হলি আর্টিজান হামলার ১ বছর পর বাংলাদেশের তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট হাসনাত করিমের এই জঙ্গি হামলার সাথে জড়িত থাকার সত্যতা তুলে ধরেন। তারা তদন্ত করে যা জানতে পারলেন তার জন্য গোটা ১ টা বছর লেগে গেছে। দেশের সরকার যতই জোর দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, বাংলাদেশে কোন জঙ্গি তৎপরতা নেই, সবকিছুই সাজানো নাটক আর বিরোধী দলের চক্রান্ত, এতে করে তাদের লাভ ক্ষতির হিসাব কত বেড়েছে বা কমেছে সেটা না জানা গেলেও, ভয়াবহ সত্য হলো, নির্মম ভাবে কতগুলো নিরাপরাধ মানুষ আমাদেরকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন।
আমরা দিনের পর দিন অনুভূতি শূন্য হয়ে নিজেদের মতো জীবনকে যাপন করে যাচ্ছি। চেতনা, মূল্যবোধ, বিবেক এই শব্দগুলো আমাদের মগজ আর অন্তর থেকে রাবার দিয়ে ঘষে ঘষে মুছে দিচ্ছে সরকার আর রাষ্ট্রযন্ত্র। আমাদের মধ্যে যদিও বা যারা ন্যায়ের কথা বলি, তাদের মধ্যে অনেকেই মহাকালের অতল তলে তলিয়ে গেছেন, কেউ কেউ হয়ে গেছেন ইতিহাস, আর কেউ গুনছেন মৃত্যুর দিন।
গত বছর হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর সকল ঘটনা, খবর আর ডি কে হং এর করা ভিডিও দেখার পর, এই হাসনাত করিমকে নিয়ে অনলাইনে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করার পর, জানতে পারি এই লোক আগেও জঙ্গি তৎপরতার সাথে যুক্ত ছিলো। শুধু তাই নয়, এই লোকের ফেইস বুক এর প্রোফাইল ঘেঁটে, অনলাইনের খবর পড়ে , এই লোকের বিরুদ্ধে অনেক অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্যও খুঁজে পাই। এসকল বিষয় নিয়ে তখন প্রচুর লেখালেখিও করি। কারন ঢাকার গুলশানের জঙ্গি হামলায় প্রথম থেকে টাকলা হাসনাতের প্রতি সন্দেহ জোরদার হয়। বিস্তারিত এই লিঙ্ক এ পাবেন,
আমার সেই লেখায় হাসনাতের পুলিশের কাছে দেয়া স্টেটমেন্টে অনেক গুলো অসংগতি ধরা পড়েছিলো। আমি নিঃসন্দেহে জানতাম এই হাসনাতই হামলার সাথে জড়িত আছে, এবং এই লোক কে ঠিক ভাবে জেরা করলে আসল সত্য বের হয়ে আসবে। আমার হাসনাতকে নিয়ে লেখার কারনে হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে অনেক অজ্ঞাত মানুষ। আমাকে মেরে ফেলার কথাও বলেছে। কারন সত্যটা সকলের সামনে তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি। শুধু হাসনাত নয়, ফারাজকে নিয়েও লিখেছি, তাহমিদকে নিয়েও লিখেছি। প্রচুর প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছি। কিন্তু সত্য কি আসলে চাপা থেকেছে শেষ পর্যন্ত?
