অমর্ত্য সেন লিখেছেন, আত্মপরিচয় ও সহিংসতার সম্পর্ক নিয়ে।(Identity and Violence: The Illution of Destiny). মুল কথা, আপনি যদি মনে করেন যে আপনার শুধুমাত্র একটি আত্মপরিচয়, যেমন, “জার্মান”, “মুসলমান”, “পুরুষ” বা “নারী”, তাহলে আপনাকে সহিংসতার জন্য কাজে লাগানো সহজ হবে। উপমহাদেশে যখন একটিমাত্র আত্মপরিচয় প্রধান হয়ে উঠল, তখন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানো সম্ভব হোল।
আসলে আপনি প্রথমে মানুষ (Homosepiens), তারপর নারী বা পুরুষ (কিংবা তৃতীয় লিঙ্গ), তারপর আপনি জার্মান, আরবিয়, বাঙ্গালী কিংবা চাকমা। তিনটি আত্মপরিচয় আপনি বদলাতে পারবেন না। আপনি মানুষ থেকে উল্লুক হতে পারবেন না। আপনি যে এথনিক বা জাতিগত পরিচয়ে জন্মেছেন, সেই জন্মানোটা বদলাতে পারবেন না। আপনি আপনার শারীরিক বা জেন্ডার আত্মপরিচয় বদলাতে পারবেন না।
কিন্তু আপনি অন্য পাসপোর্ট নিয়ে ভিনদেশি হতে পারবেন, ধর্ম পরিবর্তন করে অন্য ধর্মে যেতে পারবেন, পেশা পরিচয় বদলাতে পারবেন। এমনকি, বয়সের বা জ্ঞানের বিকাশের সাথে আপনি মৌলবাদী থেকে সেক্যুলার বা সূফী মুসলমান হতে পারবেন। আসলে “মুসলমান” দাবীর সত্যতা যাচাইয়ের কোন উপায় নাই, ফলে এটা আত্মগত ধর্মবোধ, কোন অবজেক্টিভ আত্মপরিচয় নয়।
আসলে আগে “মানুষ” হলে, কেউ একটিমাত্র আত্মপরিচয় নিয়ে এভাবে কথা বলতে পারেনা। আমাদের একটি নয়, বহুপরিচয় রয়েছে। প্রথম পরিচয় “মানুষ” এই ভাবনা কি আপনার মাথায় কোন সংকেত দেয়? কি সংকেত দেয়? সেটা নিয়ে ভাবুন। “মানুষ” ভাবনাই আপনাকে সহিংস ঘাতক (সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, বর্নবাদী, জঙ্গিবাদী) হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। আগে মানুষ হোন। শুধুই “মানুষ”, তারপর না হয় অন্য সব আত্মপরিচয়।