পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ষোল ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে ঐতিহাসিক রেসকোর্স মাঠে বাংলাদেশের নিকট আত্ম সমর্পণ করে। আত্ম সমর্পণ বইয়ে সাইন করেন পাকিস্তানী জেনারেল নিয়াজি মিত্র বাহিনীর চীফ জেনারেল অরোরার সম্মুখে। এই স্বাক্ষর প্রদান অনুষ্ঠিত হয় রেসকোর্সের মাঠ সংলগ্ন একটি টেবিলে বসে।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই মাহেন্দ্রক্ষণে এই দুই আর্মি জেনারেলের পাশেই উপবিষ্ট ছিলেন।
বিভ্রান্তিকর মনে হচ্ছে? রেসকোর্সের সেই আত্মসমর্পনের আনুষ্ঠানিকতার সময় বঙ্গবন্ধু নিজে উপস্থিত ছিলেন -এ নিয়ে অবাক হচ্ছেন? ইতিহাস যাই বলুক, মুজিবনগরে নির্মিত ভাস্কর্য কিন্তু সেই কথাই বলছে।ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্সে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে নির্মিত হয়েছে নানা ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে একটি হলো রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পনের সেই মুহূর্ত।
সেখানে দেখানো হয়েছে আত্মসমর্পণের সময় পাশের চেয়ারে বসে আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইতিহাস ও দলিলে উল্লেখ আছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক হন বঙ্গবন্ধু। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। এর মধ্যবর্তী সময়টাতে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দী ছিলেন।
ইতিহাস বলছে, সেই আত্মসমর্পনের সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুকে যেখানে বসা অবস্থায় দেখানো হয়েছে, সেখানে ছিলেন অন্য ব্যক্তি।তিনি চেয়ারে বসা ছিলেন না। মাটিতে হাটু গেড়ে বসে ছিলেন সেই ব্যক্তি। তার পরিচয় যতটুকু জানা গেছে, তিনি একজন সাংবাদিক ছিলেন।অথচ সেখানে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি রেখেই নির্মিত হয়েছে ওই ভাস্কর্যটি। এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হলেও এ বিষয়ে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এখনো। যার ফলে মুজিনগর পরির্দশনে গিয়ে এমন ইতিহাস বিকৃতি দেখছে দর্শনার্থীরা।
আওয়ামীলীগ সরকার আটানব্বই সালে মুজিব নগর কমপ্লেক্স নামক একটি প্রজেক্ট হাতে নেয় কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর থানার মুজিবনগর নামক স্থানে। তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ছেষট্টি একর আয়তনের এই প্রজেক্টটির নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন আটানব্বই সালের সতের এপ্রিল। এই প্রজেক্টটির কাজ সমাপ্ত হয় ২০১১ সালে যেখানে তৈরী হয়েছে কিছুসংখ্যক ভাস্কর্য যেগুলো স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস কে প্রস্ফুটিত করে।