যে সত্যকে ১ বছর আগে আঁচ করেছিলাম, আজকে সেই সত্যকে বাংলাদেশের তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, ১ বছর পর অফিসিয়ালি সকলের সামনে তুলে ধরেছেন। এই হাসনাত করিমই হলি আর্টিজান হামলার হামলার মূল দিন, ক্ষণ, তারিখ ফিক্স করে। সেই পরিকল্পনা মতো জঙ্গিরা সেই ভয়াবহ জঙ্গি হামলা চালায় হলি আর্টিজান বেকারিতে। গলা কেটে হত্যা করে অসহায় নিরাপরাধ মানুষগুলোকে।
হাসনাত খুব চতুরতার সাথে তার পুরো পরিবারকে এই জঙ্গি হামলার সাথে যুক্ত করে। দিন ক্ষণ, ঠিক করেছিলো ১ জুলাই। হামলার দিন হিসেবে নিজের মেয়ের জন্মদিনকে অত্যন্ত চালাকির সাথে ব্যবহার করেছে এখানে। শুধু তাই নয়, পুরো ঘটনাকে মনিটর করবার জন্য আগে থেকেই জন্মদিনের দিন সেখানে ২ টো টেবিলও সে বুকিং দিয়ে রাখে। কত বড় ধুরন্দর মানুষ এই হাসনাত। শুধু তাই নয়, নিজেকে সকল সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য নিজের স্ত্রী এবং তার ২ সন্তানকে নিয়ে রাত ৮ টার দিকে হাজির হয়েছিলো এই টাকলা হাসনাত। ঠিক এসকল বিষয় গুলো নিয়েই এই হাসনাতকে নিয়ে ১ বছর আগেই লিখেছিলাম। ঠিক এরকম প্রশ্নই করেছিলাম যখন মিডিয়া এবং পুলিশের কাছে হাসনাতের স্ত্রীর দেয়া স্টেটমেন্টটা পরি, ঠিক এই বিষয় গুলোই খটকা লেগেছিল তখন।
চাঞ্চল্যকর বিষয় এই যে, এই হাসনাত নাকি এই জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী ছাড়া আর কাউকেই নাকি চিনত না। কিন্তু আমার যতদুর মনে হয়, সে হামলাকারী জঙ্গিদের সকলকেই চিনত। এদের মধ্যে জঙ্গি হামলাকারী নিবরাস তো নর্থ সাউথেই পড়ত একসময়। আর হাসনাত তো নর্থ সাউথেরই শিক্ষক ছিলেন একসময়। কিন্তু নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে ২০১২ সালে তাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য করে নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয় হামলার দিন সকালে দুই জঙ্গিকে সাথে নিয়ে শলাপরামর্শও করতে দেখা গেছে এই হাসনাতকে। দুই জঙ্গির একজন হলো তাহমিদ, যাকে মুক্ত করার জন্য বাংলাদেশের সো কল্ড রিচ সোসাইটি ফেইসবুকে তাহমিদ মুক্তির ক্যাম্পেইন ওপেন করে তাহমিদ কে নির্দোষ প্রমাণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু জঙ্গি রোহান ইমতিয়াজ আর হাসনাতের সাথে ছাদে শলাপরামর্শের ছবি প্রকাশের পর সেখানে তাহমিদের অস্র ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ভঙ্গিমা দেখে কোনভাবেই কি আপনাদের মনে হয়েছিলো যে তাকে জোর করে এসকল জঙ্গিকর্মকাণ্ড করতে বাধ্য করা হয়েছিলো? আমাদের এই জাতি কি এতই ভোদাই মার্কা একটা জাতি?
তদন্ত তথ্যে আরও জানতে পারলাম যে, হলি আর্টিজানে হামলার রাতে হাসনাতের দায়িত্ব ছিল দেশী-বিদেশী নাগরিকদের জিম্মি করে হত্যার ভিডিওচিত্র ধারণ ও মোবাইলের বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে সেটি দেশের বাইরে পাঠানো। যে অ্যাপ ব্যবহার করে সেই নিরাপরাধ মানুষগুলোর বীভৎস গলাকাটা ছবিগুলো বাইরে পাঠানো হয় সেটার নাম থ্রিমা অ্যাপ। সাইট ইনটালিজেন্ট এর কর্মরত রিটা ক্যাটয এই বীভৎস, ভয়াবহ ছবিগুলোকে সর্বপ্রথম টুইট করে।
হাসনাতের এই জঙ্গি হামলার সাথে যুক্ত থাকার ব্যাপারে আগে ভাগেই বুঝেছিলাম যে এই লোকই মূল হোতা ছিল। হামলার নীল নকশা এই হাসনাতেরই আঁকা। সেটা জানতে / বুঝতে আমার ১ বছর লাগেনি। আমাদের প্রশাসনযন্ত্র ১ বছর সময় নিলেন সত্যকে আমাদের কাছে প্রকাশ করতে। ১ বছর অনেক লম্বা সময়। প্রশাসন যন্ত্র চাইলে আরও অনেক আগেই সত্যকে প্রকাশ করতে পারতেন, কিন্তু প্রকাশ করেননি। এর পিছনের কারন আপনার বা আমার নিশ্চয়ই অজানা থাকার কারন নয়। এই সকল অবৈধ লেনদেনের কারবার বর্তমানে এত ভয়াবহ আকারে বেড়েছে যে, বাংলাদেশকে কোনোভাবেই আর নিরাপদ মনে হয় না। আমরা কবে শিখবো দায়িত্ব বোধের এই হিসাব নিকাশ? আজকে হয়ত অন্যের পরিবারের জিম্মি থাকা অসহায় মানুষগুলো জঙ্গি হামলার শিকার হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন, কিন্তু কালকে যদি আমি বা আপনি এই বীভৎস জঙ্গি হামলার শিকার হই, খুব কি আশ্চর্য হবেন?