সব সরকারের আমলেই বিগত সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এ যেন এক অঘোষিত নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে চলা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করা হয় ২০১৮ সালে। এ মামলার প্রধান আসামি ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
সাবেক কোনো প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিচারের রায় বাংলাদেশে এটিই প্রথম। এ মামলায় হাজিরা দেয়ার বিষয়ে খালেদা জিয়া প্রায় ১৫০ বারের মতো সময় চেয়েছেন। আর মামলাটি খারিজ করার বিষয়ে বার বার আবেদন করা হয়েছে উচ্চ আদালতে হয়েছে বিচারক পরিবর্তনও। তারপরও চলে বিচারকাজ।এরপর ২৩৬ কার্য দিবসে ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ, ২৮ কার্য দিবস আত্মপক্ষ সমর্থন ও ১৬ কার্যদিবস যুক্তি তর্কের শুনানি শেষে রায়ের দিন ধার্য করে আদালত।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা চলার এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার ওই আবেদন উচ্চ আদালত মঞ্জুর করেননি। খালেদা জিয়াই বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা প্রথম কোনো ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় হয়। একই সঙ্গে এ মামলায় অন্য পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। এরপর বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল এবং ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।
এ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৯১ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ নামে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়। যার চলতি হিসাব নং ৫৪১৬। ওই অ্যাকাউন্টে ১৯৯১ সালের ৯ জুনে এক সৌদি দাতার পাঠানো ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ডলার যার মূল্য তৎকালীন বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে বাংলাদেশি টাকায় ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা অনুদান হিসেবে জমা হয়।
মূলত এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন -দুদক।
দীর্ঘ ১০ বছর ধরে পুরান ঢাকার বকশিবাজারের বিশেষ জজ আদালতে চলা এ মামলাটিতে আদালতে হাজিরা নিয়ে খালেদা জিয়া যেহেতু প্রায় দেড়শ বারের মতো সময় নিয়েছেন। এজন্য কয়েকবার তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। মামলাটি বাতিল করে দেয়ার জন্য তার আইনজীবীরা আবেদনের পর আবেদন করেছে উচ্চ আদালতে। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
খুব আশ্চর্যজনক বিষয় হলো যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা করা হয়েছে বাস্তবে সেটির সঠিক কোনো ঠিকানাই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই মামলায় বর্তমানে খালেদা জিয়া ছয় মাসের জন্য শর্ত সাপেক্ষে জামিনে রয়েছেন।