিজেই ১৩ তার বেশই বিয়ে করেছেন আর তার যৌন দাসী কত জন ছিল তার কোন হদিস আজ পর্যন্ত পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে নি সেখানে উনি নিজে কি করে ওনার উম্মতদের বলবেন শুধু ১ টা বিয়ে করতে?পুরুষমানুষকে যেখানে নারীদের শুধু মাত্র শয্যাসঙ্গিনী হিসেবে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে কোরানে সেখানে নবীকে নিয়ে কথা বললে দুনিয়ার তামাম পুরুষজাতি আমার উপরেই ক্ষেপে আমাকে বিচারের আওতায় আনবে। কারণ আমার অপরাধ আমি নারী যদি পুরুষ হতাম তাহলে আমার শুধু তওবা করলেই হতো।

You may also like...

Read previous post:
ঋণখেলাপি ও বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা এখন খেলাপি ঋণ। এই সমস্যা এখনো আছে আগেও ছিলো। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া মানে যে...

Close