চলতি বছরে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) শহীদ ইসলাম ওরফে কাজী পাপুলের বিরুদ্ধে ভিসার ব্যবসা ও যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচারের অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগ করে কুয়েতি গণমাধ্যমগুলো। কুয়েতে মানব পাচার, মানি লন্ডারিং এবং বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে লক্ষ্মীপুরের সাংসদ মো. শহিদ ইসলাম ওরফে কাজী পাপুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দেশটির প্রসিকিউশন। এতে উঠে এসেছে, এসব অপরাধে পাপুলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কুয়েতের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির দুজন বর্তমান এবং একজন সাবেক ডেপুটি (সাংসদ)।
ক্লিনিং এবং সিকিউরিটির কাজের নামে তিনি মানব পাচার করে থাকেন। পাপুল যে শুধু অবৈধ পথে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত তা নয়, তিনি যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন সব জায়গাতেই নিজের তথ্য গোপন রেখে ব্যবসা করেন।
গত ৭ জুন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ পাপুলকে গ্রেফতার করে কুয়েতের ক্রিমিন্যাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। অভিযোগ রয়েছে, ব্যবসা পরিচালনার স্বার্থে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়াবলী সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উৎকোচ দিয়েছেন পাপুল।
ইতোমধ্যে ১১ জনের স্বাক্ষ্য নিয়েছে কুয়েতের প্রসিকিউশন। তারা জানিয়েছে, কুয়েতে ফিরে আসার জন্য ৩ হাজার দিরহাম পর্যন্ত দিতে হয়েছে এবং দেশটির রেসিডেন্স ভিসা নবায়নের জন্য প্রতি বছর গুণতে হয়েছে অর্থ।
তল্লাশি অভিযানে পাপুলের একাধিক চেকবই জব্দ করেছে পুলিশ এবং প্রমাণ পেয়েছে বিপুল অঙ্কের কুয়েত, বাংলাদেশ ও কানাডায় সন্দেহজনক অর্থ লেনদেনের।
জানা যায়, কুয়েতের আল কাবাস ও কুয়েত টাইমস পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে মানব পাচার ও ভিসা-বাণিজ্যের একটি চক্রের বাংলাদেশি সংসদ সদস্য কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুলের জড়িত থাকার কথা বলা হয়। দুই দেশের একাধিক দৈনিক পত্রিকায় কুয়েতি পত্রিকার বরাত দিয়ে পাপুলের কুয়েতের মানব পাচারের খবরটি প্রচারিত হয়। এসব খবরে বলা হয়, মানব পাচারের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই এমপি।
লক্ষ্মীপুরের স্থানীরা মনে করছেন, মানব পাচার করে কুয়েতের শ্রম বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন এই এমপি। জানা গেছে, পাপুলের কোম্পানির মাধ্যমে শ্রমিকদের কাছ থেকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা করে নিয়ে তাদের কুয়েতে পাঠানো হয়েছে।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান পাপুল। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট হয়ে নির্বাচনে জয় লাভ করেন পাপুল। এর কিছুদিন পর তার সহধর্মিণী সেলিনা ইসলাম স্বতন্ত্র কোটায় মহিলা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে সপ্তাহখানেক আগে কুয়েতে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু স্বীকার না করলেও দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ রিমাণ্ডে নিয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি মানব পাচারের কথা স্বীকার করে নেন। কুয়েতের প্রভাবশালী ইংরেজী দৈনিক আরব টাইমস এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ইতোমধ্যে দেশেও এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। অর্থ পাচার, হুন্ডি ব্যবসা, মানব পাচার, অবৈধ ভিসা ট্রেডিংসহ নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। প্রতারণার প্রাথমিক প্রমাণ হিসেবে বেশ কিছু কাগজপত্র হাতে এসেছে এই সংস্থাটির। সেসব যাচাই-বাচাইয়ের পর বিস্তারিত জানাবে দুদক।