আমি খাড়াই যামু, আপনি আমাকে বসায় দিবেন। লোকে দেখুক, আমাদের মাঝে কোন খাতির নাই।
যুদ্ধাপরাধের কথিত অভিযোগ ও মীর কাশেম আলী:
পুঁজিবাদি অর্থনীতির এই যুগে যখন ব্যক্তিগত স্বার্থের বাইরে গিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করার এতটুকু ফুসরত নেই কারোরই, যখন প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে নিজের সাধ্যমতো সাজিয়ে পৃথিবীবাসীর কাছে তুলে ধরার কারিগরের সংখ্যা নিতান্তই হাতে গোনা, নি:স্বার্থ দেশপ্রেমিকের প্রত্যাশায় যখন তাকিয়ে বাংলাদেশর ভবিষ্যৎ, ঠিক তখনই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জীবন মৃত্যুর প্রহর গুনতে হচ্ছে অপরূপ মাতৃভূমি গঠনের এক সুদক্ষ স্থপতি মীর কাশেম আলীকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি জড়িত ছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধে। সেসময় তিনি নাকি চট্টগ্রাম শহরে আল-বদর বাহিনীর সংগঠক ও কমান্ডার হিসেবে দোস্ত মোঃ পাঞ্জাবীর বিল্ডিং, সালমা মঞ্জিল ও ডালিম হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে তুলেছিলেন নির্যাতন কেন্দ্র। এর প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন, অপহরন লুন্ঠন এবং অগ্নিসংযোগের মত ১৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার কাজ শুরু হয়।
১৪টি অভিযোগের মধ্যে দুটি নির্যাতন ও হত্যা বিষয়ক। বাকী ১২টি অভিযোগ অপহরন, নির্যাতন এবং বন্দী করে রাখা নিয়ে। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে মহামায়া বা ডালিম হোটেলে স্বাধীনতাপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের অপহরন করে নির্যাতন, হত্যা, গুম করা হত। এছাড়া লুন্ঠন এবং অগ্নিসংযোগের মত মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডে তার নেতৃত্ব অথবা সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত ১ নং অভিযোগে বলা হয়, মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ৮ নভেম্বর ওমরুল ইসলাম চৌধুরীকে চাকতাই ঘাট থেকে অপহরন করা হয়। এরপর তাকে কয়েক দফায় চট্টগ্রামের আন্দর কিল্লাস্থ ডালিম হোটেল, পাচলাইশ থানার সালমা মঞ্জিল এবং একটি চামড়ার গুদামে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
২ থেকে ১৪ নং অভিযোগে ব্যক্তি ভিন্ন হলেও ঘটসান্থল এবং অপরাধের বিবরণ প্রায় একই রকম। অভিযোগের তারিখগুলো ১৯৭১ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অথচ অভিযোগে উত্থাপিত পূর্ণাঙ্গ সময়টাতেই জনাব মীর কাশেম আলী ঢাকায় অবস্থান করেছেন।
এমনকি রাষ্ট্রপক্ষ বর্তৃক ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া ডকুমেন্টও ঘটনার সময় তার ঢাকা অবস্থান নিশ্চিত করে।
