সারাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবির অংশ হিসেবে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীদের নেতৃত্ব দেন স্থানীয় যুবলীগের সদস্যরা।
জানা গেছে, সকালে যাত্রাবাড়ী মোড়ে ২০/৩০ শিক্ষার্থী রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন গাড়ির লাইসেন্স চেক করছিল। এ সময় ৫০/৬০ জনের একটি দল ওই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে।
হামলার শিকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা কোনো গাড়ি আটকাচ্ছি না। শুধু তাদের লাইসেন্স আছে কিনা তা দেখছিলাম। এ সময় ‘ধর ধর’ করে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের এতগুলো মানুষের সঙ্গে আমরা পারবো না। এজন্য চলে যাচ্ছি।
যাত্রাবাড়ি থানার ওসি ওয়াজেদ আলী সাংবাদিকদের জানান, এখানে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হয়তো শ্রমিকদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে কেউ অপ্রীতিকর কিছু করার চেষ্টা করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।
শাহবাগে লাইসেন্স তল্লাসিতে শিক্ষার্থীরা
এ সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি মাইক্রোবাস লাইসেন্স না থাকায় তারা আটকিয়ে দেয়। পরে দায়িত্বরত সার্জেন্ট মামলা দিলে তারা গাড়িটি ছেড়ে দেয়।
সলিমুল্লাহ ডিগ্রি কলেজের ছাত্র মাশরাফি আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সড়ক নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন করবো। আজকে আমরা কেউ উল্টো পথে আসছে কি না এবং লাইসেন্স আছে কি না চেক করছি। আমরা এর মাধ্যমে দেখিয়ে দিতে চাই পরিবহনখাতে শৃঙ্খলা সম্ভব।
এদিকে, বিআরটিসির বাস ছাড়া অন্য কোনো ধরনের বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। পর্যাপ্ত বাস না থাকায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
সাইন্সল্যাবে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
সকালে শিক্ষার্থীদের প্রথম মিছিলটি আসে নিউমার্কেট এলাকা থেকে। এর কিছুক্ষণ পরেই ধানমন্ডি থেকে আসে দ্বিতীয় মিছিল। পরে দুইদলের শিক্ষার্থীরাই অবস্থান নেন সাইন্সল্যাব মোড়ে।
রাস্তায় অবস্থানকালে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন যানবাহন আটকে গাড়ির কাগজপত্র এবং চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করেন। তবে বরাবরের মতো তারা সহযোগিতা করেছেন অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী বহনকারী যানবাহনকে।
ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী তাহমিনা আনাম বলেন, নিরাপদ সড়ক কোনো অযৌক্তিক দাবি নয়। তাই সরকার যতক্ষণ এ প্রসঙ্গে কোনো কার্যকর না নেবে, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই বাসের রেষারেষিতে একটির চাপা পড়ে দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার পর বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনায় গত ক’দিন ধরে ‘ভাঙচুরে’র কথা বলে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন মালিক-শ্রমিকরা। গত বৃহস্পতিবার (০২ আগস্ট) সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে তাদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানানো হয়।
প্রথমে দুয়েকটি চললেও শুক্রবার (৩ আগস্ট) থেকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয় বাস চলাচল।
মিরপুরের সড়কে শিক্ষার্র্থীরা
নিরাপদ ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার সড়কে নেমেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। গত চার দিনের মতো আজ সকালেও তারা সড়কের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার পাশাপাশি যানবাহনকে লেন মেনে চলতে বাধ্য করছে আন্দোলনকারীরা। এদিকে সকাল ১০টার পর মিরপুর-১০ থেকে মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। আগের মতোই সেøাগান দিয়ে তারা মিরপুর-১ নম্বরের দিকে চলে যায়।