যাত্রাবাড়ীতে নিরাপদ সড়ক চাই এর দাবিতে যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলন করেছে তাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।উপস্তিত জনগণের মতে, স্থানীয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা এই হামলায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। সূত্রমতে, ওইদিন যাত্রাবাড়ী মোড়ে ২০ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী যানবাহনের লাইসেন্স পরীক্ষা করছিল।অকস্মাৎ ৫০ থেকে ৬০ জনের যুবলীগের ক্যাডার বাহিনী শিক্ষার্থী দের উপর আক্রমণ চালায়।
হামলার শিকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা কোনো গাড়ি আটকাচ্ছি না। শুধু তাদের লাইসেন্স আছে কিনা তা দেখছিলাম। এ সময় ‘ধর ধর’ করে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের এতগুলো মানুষের সঙ্গে আমরা পারবো না। এজন্য চলে যাচ্ছি।
যাত্রাবাড়ি থানার ওসি ওয়াজেদ আলী সাংবাদিকদের জানান, এখানে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হয়তো শ্রমিকদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে কেউ অপ্রীতিকর কিছু করার চেষ্টা করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।
নিরাপদ সড়কসহ ৯ দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে আবারও অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা প্রতিটি পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে গাড়ির লাইসেন্স তল্লাসি করছে।শনিবার (৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা অবস্থান নিতে শুরু করে। তারা অন্যদিনের মতো ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।এ সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি মাইক্রোবাস লাইসেন্স না থাকায় তারা আটকিয়ে দেয়। পরে দায়িত্বরত সার্জেন্ট মামলা দিলে তারা গাড়িটি ছেড়ে দেয়।
সলিমুল্লাহ ডিগ্রি কলেজের ছাত্র মাশরাফি আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সড়ক নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন করবো। আজকে আমরা কেউ উল্টো পথে আসছে কি না এবং লাইসেন্স আছে কি না চেক করছি। আমরা এর মাধ্যমে দেখিয়ে দিতে চাই পরিবহনখাতে শৃঙ্খলা সম্ভব।এদিকে, বিআরটিসির বাস ছাড়া অন্য কোনো ধরনের বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। পর্যাপ্ত বাস না থাকায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ষষ্ঠদিনের মতো বিক্ষোভ করছেন রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৪ আগস্ট) সকালে এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড়ে সকাল ১১টায় পতাকা হাতে মানববন্ধন ও মিছিল করে তারা। পরে সেখানে অবস্থান নিয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সকালে শিক্ষার্থীদের প্রথম মিছিলটি আসে নিউমার্কেট এলাকা থেকে। এর কিছুক্ষণ পরেই ধানমন্ডি থেকে আসে দ্বিতীয় মিছিল। পরে দুইদলের শিক্ষার্থীরাই অবস্থান নেন সাইন্সল্যাব মোড়ে।
রাস্তায় অবস্থানকালে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন যানবাহন আটকে গাড়ির কাগজপত্র এবং চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করেন। তবে বরাবরের মতো তারা সহযোগিতা করেছেন অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী বহনকারী যানবাহনকে।
ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী তাহমিনা আনাম বলেন, নিরাপদ সড়ক কোনো অযৌক্তিক দাবি নয়। তাই সরকার যতক্ষণ এ প্রসঙ্গে কোনো কার্যকর না নেবে, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে। গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই বাসের রেষারেষিতে একটির চাপা পড়ে দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার পর বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় গত ক’দিন ধরে ‘ভাঙচুরে’র কথা বলে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন মালিক-শ্রমিকরা। গত বৃহস্পতিবার (০২ আগস্ট) সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে তাদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানানো হয়। প্রথমে দুয়েকটি চললেও শুক্রবার (৩ আগস্ট) থেকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয় বাস চলাচল।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’- এই আন্দোলনের অনশ হিসাবে মিরপুর এলাকার বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থী রা। আজ সকালেও বিগত কয়েকদিনের মতো তারা সড়কে সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়েছে। তারা লাইসেন্স চেক করার পাশাপাশি এক লেন এ যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করে। অন্যদিকে, আরেকদল শিক্ষার্থী মিরপুর ১০ নাম্বার থেকে সকাল ১০টার দিকে একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করে। পূর্বের মতই তা শান্তিপূর্ণভাবে মিরপুর ১ নাম্বারে গিয়ে শেষ হয়।