সমকাল পত্রিকায় পড়লাম অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় গ্রামের বাড়িতে পড়ে আছেন নির্মল সেন। সেখানে বলা হয়েছে “অর্থসঙ্কটে ঢাকা ছেড়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বাম রাজনীতির অন্যতম পুরোধা নির্মল সেন। গ্রামের বাড়িতে এসে বিনা চিকিৎসায় ভুগছেন তিনি। তার চিকিৎসার্থে সরকারি ও বেসরকারিভাবে কেউ এগিয়ে আসছেন না।” ২০০৩ সালের ১১ নভেম্বর ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হন নির্মল সেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে চিকিৎসার পর তাকে নেয়া হয় সিঙ্গাপুরে। ৩ মাস চিকিৎসার পর অর্থাভাবে সেখান থেকে ফিরে আসতে হয়। যদিও সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী নির্মল সেনকে আরও দু’মাসের চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন ছিলো। সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আনার পর তিনি দীর্ঘ ৮ মাস সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর অর্থাভাবে তার যথাযথ চিকিৎসা চালানো সম্ভব হয়নি। এমনকি রাজধানী ঢাকায় থাকাও সম্ভব হয়নি। তাকে রাজধানী ঢাকাতে রাখতে হলে প্রতি মাসে প্রায় ২৫ হাজার টাকার ওষুধ ও তার চিকিৎসার ব্যয়সহ সর্বসাকুল্যে প্রায় ৪০ হাজার টাকা দরকার। এই সামর্থ না থাকায় তাকে চলে যেতে হয়েছে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। সেখানে তিনি এখন চরম দুর্দশার মধ্যে প্রায় অচল, অসহায় অবস্থায় নিঃসঙ্গ দিন কাটাচ্ছেন।
নির্মল সেন অসুস্থ হওয়ার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি সাহায্য-সহযোগিতা করলেও এখন তারা আর কেউ কোনো খোঁজ-খবর রাখছেন না। চারদলীয় জোট সরকার ৫ লাখ টাকা দিয়েছিল। পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড়ছেলে তারেক রহমান নিজে নির্মল সেনের বাসায় গিয়ে ২ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্মল সেনের ছাত্র আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেছিলেন, সরকার তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেই প্রতিশ্রুতিও রাখেনি। ক্ষমতায় আসার আগে অসুস্থ নির্মল সেনকে আওয়ামী লীগ আর্থিক সুবিধা দেয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত প্রতিশ্রুত সাহায্য তিনি পাননি। মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়াও আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তার সে আশ্বাস এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
সরকারী অর্থ-সাহায্য পাওয়ার যোগ্যতার বিচারে নির্মল সেন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সুবিধাভোগীদের তালিকায় পড়ে গেছেন। মহাজোট সরকারের আমলে তাই তার জন্য চিকিৎসা অনুদান পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কি ওনাকে এই কুরুচিপূর্ণ রাজনৈতিক গ্যাঁড়াকল থেকে মুক্তি দেবার জন্য এগিয়ে আসবেন? গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ধুঁকে ধুঁকে মরার পর আমরা নির্মল সেনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে চাই না। চাই এখনই তাঁর সুচিকিৎসা হোক।