আওয়ামী সন্ত্রাসীরা দেশটাকে লুটে চলেছে প্রতিনিয়ত

আওয়ামী সন্ত্রাসী ও লুটারেদের মাধ্যমে দেশে কি চলছে সেটা সকলেই জানে। নতুন করে আর কি বলব?সাম্প্রতিক সময়ে আশুগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে হয়েছে হরিলুটের মচ্ছব। কিন্তু ভেতরে রাঘব বোয়ালেরা কে কে রয়েছে সেটি বেরিয়ে আসছে না এখনও।

আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) ৪৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে স্পেনের দুটি কম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের দুই কর্মকর্তা ৬৪ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। তাঁরা হলেন অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ার হোসেন ও এপিএসসিএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী নূরুল আলম। ঘুষের টাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় কেনা হয়েছে দুটি বাড়ি, একটি ফ্ল্যাট ও দামি গাড়ি। গড়ে তোলা হয়েছে দুটি কম্পানি।

ঘুষের টাকা স্পেন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিতে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী সাইফুল ইসলাম নামের ওই প্রবাসীকে দেওয়ার কথা ছিল মোট টাকার ৫ শতাংশ (প্রায় তিন কোটি ২০ লাখ টাকা)। তবে যুক্তরাষ্ট্রে টাকা নেওয়ার পর তাঁকে কোনো অর্থ দেওয়া হয়নি। তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ চলছে।

আমার তদন্তের মাধ্যমে জানতে পারি যে, বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিষ্ঠান এপিএসসিএল ২০১২ সালের জুলাইয়ে ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরপত্র আহ্বান করে। যৌথভাবে তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকার কাজটি পায় স্পেনের দুই কম্পানি টেকনিকাস রিইউনিডাস ও টিএসকে ইলেকট্রনিক। স্পেনের এই দুই কম্পানিকে যৌথভাবে কাজ দেওয়ার জন্য অনিয়মের আশ্রয় নেন বিদ্যুৎ বিভাগের তৎকালীন যুগ্ম সচিব ও এপিএসসিএলের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও এপিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী নূরুল আলম। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে টেকনিকাস রিইউনিডাস ও টিএসকের কাছ থেকে তাঁরা পেয়েছেন ৮০ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় ৬৪ কোটি টাকা)। আইনি জটিলতা এড়াতে সেই টাকা তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরই অংশ হিসেবে প্রবাসী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাওয়া দুই স্প্যানিশ কম্পানি ২০১৪ সালের মার্চে ঘুষের অর্থ স্পেনের মাদ্রিদ থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকো শহরের ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকে পাঠানো শুরু করে। ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৮ ডলারের প্রথম চালানটি সেখানে পৌঁছে ওই বছরের ১০ মার্চ। সানফ্রান্সিসকোতে ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকের লাদেরা ল্যাঞ্চ শাখায় এপিএসসিএলের তৎকালীন এমডি নূরুল আলমের ছেলে মাহফুজ আলমের অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পাঠানো হয়। মাহফুজ আলম সে সময় সেখানে পড়াশোনা করতেন। তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ৫২৮৩৩১৬৬৮৪, যার সুইফট কোড নম্বর ছিল ডঋইওটঝ৬ঝ। এ অ্যাকাউন্টে প্রায় ২০ লাখ ডলারের প্রথম চালানটি পাঠানো হয়েছে স্পেনের ভিলাও ভিজকা ব্যাংকের মাধ্যমে। লেনদেনের চেক নম্বরটি যুক্তরাষ্ট্র ব্যাংক চেক রাউটিং নম্বর হিসেবে পরিচিত, এর নম্বর ছিল ১২১০০০২৪৮।

চালানটি আসে মাদ্রিদের ১৩-এরাপ্লিস, ২৮০১৫-এ ঠিকানা থেকে। ঠিকানাটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পাওয়া স্পেনের প্রতিষ্ঠান টেকনিকাস রিইউনিডাসের প্রধান দপ্তরের। টিএসকের প্রধান দপ্তরও স্পেনের মাদ্রিদে। ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকে মাহফুজ আলমের আরেকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ঘুষ নেওয়া দুই কর্মকর্তার পক্ষে মাহফুজ আলম স্পেন ও বাংলাদেশ থেকে ৮০ লাখ ডলার যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর অ্যাকাউন্টে নেওয়ার জন্য ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ওই চুক্তি করেন। টাকা আনতে পারলে মোট অর্থের ৫ শতাংশ তাঁকে কমিশন হিসেবে দেওয়ার চুক্তি হয়। তবে স্পেন থেকে অর্থের প্রথম চালানটি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর থেকেই সাইফুলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন মাহফুজ। এরপর সাইফুল অর্থ চেয়ে বারবার যোগাযোগ করেও মাহফুজের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে পাওনা প্রায় তিন কোটি ২০ লাখ টাকা চেয়ে গত বছরের ২৭ মে সাইফুল উকিল নোটিশ দিয়েছেন মাহফুজ আলম ও তাঁর বাবা নূরুল আলমকে। সেই নোটিশেরও কোনো জবাব আসেনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘুষের টাকা লেনদেন করতে মাহফুজকে প্রধান করে ক্যালিফোর্নিয়ায় এমজেডএ নামে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খোলা হয়। প্রতিষ্ঠানটিকে স্পেনের দুই কম্পানি আশুগঞ্জের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেখিয়ে অর্থ পাঠিয়েছে। স্পেনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আদালত থেকে ঘুষ লেনদেনের অপরাধ থেকে রেহাই পেতে টেকনিকাস রিইউনিডাস ও টিএসকে এই কৌশল নেয়। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ‘নূরুল আলম যেহেতু এপিএসসিএলের এমডি, সে কারণে তাঁর প্রতিষ্ঠানের কোনো উন্নয়নকাজের পরামর্শক তাঁর ছেলের হওয়ার সুযোগ নেই। এটি বেআইনি।’

এটি নিয়ে এখন তদন্ত কার্যক্রম খুবই স্থবির। কথাও বলছেন না কেউ। তদন্ত কমিটির কার্যক্রমে স্থবিরতার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য এনার্জি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আহমেদ কায়কাউস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রধান আরাস্তু খান অবসরে যাওয়ায় কিছু সমস্যা হয়েছে। নূরুল আলম পলাতক থাকায় তাঁকেও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে পুলিশের কাছে বিষয়টি জানানোর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, পুলিশের বিশেষ শাখা খতিয়ে দেখছে নূরুল আলম দেশে আছেন না দেশের বাইরে।’

You may also like...

Read previous post:
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসায় বেহাল দশা

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ-অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। অনেক রোগী অভিযোগ করেছেন, জ্বর, সর্দি-কাশির মতো...

Close