ভুতুরে ভোটের মেয়র!!!!

“আমার কথা- ভোট দেবো কি? কোথায় পরিবেশ?
হোক নিরাপদ ভোটাধিকার, ভোটটা করি বেশ।”

কবি সালেম সুলেরীর এই দুইটি পঙক্তির মধ্যেই অন্তনির্হিত রয়েছে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা ও কৌতুকের মাধ্যমে তার প্রকাশ অসাধারণ! ১৯৭৭ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় হাওড়া রেল স্টেশনের বাইরে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটি দেয়াল লিখন বেশ আলোচিত হয়েছিল। তা ছিল- “যদি দাও হাতে, রবে দুধে-ভাতে” (হাত হচ্ছে কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক)। ঠিক তার নিচে সিপিএমের কর্মীরা লিখে রেখেছিল- “গাঁড় মারবে ভূতে, জল পাবেনা ধুতে”। যেমন দেশটির সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে
মাওবাদী-তৃণমুল আঁতাতের অভিযোগ করে শোনা যাচ্ছে- ‘ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল-ধ্বংস হবে তৃণমুল’, ‘কালিঘাটের আটচালা-মাওবাদীদের পাঠশালা’। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটকে কটাক্ষ করে-‘কাকঁড়া বিছের দুটি হুল-কংগ্রেস আর তৃণমূল’, । আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশে নিজের ভোট নিজে যেখানে দেয়া যায় না, সেখানে এমন তীক্ষ্ন ব্যঙ্গাত্নক নির্বাচনী স্লোগান উচ্চারণের তো প্রশ্নই আসে না।

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এবং ভোট ডাকাতি এই দুটি অবিচ্ছেদ্য প্রপঞ্চ। সমান্তরাল বললে যেমন মানুষের চোখের সামনে একটি রেললাইন ভেসে উঠে, আওয়ামী লীগ শব্দটি উচ্চারণ করলেই দেশের মানুষের মানসপটে ভেসে উঠে ভোট ডাকাতির নানামাত্রিক চিত্র। আর পারিনা গুরু, সেই ১৯৭৩ থেকে শুরু।

বাংলাদেশে ভোট ডাকাতিকে রীতিমতো একটি শিল্পে পরিণত করেছে আওয়ামীলীগ নামের দলটি। নিত্য নতুন আইডিয়া, নিত্য নতুন প্রযুক্তি,নিত্য নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে তারা এটিকে শিল্পে পরিণত করেছে। ১৯৭৩ সালের কথা। সেটি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচন। সেবার তারা ভোট ডাকাতিতে হেলিকপ্টারের ব্যবহারের মাধ্যমে সারা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল! সেই আমলে ভোট ডাকাতিতে এরচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব ছিল না। আর এবারের নির্বাচনে ব্যবহৃত হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতি(উন্নত দেশগুলোতে পরিত্যক্ত) ইভিএম মেথড। বাস্তবতা হচ্ছে, বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর প্রায় ৮৫ ভাগ দেশেই এই পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে।

ভোট ডাকাতি ও ভোট জালিয়াতিতে পুরোনো আমলের কেন্দ্র দখল, জাল ভোট এবং কুটিরশিল্প পদ্ধতিগুলোর এখনো সচল। তবে দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে সমালোচিত। তাই যুগের সাথে তালমিলিয়ে ২০০৮ সালে তারা ভোট ডাকাতি করেছি বান্ডেল মেথডে। সে ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে আওয়ামীলীগ প্রবর্তন করলো ‘বিনা ভোট মেথড’। সেইবার কোন ভোট ছাড়াই ১৫৩ জন প্রার্থীকে তারা নির্বাচনের আগেই এমপি বানিয়ে ফেলেছিল। জনগণ সেই ভোটে নির্বাচিত সরকারকে মজা করে নাম দিল ‘বিনাভোটের সরকার’। ২০১৮ সালে হয়েছিল ‘লাইলাতুল ইলেকশন’। ভোটের আগের রাতেই সবগুলো কেন্দ্র দখল করে দলটির নেতাকর্মীরা রাতভর সিল মেরে সম্পন্ন করেছিল ভোট। তাদের এই মধ্যরাতের কলাকৌশলে সর্বাত্মক সহায়তা করেছে নির্বাচন কর্মকর্তা আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জনগণ এবার এই সরকারকে নাম দিলো ‘মিডনাইট সরকার’!

আর আজ আয়োজন করা হয়েছে ‘ভুতুড়ে ভোট’। জনগন ইভিএম মেশিনে ভোট দেবে চানখারপুলে সেই ভোট দিয়ে পড়বে ফকিরাপুলে। ফলাফলে- চানমিয়া হয়ে যাবে সূর্য দেব। এই ইভিএম নীরব, নির্দেশিত, নিঃশব্দ, স্বয়ংক্রিয় ভোট চুরির প্রকল্প ছাড়া আর কিছু নয়। ইভিএম মেশিনগুলো পরিচালিত হয় সেট করা প্রোগ্রামে। মেশিনে যেহেতু আগে থেকেই বিশেষ প্রতীকের অনুকূলে প্রোগ্রাম সেট করে দেয়া হয় তখন মানুষের মতামতের ফলাফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ থাকে না। আপনি দিনভর যে প্রতীকের ভোট দেন না কেন মেশিন ফলাফল তাতে সেট করা প্রোগ্রাম অনুযায়ীই। ইভিএমের প্রোগ্রামিংয়ের ওপর ফলাফল নির্ভর করেছে। তাই তথ্যবাবাও উত্তেজনার বশে আগে থেকেই ঘোষণা করে দিয়েছেন ভোটের ফলাফল।

সবাই জানে, তারা ভোট দিতে না গেলেও মেশিন ভোট দিয়ে দেবে; এমনকি মৃত ব্যক্তিদের ভোটও। এবার আর আওয়ামী লীগের নেতাদের নামের আগে ভোট চোর বিশেষণ বসবে না, এবার আর পুলিশকে মাঝরাতে ভোট দিতে হবে না। এবার ভোট দেবে ভুতে। ইভিএমে এমন প্রোগ্রাম সেট করা হয়েছিল যে সে আসল ভোটারের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সনাক্ত করতে পারে না।

২০১৫ সালে ফাউল খেলে, ফাউল ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিল ফাউল মেয়র; এবার ভুতের মেশিনে, ভুতুড়ে ভোটে নির্বাচিত হবে ভুতের মেয়র। আওয়ামী লীগ নামের ফ্যাসিস্ট চরিত্রের দলটি এভাবেই বারবার হরণ করেছে মানুষের ভোটাধিকার।

বাংলাদেশের একজন কবির এই দুটি পঙক্তির মধ্যেই তা প্রকাশ পায়|

You may also like...

Read previous post:
অদ্ভুত চরিত্রের বাঙ্গালী!

বাঙালীর চরিত্র বড়ই অদ্ভুত! হুজুগে প্রবন বাঙালী স্বার্থান্বেষী ধূর্ত লোকদের তৈরি করা হুজুগের জলে ভেসে যায়। বাঙালিকে অনেকেই বলেছেন আত্মকেন্দ্রিক,...

Close