উল্লেখ্য মীর কাশেম আলি পিতার বদলী সূত্রে ১৯৬৫ সালে চট্রগ্রামে গিয়ে চট্রগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ৯ম শ্রেনীতে ভর্তি হন। এরপর ১৯৭১ সালে তাঁর পিতা কুমিল্লায় বদলী হলেও পড়ালেখার কারণে তিনি পরিবার পরিজনদের সাথে কুমিল্লায় যেতে পারে নি। এরপর অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে মীর কাসেম আলীর একমাত্র বোন মমতাজ নুরুদ্দীন তার স্বামী নুরুদ্দীন সাহেবের পুরান ঢাকার বাসায় চলে আসেন এবং বাকী সময়ে তিনি ঢাকায়ই থেকে যান। অর্থাৎ মীর কাশেম আল ৬ই নভেম্বর ১৯৭১ এর পর থেকে ঢাকায় অবস্থান করতেন। কারণ রাষ্ট্রপক্ষ উত্থাপিত ডকুমেন্ট অনুযায়ী ০৭-১১-১৯৭১ তারিখে দৈনিক সংগ্রাম এর এক রিপোর্ট মতে জনাব মীর কাশেম আলী ছাত্র সংঘের প্রাদেশীক কার্যকরী পরিষদের সেক্রেটারী নিযুক্ত হন। উক্ত পত্রিকার মতে মীর কাসেম আলী ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে বক্তব্য প্রদান করেন। যা প্রমান করেন তিনি তখন ঢাকায় ছিলেন। পত্রিকার অন্যান্য রিপোর্ট মতে ১১/১১/১৯৭১ তারিখে মীর কাসেম আলী ঢাকায় এক বিবৃতি দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে জমাতুল বিদা পালনের আহবান জানান। ২৪/১১/১৯৭১ তারিখে দৈনিক আজাদ-এর এক রিপোর্ট মতে মীর কাসেম আলী ঢাকায় এক সমাবেশে বক্তৃতা রাখেন। এমনকি দৈনিক আজাদের ১১/১২/১৯৭১ তারিখের রিপোর্টেও দেখা যায় ১০ ডিসেম্বর শুক্রবার বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে এক গনমাবেশে ভাষণ দেন মীর কাসেম আলী।
পক্ষান্তরে এই সময়ে জাতীয় দৈনিক গুলোতে চট্রগ্রামের যে সব খবর প্রকাশ পেয়েছে তার কোন টি তেই মীর কাসেম আলীর নাম উল্লেখ ছিল না।
এছাড়া অভিযোগে উত্থাপিত নির্যাতনস্থল ডালিম হোটেল ১৯৭১ সালে ছিল মতিউর রহমান ওরফে মইত্যাগুন্ডা নামক এক কূখ্যাত ব্যাক্তির দখলে, যার বিরুদ্ধে ১৯৭২ সালে মামলা করে হোটেলের মালিক। সেই মামলার বিবরণসহ কোথাও মীর কাসেম আলীর নাম নেই। বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম’ নামক একটি প্রামান্য দলিল গ্রন্থে। এছাড়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও জেরায় স্বীকার করেছেন যে, ডালিম হোটেল নির্যাতন কেন্দ্র ছিল মর্মে কোন রিপোর্ট তিনি দেখেননি।
রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাশেম আলীকে তৎকালীন চট্টগ্রামের রাজাকার কমাণ্ডার উল্লেখ করলেও তারা যেসব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে তাতে চট্টগ্রাম আল বদর কমান্ডারসহ শীর্ষ আলবদর নেতৃবৃন্দের নামের জায়গায় মীর কাশেম আলী নয় রয়েছে অন্য ব্যক্তিদের নাম। যেখানে চট্টগ্রামের আলবদর কমান্ডার হিসেবে ফেনির নাসির এবং সেক্রেটারি হিসেবে সন্দ্বীপের ফয়জুল্লাহ-র নাম রয়েছে। মাহবুবুল আলমের লেখা ঐ বইতে চট্টগ্রাম আলবদর নেতা হিসেবে আরো উল্লেখ রয়েছে জাকির হোসেন এবং মনসুর এর নাম। কিন্তু কোথাও মীর কাশেম আলরি নাম একবারের জন্যও আসে নি।নুল ইসলাম বলেন, ডালিম হোটেল যে মতিউর রহমান ওরফে মইত্যা গুন্ডার নিয়ন্ত্রনে ছিল সে মর্মে আমরা দুটি ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে দুই নং অভিযোগটি ছিল লুৎফর রহমানকে অপহরন করে ডালিম হোটেলে নির্যাতন। ঘটনার স্বাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে এসে লুৎফর রহমান তথ্য দেন যে, নির্যাতনের ফলে তার সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ লুৎফর রহমান ঘটনার পরে বিয়ে করেছেন। পুরুষত্বহীন হলে তিনি বিয়ে করলেন কীভাবে?
