একজন ধার্মিকের দৃষ্টিতে “ব্লাসফেমি” পাপ হতে পারে, কিন্তু “ব্লাসফেমি” কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাছে বা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ হতে পারে না। কারণ, রাষ্ট্রের কাজ তার জনগণকে অপরাধের শাস্তি দেয়া, পাপের শাস্তি দেয়া নয়। মানুষকে তার পাপের শাস্তি দেবেন তার ঈশ্বর, মানুষ নয়।
জনগণকে সামাজিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ; দেশে ন্যায় বিচার আর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ; দূর্নীতিবাজ, লুটেরা, খুনী, ধর্ষকদেরকে বিচারের সম্মুক্ষীণ করতে ব্যর্থ রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং বর্তমান সরকার তাদের নিরপরাধ জনগণকে পাপের শাস্তি দেবার দায়িত্ব নিয়েছে। আর তারই সাম্প্রতিক শিকার হয়েছেন নাস্তিক ব্লগার আসাদ নূর। আসাদ নূরকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে, একটি অগণতান্ত্রিক, অমানবিক, এবং আদিম ব্লাসফেমি আইনে গ্রেফতার করে দেশের জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আবারো গলাচেপে ধরেছে বাংলাদেশ সরকার।
আসাদ নূরের নাস্তিকতার দার্শনিক মূল্যায়ন নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, সমাজ পরিবর্তনে আসাদ নূরের নাস্তিকতার অবদান নিয়ে আমাদের দ্বিমত থাকতে পারে, আসাদ নূরের নাস্তিকতার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, কিন্তু, সকলের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আর গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে আমাদেরকে একমত এবং সচেতন থাকতেই হবে। আসাদ নূরের নাস্তিকতা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বা সমাজে কোনো অপরাধ হতে পারেনা। গনতান্ত্রিক বিশ্বে আসাদ নূর তার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকেই ব্যবহার করেছেন মাত্র।
“আইসিটি’র ৫৭ ধারা” একটি কালো আইন। ৫৭ ধারা জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা তথা গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করার জন্য একটি অসভ্য আর বর্বর আইন। আপনি যদি একজন গণতন্ত্রকামী মানুষ হন, রাষ্ট্রে ও সমাজে জনগণের মত প্রকাশ আর মন খুলে কথা বলার পক্ষের লোক হন, তাহলে ৫৭ ধারার বিরুদ্ধে কথা বলুন। আর ৫৭ ধারার বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে আপনাকে অবশ্যই আসাদ নূরের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে কথা বলতেই হবে।
একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল আর মানবিক রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আজই ৫৭ ধারার বিলুপ্তি এবং আসাদ নূরের মুক্তি দাবী করছি।