এখন আর মূলত কোনো সন্দেহই নেই যে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ যে একজন লুটেরা ও রাজাকার। কাজী জাফরের পানামা পেপারস কেলেংকারী ও একই সাথে তাঁরই দলের এম পি নিক্সন চৌধুরী ভাঙ্গা চর ভদ্রাসনের এক সমাবেশে সরাসরি জাফরকে রাজাকার বলেই উল্লেখ করেছেন।শুধু উল্লেখ করেই ক্ষান্ত থেকন নি তিনি বরংচ কাজী জাফরের বাবা কাজী মাহবুব উল্লাহর লিখিত গ্রন্থ “নানান রঙ্গের দিনগুলি” তে তার দুই ছেলে যে রাজাকার ছিলো এই ব্যাপারে স্পস্ট লেখা রয়েছে বলেও জানান নিক্সন। আওয়ামী লীগ গত প্রায় কয়েক দশক ধরে এই রাজাকার আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে নিয়মিত খেলছে। দেশের তরুন ও যুবাদের ভেতরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে একই সাথে দেশকে বিভাজিত তো করছেই তার উপর এই চেতনার তালে তালে আড়ালে আবডালে লুটপাটেও থেমে নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন এই রাজাকার এখন আওয়ামীলীগের নীতি নির্ধারক হিসেবে শেখ হাসিনার খুবই আস্থা ভাজন হিসেবেই রয়েছেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আর এত ক্ষমতাসালী কি আর লাগে এই দুইয়ে মিলিয়ে। সুতরাং একদিকে ক্ষমতা আর অন্যদিকে লুটপাট। কোনো বাঁধা নেই, নেই কোনো আইন-কানুনের ঝক্কি।
আওয়ামীলীগেরই পক্ষ থেকে একটি কানা ঘুষা প্রায়ই শুনতে পাওয়া যায় যে এই কাজী জাফরের ব্যাপারে আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই খুব দূর্বল। এর একটি কারনও এই কানা ঘুঁষার মধ্যে থেকে শুনতে পাওয়া যায় আর সেটি হচ্ছে শেখ হাসিনার যত অবৈধ কামাই রয়েছে, যত কালো টাকার উৎস রয়েছে সেটির সবটুকুই এই কাজী জাফরুল্লাহ চালায়। আর সে কারনেই কাজী জাফরকে শেখ হাসিনা সব সময় বেশ প্রশ্রয় দিয়ে চলেন এবং অতীব ক্ষমতার শীর্ষে উঠিয়ে রেখেছেন। যেখানে আওয়ামীলীগের প্রবীন রাজনীতিবিদেরা বর্তমানের অবৈধ আওয়ামী লীগের ক্ষমতার কেব্দ্র থেকে দূরে রয়েছে সেখানে কাজী জাফরের হম্বি ও তম্বি আসলে দেখার মতন। বলা চলে আওয়ামী অন্দর মহলে কাজী জাফরুল্লাহর প্রভাব এতই যে তার যে কোনো কথাই এখানে আইন।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে পানামা পেপার্স কেলেংকারীর ক্ষেত্রেও ফেঁসে গেছে কাজী জাফর উল্লাহ। কয়েকদিন এই নিয়ে পত্রিকায় উচ্চ বাচ্চ্য হলেও আওয়ামীলীগের হুমকি ধামকি খেয়ে সব চুপশে গেছে। এখন আর কোন পত্রিকাতে কাজী জাফরের পানামা পেপার্স কেলাংকারীর ভকথা কোথাও আসেই না। জানা গেছে যে পানামা পেপারসের সূত্র ধরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ, তার স্ত্রী নিলুফার জাফর এমপি ও পরিবার; সামিট গ্রুপের এর চেয়ারম্যান আজিজ খান ও পাঁচজন পরিচালক আজিজ খানের স্ত্রী আঞ্জুমান আজিজ খান, কন্যা আয়েশা আজিজ খান, চেয়ারম্যানের ভাই জাফর উমেদ খান, আজিজ খানের ভাতিজা মো. ফয়সল করিম খান; ইউনাইটেড গ্রুপের হাসান মাহমুদ রাজা, খন্দকার মইনুল আহসান (শামীম), আহমেদ ইসমাইল হোসেন ও আখতার মাহমুদ; বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি এ এম এম খান; মোমিন টি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজমল মইন, পাট ব্যবসায়ী দিলিপ কুমার মোদি; সি পার্ল লাইন্সের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সিরাজুল হক; বাংলা ট্রাক লিমিটেডের মো. আমিনুল হক, নাজিম আসাদুল হক ও তারিক একরামুল হক; ওস্টোর্ন মেরিনের পরিচালক সোহেল হাসান; মাসকট গ্রুপের চেয়ারম্যান এফএম জুবাইদুল হক ও তার স্ত্রী সালমা; সেতু করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাবুদ্দিন চৌধুরী ও তার স্ত্রী উম্মেহ; স্কাপর্ক লিমিটেড ও অমনিকেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখারুল আলম, তার পুত্রবধু ফওজিয়া নাজ; আবদুল মোনেম লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আএসএম মহিউদ্দিন আহমেদ, তার স্ত্রী আসমা মোনেম এবং অনন্ত গ্রুপের শরিফ জাহিরের নাম বিদেশে অর্থপাচার ও কর ফাঁকিতে রয়েছে।
কিন্তু এত কিছুর পরেও কাজী জাফরের ব্যাপারে হয়নি কোনো পূর্নাঙ্গ তদন্ত, না হয়েছে কোন চার্জ শীট। অথচ আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়াকে আদালতের কাঠ গড়ায় এখন দিনের পর দিন যেতে হচ্ছে, ভোগ করতে হচ্ছে নানাবিধ বিড়ম্বনা। আওয়ামীলীগের বলা এইস্পব মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে কতটা খেলো ও মিথ্যে তা এসব দূর্নীতির দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায়। একাত্তরের ঘাতক কাজী জাফর উল্লাহকে শেখ হাসিনা প্রেসিডিয়াম সদস্য আর সংসদ সদস্য করে ক্ষমতার শীর্ষে বসিয়েছে আর সাধারণ নাগরিকেরা সামান্য তম ভাত পায়না খেতে কিংবা বিচার পায়না অন্যায় হলে। এই হচ্ছে শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ।
কাজী জাফরউল্লাহর মত এমন পুকুর চোর, ডাকাত, লুটেরা কিংবা একাত্তরের ঘাতকের কেন বিচার হচ্ছেনা বা হবেনা সেটি আমরা আসলেই জানতে চাই। আমরা জানতে চাই যে বাংলাদেশে কি এইসব লুটেরাদের জন্য এক নিয়ম আর আমাদের মত সাধারণ নাগরিকদের জন্য আরেক নিয়ম? গত কিছুদিন আগে প্রবীন সাংবাদিক শফিক রেহমানকে নিজের ঘর থেকে তুলে নিয়ে গেছে আইন শৃংখলা রক্ষা কারী বাহিনী নামধারী হিংস্র কিছু আওয়ামী কর্মী। তারা গায়ে পুলিশ ও র্যাবের পোষাক চড়ালেও এরা হচ্ছে আওয়ামী পালিত হিংস্র খুনী। সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে যেই রটনা রটানো হয়েছে সেটির আদৌ কোন অস্ত্বিত্ব কি রয়েছে নাকি সবই হয়রানি? অথচ নাকের ডগা দিয়ে কাজী জাফরুল্লাহর মত লোকেরা ধনী থেকে ধনী হয়েছে এবং দেশকে লুটে পুটে শেষ করেছে।
লেখক ও সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ অনেক আগেই প্রশ্ন তুলে গিয়েছিলেন যে আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? আমরা কি এমন সোনার দেশ চেয়েছিলাম যেখানে একটি রাজনৈতিক দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হচ্ছে রাজাকার ও লুটেরা? জীবনের এই প্রান্তে এসে আসলেই এসব প্রশ্নের উত্তর পাইনা, মিলাতেও পারিনা। তাই অদৃষ্টের কাছেই বার বার প্রশ্ন রেখে যাই।