তিন নং অভিযোগে বলা হয়েছে ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর আসামীর নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে তার কদমতলা বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করা হয়।
ঘটনার স্বাক্ষী জাহাঙ্গীর আলম ট্রাইব্যুনালে দাবি করেছেন ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর তাকে ধরে নিয়ে আসা হয়, এবং সেখানে তার সাথে অপর বন্দি শফিউল আলমের দেখা হয়। অথচ ঘটনার স্মৃতিচারণ করে শফিউল আলম তার ‘সেই সে সময় আনন্দে বেদনায়’ বইয়ে লিখেছেন তাকে ২৭ নভেম্বর ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি শফিউল তার বইয়েও চট্টগ্রাম আলবদর কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম আলীর নাম উল্লেখ করেননি। বইটি রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া হয়েছে।
মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে চার নং অভিযোগে ডাবলমুরিং থানায় সাইফুদ্দিন খানকে তার নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করা হয়। অথচ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাইফুদ্দিনের বোন নুরজাহানকে সাক্ষী হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি।
মীর কাসেম আীল বিরুদ্ধে আনীত ছয় নং অভিযোগ হল চট্টগ্রাম শহরের একটি চায়ের দোকান থেকে হারুনুর রশিদ নামে একজনকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেল এবং সালমা মঞ্জিলে নির্যাতন।ঘটনার স্বাক্ষী হারুনুর রশিদের স্ত্রী। কিন্তু হারুনের স্ত্রী কর্তৃক ট্রাইব্যুনালে দেয়া তথ্য তার স্বামী হরুনুর রশীদের কথার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, ‘সেই সে সময় আনন্দে বেদনায়’ বইয়ে হারুনুর রশিদের উদ্ধৃতি দিয়ে মাহবুবুল আলম লিখেছেন, হারুন আল বদর কমান্ডারদের চিনতেননা।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আট নং অভিযোগে উল্লেখিত নুরুল কুদ্দুস, মো. নাসির, নুরুল হোসেনসহ যে চারজনকে অপহরন করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে তাদের তিনজনই জীবিত এবং সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত। অথচ এদের কাউকেই সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করা হয়নি।
এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ ১৯৭১ সালে মীর কাসেম আলী বাঙ্গাল খান নামে পরিচিত ছিল বলে তথ্য দিলেও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যেই দেখা যায় বাঙ্গাল খান ছিলেন অন্য ব্যক্তি, মীর কাসেম আলী নন।
যেমন রাষ্ট্রপক্ষের আট নং সাক্ষী এস্কান্দার আলম বলেছেন, তিনি শুনেছেন মীর কাসেম আলী বলছেন, খান সাহেব কোথায়? তখন খান সাহেব বলছেন, মীর কাসেম আমি আসছি।
১৯ নং সাক্ষী বলছেন, চোখ খুলে মীর কাসেম আলীর সাথে আরো একজনকে দেখি। উনি খান সাহেব হতে পারে। এথেকে প্রমাণিত হয়’ ডালিম হোটেলের ‘খান সাহেব’ আসলে মীর কাশেম আলী নন, অন্য কেউ।
এমনকি তদন্তকারী কর্মকর্তারকাছে দেয়া জবানবন্দীতেও কেউ মীর কাশেম আলী কে ‘খান’ বলে উল্লেখ করেন নি।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে নয় নং অভিযোগে বলা হয়, ২৯ নভেম্বর ১৯৭১ সালে সৈয়দ মো. এমরান হোসেন, কামাল উদ্দিন, জামালউদ্দিন, সরওয়ার উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, গোলাম রহমান এ ছয় জনকে অপহরন ও নির্যাতন।
ঘটনার স্বাক্ষ্য হিসেবে এমরান হোসেন, জামালউদ্দিন এবং সরওয়ারউদ্দিনকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হলেও তারা কেউই অপহরন ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে কিছুই বলেননি।
এমনকি স্বাক্ষী জামালউদ্দিন তাকে আটকের সময় মুখোশ পড়ার কারণে আটককারীদের কাউকেই চিনতে পারেননি বলে তথ্য দিলেও একই ঘর থেকে একই সময়ে আটক হওয়া অপর সাক্ষী সরওয়ার উদ্দিন বলেছেন, আটকের সময় দুজন আর্মি এবং একজন বদর সদস্য ছিল। বদর সদস্য হল মীর কাসেম আলী। একই ঘর থেকে একই সাথে গ্রেফতার হওয়া দু’জন ব্যক্তির মধ্যে ঘটনার এতটা বৈপরিত্ব থাকা অসম্ভব।
১১ নং অভিযোগে বলা হয়, ঈদের পরের দিন শহীদ জসিম উদ্দিনসহ ছয় জনকে অপহনের পর নির্যাতন করা হলে জসিমসহ পাঁচজন নিহত হয় এবং পরে তাদের লাশ গুম করা হয়।
অভিযোগের পক্ষে ডকুমেন্ট হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা গাজী সালাহউদ্দিন এর একটি বই জমা দয়ে রাষ্ট্রপক্ষ। বইয়ে লেখক বলেছেন, জসিমের নিহত হবার স্থান এবং তারিখ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অথচ ঘটনার সাক্ষী সানাউল্লাহ ট্রাইব্যুনালে তথ্য দিয়েছেন যে, তিনি ২৮ নভেম্বর ডালিম হোটেল জসিমের লাশ দেখেছেন। আর অপর স্বাক্ষী জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, তিনি ডালিম হোটেলে জসিমের লাশ দেখেছেন ২৪ নভেম্বর।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১২ নং অভিযোগ হল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, টন্টু সেন ও রঞ্জিত দাসকে অপহরন করে নির্যাতন করা হয়। এদের মধ্যে টন্টু সেন ও রঞ্জিত দাসকে হত্যা করে তাদের লাশ গুম করা হয়।
ঘটনার স্বাক্ষী সানাউল্লাহ ট্রাইব্যুনালে তথ্য দেন যে, তিনি ২৭ নভেম্বর ডালিম হোটেলে টন্টু সেন ও রঞ্জিতের সাথে কথা বলেছেন, এবং ২৮ তারিখ তাদের হত্যা করা হয়। তিনি ২৮ নভেম্বর ডালিম হোটেল জসিমের লাশ দেখেছেন। অথচ মুক্তিযোদ্ধা শফিউল আলমের ‘সেই সে সময় আনন্দ বেদনা’ বইয়ে উল্লেখ রয়েছে ২৮ নভেম্বর টন্টু মারা যাবার তিনদিন আগে থেকে অজ্ঞান ছিল। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে অজ্ঞান লোকের সাথে সাক্ষী সানাউল্লাহ কথা বললেন কি করে?
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অপর সাক্ষী টন্টু সেনের ভাগনে প্রদীপ তালুকদার, যিনি ছিলেন অপহরন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। এবং ট্রাইব্যুনালে দেয়া তথ্য মতে, ১৯৭১ সালে প্রদীপের বয়স ছিল ছয় বছর। ট্রাইব্যুনালে প্রদীপের দুটি ঠিকানা দেয়া আছে। সেক্ষেত্রে তার পুরাতন ঠিকানার কোন অস্তিত্ব নেই। আর নতুন ঠিকানা থেকে প্রাপ্ত ভোটার লিস্টে দেখা যায়, প্রদীপের জন্ম তারিখ ১৯৭৭ সাল। ১৯৭৭ সালে জন্ম নেয়া ব্যক্তি কি করে ১৯৭১ সালের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হতে পারে?
১২ নং অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, অভিযুক্তের নেতৃত্বে হাজারি লেনে আড়াইশ থেকে তিনশ বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়েছে এবং একশরও বেশি পরিবারকে জোর করে ভারতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ কোন সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।
১৩ নং অভিযোগ হল সুনীল কান্তি বর্ধনকে অপহরন ও নির্যাতন সংক্রান্ত। ঘটনার স্বাক্ষী
সুনীল কান্তি বর্ধন বলেছে ১৯৭১ সালে সে কোন রাজাকার আলবদরও চিনতনা।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৪ নং অভিযোগ হল নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরন ও নির্যাতন।
ঘটনার সাক্ষী নাসির উদ্দিন চৌধুরী নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ট্রাইব্যুনালে তথ্য দিলেও ১৯৭১-এ চট্টগ্রাম শহরে সার্কিট হাউজ ছাড়া অন্য কোথাও আর্মি ক্যাম্প ছিল কিনা তা সে জানে না। এটা কেমন কথা?
মীর কাশেম আলী শুধু একজন রাজনীতিবিদই নন, দেশ ও দেশের বাইরে তিনি একজন উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী হিসেবে সুপরিচিত। বিশেষ করে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেও যে চট্টগ্রামকে তার কথিত অপরাধের ঘাটি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সে চট্টগ্রামেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মীর কাশেম আলীর উন্নয়নের চিত্র। ১৯৭১ সালে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে তার অবস্থান ছিল বলে প্রচারণা চালানো হয়, সে বাংলাদেশকেই নতুন রূপে সাজাতে তিনি দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। একজন দেশপ্রেমিক ও উন্নয়ন বান্ধব লোক যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ন্যায় বিচার বঞ্চিত হন, তবে তা ইতিহাসের এক অপদৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আর তাই আদালতে নিরাপরাধ সাব্যস্থ হয়ে মীরকাশেম আলী আবারো ফিরে আসবেন জনতার মাঝে, দেশের উন্নয়নে নিয়োজিত করবেন তার শরীরের ঘাম, হৃদয়ের রক্তকণা এ প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে আছে বাংলাদেশের প্রতিটি সচেতন মানুষ।